কর্ণফুলীতে জ্বালানি বোঝাই জাহাজে বিস্ফোরণ, নিহত ২

সিগারেটের আগুন থেকে বিস্ফোরণের সূত্রপাত হতে পারে : নৌ বাণিজ্য অধিদপ্তর

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ৩০ এপ্রিল, ২০২১ at ৬:৫৭ পূর্বাহ্ণ

কর্ণফুলী নদীতে জ্বালানি বোঝাই ‘এমটি ইরাবতী’ জাহাজে বিস্ফোরণের ঘটনায় দুইজন নিহত ও তিনজন আহত হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে বন্দর জেটির বিপরীতে সুপার পেট্রোকেমিক্যাল লিমিটেডের ঘাটে এ দুর্ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। আহতদের মধ্যে দুইজন মুমূর্ষু অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। স্থানীয় কর্ণফুলী থানা পুলিশ, নৌ পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস বিস্ফোণের কারণ সম্পর্কে জানাতে পারেনি। তবে সমুদ্রগামী জাহাজের অভিভাবক প্রতিষ্ঠান নৌ বাণিজ্য অধিদপ্তর বলছে, সিগারেটের আগুন থেকে বিস্ফোরণের সূত্রপাত হতে পারে।
নিহতরা হলেন- জাহাজের টেন্ডল রুহল আমিন প্রকাশ আলমগীর (৪৫) এবং জাহাজের লস্কর মো. নেজাম উদ্দিন (৪০)। নিহত আলমগীর নোয়াখালী জেলার কবিরহাট থানাধীন নরসিংপুর গ্রামের মোস্তফা মিয়ার ছেলে। অন্যদিকে নিহত নেজাম ফেনী জেলার ছাগলনাইয়া থানাধীন দৌলতপুর গ্রামের মৃত আমির হোসেনের ছেলে। আহতরা হলেন- মো. শাহাবুদ্দিন (৫৫), আবু সুফিয়ান (৫০) ও মো. মনির (২৫)। তন্মধ্যে মো. শাহাবুদ্দিন (৫৫), আবু সুফিয়ানের (৫০) শরীর ৯৫ শতাংশ পুড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন চমেক হাসপাতালের চিকিৎসকরা। উন্নত চিকিৎসার জন্য রাতে তাদের দুজনকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে বলে জানান চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির এ এসআই শীলাব্রত বড়ুয়া।
জানা যায়, সুপার পেট্রোক্যামিক্যাল লিমিটেডে পরিশোধিত জ্বালানি তৈরির কাঁচামাল হিসেবে প্রাকৃতিক গ্যাসের উপজাত পণ্য কনডেনসেট ব্যবহার করে থাকে। ঈগল রিভার ট্রান্সপোর্ট লিমিটেডের মালিকানাধীন ‘এমটি ইরাবতী’ জাহাজটি বুধবার রাতে ব্রাক্ষণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ গ্যাস ফিল্ড থেকে প্রতিষ্ঠানটির জন্য কনডেনসেট নিয়ে চট্টগ্রামে আসে। সকাল সাড়ে ৬টার দিকে জাহাজটির ইঞ্জিন রুমে বিকট শব্দে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে আগুন ধরে যায়। এসময় ইঞ্জিন রুমে অবস্থান করা টেন্ডল আলমগীর ও লস্কর নেজাম ঘটনাস্থলে প্রাণ হারান। আগুনে পুড়ে যান শাহাবুদ্দিন ও সুফিয়ান। পরে আগুন নেভাতে গিয়ে মনির নামের একজন সামান্য আহত হন। বিস্ফোরণে জাহাজের মধ্যকার ইঞ্জিন কক্ষ উড়ে যায়।
পরে খবর পেয়ে আগ্রাবাদ ফায়ার সার্ভিসের একটি টিম দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এর আগে বন্দরের টাগবোট ‘কাণ্ডারি’ থেকেও আগুন নেভাতে জাহাজটিতে পানি ছিটানো হয়। আগুন লাগার খবরে কর্ণফুলী থানা, সদরঘাট নৌ থানা, সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জাহাজটি পরিদর্শন করেছেন।
