নগরীর বিভিন্ন খালে ত্রিশটির বেশি বাঁধই কাল হয়েছে। কর্ণফুলী নদীতে পানির স্তর নিচে থাকলেও খালগুলোতে উপচে পড়ছিল। বাঁধের কারনে পদে পদে বাধাগ্রস্ত হয়েছে পানি। বাঁধগুলো অপসারণ করা হলে নগরীর জলাবদ্ধতা এত ভয়াবহ হতো না বলেও বিশেষজ্ঞ সূত্রগুলো মন্তব্য করেছে। তবে এই বাঁধ পুরোপুরি অপসারণ করা হলে জলাবদ্ধতা নিরসনে গৃহিত সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পটি হুমকির মুখে পড়বে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, মাত্র ঘন্টা তিনেকের ৪৪ মি.লি বৃষ্টিতে গত রোববার ডুবে যায় নগরীর বিস্তৃত এলাকা। হাঁটু থেকে কোমর পানিতে ডুবে যায় নগরীর রাজপথ, অলিগলি। এই সময় কর্ণফুলী নদীতে কোন জোয়ার ছিলনা। খালের পানির স্তরের বহু নিচে ছিল নদীর পানি। প্রচুর পানি নদীতে যাওয়ার সুযোগ থাকলেও নগরীর বিভিন্ন খালে থাকা ত্রিশটির মতো বাঁধের কারনে পানি সরতে পারছিল না। এতে করে নগরীতে বৃষ্টির পানি উপচে পড়েছিল।
সূত্র বলেছে, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকার মেগা প্রকল্পের কাজ চলছে। এই প্রকল্পের আওতায় নগরীর খালগুলোর পাড়ে রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণের কাজ হচ্ছে। রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণের জন্য খালের বিভিন্ন অংশে বাঁধ দিয়ে খাল পাণি শূণ্য করে কাজ করা হচ্ছে। নির্মাণ কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় প্রতিটি খালেই একাধিক বাঁধ রয়েছে। অপরদিকে বেশ কয়েকটি খালের মুখে স্লুইচ গেট নির্মাণের কাজও চলছে। ওখানেও রয়েছে বাঁধ। এতে করে এসব বাঁধই কাল হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে যে, সোমবার যখন নগরী এবং খালগুলোতে পানি উপচে পড়ছিল তখন কর্ণফুলীর পানির লেয়ার ছিল খালের পানির বহু নিচে। বাঁধ না থাকলে খাল থেকে অনায়াসে পানি নদীতে গিয়ে পড়তো। এতে নগরীর অবস্থা এত শোচনীয় হতো না বলেও সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো মন্তব্য করে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, বিভিন্ন এলাকায় খালের বাঁধ কেটে দেয়া হয়েছে। কিন্তু প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রগুলো বলেছে যে, বাঁধ কাটা হয়েছে একথা ঠিক। তবে পঞ্চাশ ফুট বাঁধের মাঝখানে দুচার ফুট কেটে দেয়া হয়েছে। যা পানি নিষ্কাশনের জন্য পর্যাপ্ত নয়।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের শীর্ষ একজন কর্মকর্তা জানান, জলাবদ্ধতা প্রকল্পের বরাদ্দ কমিয়ে দেয়া হয়েছে। এতে করে কাজের গতি মন্থর হয়ে গেছে। বাঁধগুলো জলাবদ্ধতার জন্য দায়ী। আবার রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণের জন্য পুনরায় এই বাঁধ দিতে হবে। বাঁধ কেটে ফেলে নতুন করে আবারো বাঁধ দিতে প্রচুর ব্যয় বেড়ে যাবে। এতে বাঁধ পুরোপুরি অপসারণ করা হলে প্রকল্পটিই হুমকির মুখে পড়বে।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চিফ ইঞ্জিনিয়ার কাজী হাসান বিন শামস বলেছেন, জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প দ্রুত সম্পন্ন করা গেলে জলাবদ্ধতার অভিশাপ থেকে নিস্তার পাওয়া যাবে। কিন্তু প্রকল্পটি সম্পন্ন করতে সময় লাগছে। তিনি বলেন, প্রকল্পটি দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়েও বিষয়টি জানানো হয়েছে। আমরা জলাবদ্ধতার বিষয়টি নিরসনে কাজ করছি। কিছুটা সময় লাগলেও সুফল আসবে।
সিডিএ বোর্ড সদস্য স্থপতি আশিক ইমরান বলেন, বাঁধগুলো নগরবাসীর ভোগান্তির কারন হয়ে উঠেছে। দ্রুত এসব বাঁধ অপসারণ করা দরকার। তিনি বলেন, জলাবদ্ধতা প্রকল্পের বরাদ্দ কমিয়ে ফেলায় সংকট তৈরি হয়েছে। তিনি প্রকল্পের বরাদ্দ বাড়িয়ে দ্রুত কাজ শেষ করারও আহ্বান জানান।