করোনায় পেশা বদলেও চলছে না জীবনের চাকা

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ৮ জুলাই, ২০২১ at ৪:৪০ পূর্বাহ্ণ

বছর দেড়েক আগেও কৃষি কাজে যুক্ত ছিলেন জিতেন্দ্র (৪০)। কিন্তু করোনা মহামারী তাকে এমন অবস্থায় ঠেলে দিয়েছে, বাধ্য হয়ে পেশা বদলেছেন তিনি। সম্প্রতি নগরীর চকবাজার ওয়ালি বেগ খাঁ মসজিদের মোড়ে জুতা সেলাই করতে দেখা যায় জিতেন্দ্রকে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদরের বাসিন্দা তিনি। পেশা পরিবর্তনের ব্যাপারে জানতে চাইলে বলেন, কৃষি কাজ করতাম। করোনা মহামারীর কারণে এলাকায় কাজ নেই। এখানে এসেও কোনো কাজ পাচ্ছিলাম না। তাই বাধ্য হয়ে জুতা সেলাইয়ের সরঞ্জাম জোগাড় করি। একপর্যায়ে এ জায়গাটাতে বসে পড়ি। ইনকাম তেমন একটা নেই। তবুও যা পাচ্ছি তা দিয়ে নিজে চলছি। বাড়িতে মা-বাবার কাছে পাঠাচ্ছি।
মা-বাবা ছাড়াও স্ত্রী-সন্তান রয়েছে তার। তিন বোনের মধ্যে একজন স্বামীহারা। তাদের সাথে থাকেন। আর একমাত্র ভাই এলাকায় দর্জির দোকানে কাজ করেন। সংসার সামাল দিতে কষ্ট হয় তার। তাই দেশজুড়ে কঠোর লকডাউন চললেও বসে থাকার উপায় নেই। রাস্তার ধারে বসে জুতা সেলাই করে চলেছেন তিনি। জিতেন্দ্র বলেন, আমি দেওয়ানবাজার এলাকার একটি মেসে থাকি। দুপুরের দিকে এখানে আসি। সন্ধ্যার পর বাসায় চলে যাই। স্বাস্থ্যবিধি মেনেই আসা-যাওয়া করি। কাজ করার সময়ও মাস্ক ব্যবহার করি।
এদিকে করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পেশা বদলের এ চিত্র শুধু জিতেন্দ্রর বেলায় নয়, আরো অনেকের ক্ষেত্রে দেখা গেছে। নগরীর চকবাজার, কোতোয়ালী, বাকলিয়া, চান্দগাঁওসহ বেশ কিছু এলাকায় এমন অনেক মানুষ রয়েছেন। তেমনই একজন রবি চৌধুরী।
নগরীর একটি কমিউনিটি সেন্টারে বয়ের কাজ করতেন তিনি। জানতে চাইলে বলেন, বয়ের কাজ খুবই কষ্টের। টেবিল পরিস্কার করা, পানি এনে দেওয়া, খাবার পরিবশেন করা। এমনকি টেবিলের পাশে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। লোকলজ্জার বিষয় তো ছিলই। এরপরও পেটের দায়ে কাজ করছিলাম। কিন্তু করোনা আসার পর থেকে বিয়ের অনুষ্ঠানই বন্ধ।
রবি বলেন, কিছুদিন পর সবকিছু স্বাভাবিক হবে এমন দিনের অপেক্ষা করছিলাম। কিন্তু করোনা দিনদিন বাড়ছেই। কমিউনিটি সেন্টার খোলারও কোনো সম্ভাবনা নেই। এভাবে কতদিন বসে থাকা যায়? পরিবার রয়েছে, তাদের তো খাওয়াতে হবে। তাই বাধ্য হয়ে পেশা বদলেছেন তিনি। রাস্তায় নেমে পড়েছেন রিকশা নিয়ে। চান্দগাঁওয়ের রাহাত্তারপুল এলাকায় এসব কথা জানান রবি।
উল্লেখ্য, গত বছরের ৩ এপ্রিল থেকে চট্টগ্রামে করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হয়। নগর ও উপজেলা মিলে ইতোমধ্যে সাতশ’র বেশি মানুষ মারা গেছেন করোনায়। আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৬২ হাজার।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবাংলাদেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা উন্নয়নশীল দেশের উদাহরণ : তথ্যমন্ত্রী
পরবর্তী নিবন্ধধসে পড়া পাহাড়ের মাটি কেটে নিচ্ছে দুষ্কৃতকারীরা