ধসে পড়া পাহাড়ের মাটি কেটে নিচ্ছে দুষ্কৃতকারীরা

বায়েজিদ-ফৌজদারহাট লিংক রোড

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ৮ জুলাই, ২০২১ at ৪:৪০ পূর্বাহ্ণ

বায়েজিদ ফৌজদারহাট লিংক রোডে ধসে পড়া পাহাড়ের মাটি কেটে নিচ্ছে দুষ্কৃতকারীরা। করোনা সংক্রমণে রোডে চলমান কঠোর লকডাউনে দিন দুপুরে পাহাড় কটার ঘটনা ঘটলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো নজর নেই।
সিডিএ বলছে, ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়গুলোকে ঝুঁকিমুক্ত করতে প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। কিন্তু পরিবেশ অধিদপ্তরের বাধার কারণে প্রকল্প এগিয়ে নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
মঙ্গলবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা গেছে, বায়েজিদ লিংক রোডের ঝুঁকিপূর্ণ ১৬টি পাহাড়ে ইতোমধ্যে ধস শুরু হয়েছে। কয়েকটি পাহাড়ের নিচে ধসে পড়া এসব মাটি কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ধসে পড়া মাটিগুলো সরে যাওয়ার কারণে নতুন করে আবারও ধসের শংকা তৈরি হয়েছে। তাছাড়া সড়কটির একটি অংশে রাস্তার মধ্যখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছে কাদা। সলিমপুর ছিন্নমূল এলাকায় প্রবেশের জন্য তৈরি করা নতুন সংযোগ সড়ক সংলগ্ন কালভার্টের লাগোয়া ওই অংশে দেয়াল নির্মাণ করে ভেতরে ভরাট করা হচ্ছে। রাতের আঁধারে গত কয়েকদিন ধরে ভরাট চলছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা। এদিকে বর্ষা শুরুর পর পাহাড় ধসের আশংকায় ঝুঁকিপূর্ণ এসব পাহাড়ে সাধারণ মানুষের চলাচল নিষিদ্ধ করে লাল পতাকা টাঙিয়ে দেয় সিডিএ। এক মাস আগে সড়কের কিছু অংশের একপাশ বন্ধও করে দেওয়া হয়। ওই বন্ধ থাকা অংশেই চলছে অবৈধ পাহাড় কাটার কাজ।
স্থানীয় লোকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ার পর থেকে কয়েকটি পাহাড়ে নতুন করে ধস তৈরি হয়েছে। ইতোমধ্যে গত ১ জুলাই থেকে কঠোর লকডাউন শুরুর পর থেকে সরকারি অফিস আদালত বন্ধ থাকার সুযোগে পাহাড়গুলোর ধসে পড়া মাটি নিয়ে পাশের পাহাড়ি অন্য অংশ ভরাট করছেন অবৈধ দখলদাররা।
জানা যায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকুণ্ডের ফৌজদারহাট টোল রোডের মুখ থেকে বায়েজিদ বোস্তামি পর্যন্ত সংযোগ সড়ক নির্মাণ করে সিডিএ। প্রকল্পের ৬ কি.মি. রাস্তা নির্মাণে কাটা হয় ১৬টি পাহাড়। একেবারে নতুন রাস্তাটি নির্মাণের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে আড়াই লাখ ঘনফুট পাহাড় কাটার অনুমোদন নেওয়া হলেও সিডিএ ১০ লাখ ৩০ হাজার ঘনফুট পাহাড় কাটে। অনুমোদনবিহীন পাহাড় কাটার অভিযোগে পরিবেশ অধিদপ্তর ১০ কোটি ৩৮ লাখ ২৯ হাজার ৫৫৩ টাকা জরিমানা করে সিডিএকে। পরবর্তীতে সিডিএ মন্ত্রণালয়ের দ্বারস্থ হলে পরিবেশের মামলাটি ঝুলে যায়। পরবর্তীতে ঝুঁকিপূর্ণ খাড়া পাহাড়গুলোকে ঝুঁকিমুক্ত করতে নতুন করে ৩ লাখ ৩২ হাজার ঘনমিটার পাহাড় কাটার জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরে আবেদন করে সিডিএ। প্রায় ১৫ মাস শেষ হলেও পরিবেশ অধিদপ্তর ও সিডিএ’র চিঠি চালাচালির মধ্যে দাঁড়িয়ে রয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ এসব পাহাড়।
এ ব্যাপারে সিডিএ’র প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘আমরা পাহাড় ধসের আশংকায় কিছু রাস্তার একপাশ বন্ধ করে দিয়েছি। লাল পতাকা টাঙিয়েছি। এখন নতুন করে ধস হচ্ছে পাহাড়গুলোতে। ধসে পড়া পাহাড়গুলোর কাছেও যাওয়া উচিত নয়। এখন এসব পাহাড়ের নিচে কাটা হলে ধসের ঝুঁকি আরও বেড়ে যাবে।’ তিনি বলেন, আমরা পরিবেশ অধিদপ্তরের বাধার কারণে পাহাড়গুলো ঝুঁকিমুক্ত করতে পারিনি। যারা (পরিবেশ অধিদপ্তর) আমাদের কাজে বাধা দিয়েছে তারা এখন পাহাড়গুলোর বিষয়ে তদারকি করছে না। তারপরেও সিডিএর পক্ষ থেকে আমরা বিষয়টি দেখবো। স্থানীয় পুলিশকেও বিষয়টি অবগত করা হবে।’
এ বিষয়ে বক্তব্য নিতে চাইলে পরিবেশ অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কেউ ফোন রিসিভ করেননি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকরোনায় পেশা বদলেও চলছে না জীবনের চাকা
পরবর্তী নিবন্ধকৌতুক কণিকা