কর্ণফুলীতে স্ত্রীকে গলা কেটে হত্যা ও পরবর্তীতে স্বামীর আত্মহত্যার চেষ্টার ঘটনায় নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সুস্থ হওয়ার পর পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বামী ইব্রাহীম (২০) দাবি করেন, স্ত্রী শারীরিক সম্পর্ক করতে রাজি না হওয়ায় তিনি তাকে গলা কেটে হত্যা করেছেন। তবে নিহত স্ত্রী রেশমা আক্তার রুমার (১৮) মা বিবি কুলসুম এই দাবিকে উড়িয়ে দিয়ে ভিন্ন কথা বলছেন।
বিবি কুলসুম জানান, রুমা ও ইব্রাহীমের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। তারা পালিয়ে বিয়ে করেছিলেন। বিয়ের মাত্র আট মাস পর থেকেই ইব্রাহীম রুমাকে মারধর শুরু করেন। দম্পতির আট মাস বয়সী একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। ঘটনার দুই দিন আগেও রুমা তার মাকে ফোন করে জানান, তাদের শিশু কন্যা খুব অসুস্থ, কিন্তু ইব্রাহীম চিকিৎসার ব্যবস্থা করছেন না। রুমাকে ধার করে টাকা নিয়ে ওষুধ কিনে শিশুর চিকিৎসা করতে হয়েছে।
বিবি কুলসুম বলেন, নোয়াখালীতে ঘরজামাই থাকাকালীন ইব্রাহীম রুমাকে মারধর করতেন। গত বছর রমজান মাসজুড়ে তিনি রুমাকে নিয়ে ঢাকায় গিয়ে ভিক্ষা করিয়েছেন। ঢাকা থেকে কর্ণফুলীতে আসার পর ইব্রাহীম রুমাকে গার্মেন্টসে চাকরি করতে বাধ্য করেন এবং না করলে তাকে রাখবেন না বলে হুমকি দেন। রুমা ছোট শিশুকে নিয়ে কীভাবে চাকরি করবেন, তা নিয়ে আপত্তি জানালে ইব্রাহীম ক্ষিপ্ত হন। এর অল্প সময় পরই এ হত্যাকাণ্ড ঘটে। বিবি কুলসুম দ্রুত বিচার দাবি করেছেন।
উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কর্ণফুলীর চরপাথরঘাটা ইছানগর ডায়মন্ড এলাকার নুর হোসেনের ভাড়াবাসায় ইব্রাহীম একটি বটি দিয়ে রুমাকে জবাই করে হত্যার পর নিজে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। রুমার ফুফু পেয়ারা বেগম বাসায় ফিরে দরজা ভেতর থেকে বন্ধ পেয়ে টিনের চাল ভেঙে ভেতরে ঢুকেই এ মর্মান্তিক দৃশ্য দেখতে পান।
কর্ণফুলী থানার অপারেশন অফিসার মো. মিজানুর রহমান নিহতের মা কর্তৃক মামলা দায়েরের অপেক্ষায় থাকার কথা নিশ্চিত করেছেন। পুলিশ ইব্রাহীমের স্বীকারোক্তির পাশাপাশি ঘটনার অন্যান্য দিকও তদন্ত করছে বলে জানিয়েছেন।
জানা গেছে, ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রেমের সম্পর্ক থেকে রুমা ও ইব্রাহীমের বিয়ে হয়। নিহত রুমার পৈতৃক বাড়ি নোয়াখালীর মাইজদী এলাকায় এবং ইব্রাহীমের বাড়ি সিলেটে। বিয়ের পর তারা ঢাকায় থাকতেন এবং সমপ্রতি কর্ণফুলীতে তার ফুফুর বাড়িতে বেড়াতে আসেন।