জাহাজের মাস্টার আবদুর রহমান বলেন, ঘটনার সময় আমরা ঘুমিয়ে ছিলাম। যারা ডিউটিতে ছিলেন তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। সকাল ৬টা থেকে সাড়ে ৬টার মধ্যে হঠাৎ বিকট শব্দে আমাদের ঘুম ভেঙে যায়। বেরিয়ে দেখি আগুন আর আগুন। এরপর বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত চারজনকে আমরা উদ্ধার করি। তন্মধ্যে দুইজন প্রাণ হারান। দুইজনকে মুমূর্ষু অবস্থায় আমরা তাদের হাসপাতালে পাঠাই।
আগ্রাবাদ ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক নিউটন দাশ দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘আমরা খবর পেয়ে ৭টার দিকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিভাই। যেহেতু জাহাজটিতে জ্বালানি তেল ছিল। সেজন্য আগুন নেভাতে কেমিক্যাল ফোম ব্যবহার করা হয়েছে। তবে জাহাজের লোকজনের সাথে কথা বলে জেনেছি ইঞ্জিন বিস্ফোরণের কারণে আগুন লেগেছে। তারপরেও আমরা আগুন লাগার কারণটি তদন্তসাপেক্ষে নির্ধারণ করবো।’
এদিকে দুর্ঘটনার শিকার জাহাজ থেকে ঘটনাস্থলে প্রাণ হারানো দুই শ্রমিকের লাশ উদ্ধার করে তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে নৌ পুলিশ। সদরঘাট নৌ-পুলিশের ওসি এবিএম মিজানুর রহমান ঘটনাস্থলে দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘জাহাজে বিস্ফোরণ ও আগুনের ঘটনায় দুইজন শ্রমিক নিহত হয়েছেন। গুরুতর আহত দুইজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এ ঘটনায় জাহাজ মালিকের পক্ষ থেকে কর্ণফুলী থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হয়েছে। আমরা লাশ উদ্ধার করে তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছি।’
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের প্রধান ডা. রফিক আহমেদ বলেন, শাহাবুদ্দিন ও সুফিয়ানের শরীরের ৯৫ শতাংশ পুড়ে গেছে। আগুনে তাদের শ্বাসনালীও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মনিরের অবস্থা তেমন গুরুতর নয়, তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
জাহাজটিতে বিস্ফোরণের বিষয়ে দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে চট্টগ্রাম নৌ বাণিজ্য অধিদপ্তর। নৌ বাণিজ্য দপ্তরের প্রিন্সিপাল অফিসার ক্যাপ্টেন গিয়াস উদ্দিন আহমেদ দৈনিক আজাদীকে বলেন, আমরা এমটি ইরাবতী জাহাজে আগুন লাগার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়েছি। পাশাপাশি একজন ক্যাপ্টেন ও একজন ইঞ্জিনিয়ারকে দিয়ে দুই সদস্যের কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। তাদের প্রতিবেদন পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, ‘আমরা প্রাথমিকভাবে জেনেছি জাহাজটিতে কনডেনসেট পরিবহন করা হয়। এসব কনডেনসেট গ্যাসের বাই প্রোডাক্ট। এগুলো উচ্চমাত্রার গ্যাসীয় পদার্থ। জাহাজটিতে হেজের দরজা খোলা ছিল। এতে ইঞ্জিন রুমে গ্যাস পরিবাহিত হয়েছে। এসময় সকালে শ্রমিকরা ইঞ্জিন রুমে ধূমপান করছিলেন। এসময় সিগারেটের আগুন থেকে আগুন লেগে বিস্ফোরণ হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।’

পূর্ববর্তী নিবন্ধরোগীরা কেন দুর্ভোগে
পরবর্তী নিবন্ধসিনোফার্মের টিকা সম্পর্কে জানার আছে যা যা