করোনাভীতি জয় করে মানুষ ও অর্থনীতির অগ্রগতি আশাব্যঞ্জক

| শুক্রবার , ২৮ জানুয়ারি, ২০২২ at ৮:০৭ পূর্বাহ্ণ

করোনাভাইরাসের ওমিক্রন ধরনের কথা যখন শোনা যাচ্ছিল, তখন অনেকেই ভীত হয়ে পড়েছিল। প্রায় সবাই ধরে নিয়েছিল, আরেকটি ভাইরাসঝড় আসন্ন। আর সেই ঝড়ে অর্থনীতি আবারও সেই ২০২০ সালের অবস্থায় ফিরে যাবে। কিন্তু পত্রিকান্তরে প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, ওমিক্রনের আগমনের খবরে বৈশ্বিক শেয়ার সূচকের গড়ে ৫ শতাংশ পতন হয়। ডলার ও ইয়েনের মতো নিরাপদ মুদ্রা আরও শক্তিশালী হয় আর জ্বালানি তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ১০ ডলার পর্যন্ত কমে যায়। তবে স্বস্তির খবর হলো, অর্থনীতির বিশেষ ক্ষতি হয়নি। অন্তত যতটা ক্ষতির আশঙ্কা করা হয়েছিল, বাস্তবে ক্ষতি ততটা হয়নি। ১৮ জানুয়ারি জ্বালানি তেলের দাম সাত বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ৮৮ ডলারে উঠে যায়। এ মুহূর্তে বৈশ্বিক শেয়ারবাজারের অবস্থা বিশেষ ভালো নয়, অনেকটা নভেম্বরের শেষ সময়র মতো, কিন্তু তা মূলত বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃক নীতি সুদহার বৃদ্ধির কারণেকোভিড১৯এর কারণে নয়।

সাধারণ কিছু তথ্যউপাত্ত দিয়ে বিষয়টি বোঝার চেষ্টা করেছেন ধনী দেশগুলোর জোট ওইসিডির বিশ্লেষক নিকোলাস উলেসজকো। তিনি মূলত ৪৬টি মধ্যম ও উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশের মানুষের গুগল সার্চের তথ্য বিশ্লেষণ করেছেনগৃহায়ণ থেকে শুরু করে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তাএসব বিষয়ের তথ্য নিয়ে এ বিশ্লেষণ করেছেন তিনি। এ সূচকের তথ্য বিশ্লেষণ করে দ্য ইকোনমিস্ট বলছে, এই ৪৬টি দেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) আকার এখন প্রাক্‌মহামারি যুগের চেয়ে ২ দশমিক ৫ শতাংশ ছোট। নভেম্বর মাসের চেয়ে তা কিছুটা কম, তবে এক বছর আগের, অর্থাৎ ২০২১ সালের জানুয়ারির তুলনায় তা বেশ ভালো, তখন জিডিপি প্রাক্‌মহামারি সময়ের তুলনায় ৫ শতাংশ কম ছিল।

ধনী দেশগুলোর মধ্যে একমাত্র নেদারল্যান্ডস প্রকৃত অর্থে লকডাউন আরোপ করেছে, যদিও ১৪ জানুয়ারি তারা আংশিকভাবে তা তুলে নিয়েছে। আন্তর্জাতিক ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা অক্টোবরের পর সেই অর্থে বাড়েনি। ইকোনমিস্টের এই প্রতিবেদন প্রকাশের পরপরই ব্রিটেন জানিয়েছে, দুই ডোজ টিকা নেওয়ার সনদ থাকলে ভ্রমণকারীদের করোনা পরীক্ষা করানোরও প্রয়োজন নেই। থাইল্যান্ডও পর্যটক টানতে বিধিনিষেধ শিথিল করেছে।

সবচেয়ে বড় কথা হলো, মানুষ এখন ঝুঁকি নিতে আগ্রহী। বিষয়টি এখন অনেকটা এরকম হয়ে গেছে: ২০২০সংক্রমণ নিয়ে প্রচণ্ড ভীতি, ২০২১অল্প ভীতি, ২০২২স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। মানুষের এই অদম্য মনোভাবের কল্যাণে বিশ্ব অর্থনীতি দ্রুতই স্বাভাবিক হবে, বিশ্লেষকেরা এমনটাই ভাবছেন। কিছু মানুষের প্রাণ যাবে, কিন্তু মানুষ সেই ক্ষতি মেনে নিতে অনেকটাই প্রস্তুত।

আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের অগ্রগতি বিস্ময়কর। সম্প্রতি টরন্টোভিত্তিক আন্তর্জাতিক থিংক ট্যাংক দি ইন্টারন্যাশনাল ফোরাম ফর রাইটস অ্যান্ড সিকিউরিটি (আইএফআরএসএস) বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানের ওপর তুলনা করে একটি নিবন্ধ প্রকাশ করেছে। সেখানে বলা হয়েছে বাংলাদেশ একমাত্র দেশ, যার অর্থনীতি এ মহামারীতে পৃথিবীর যেকোনো দেশের চেয়ে ভালো করেছে। তুলনায় আরো বলা হয়, বাংলাদেশের অর্থনীতি গত ৫০ বছরে ২৭১ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। পাকিস্তান একসময় বাংলাদেশের চেয়ে ৭০ শতাংশ ধনী ছিল অথচ বাংলাদেশ এখন পাকিস্তানের চেয়ে ৪৫ শতাংশ বেশি ধনী। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, গত ২০২১ সালের মে মাসে পাকিস্তানি এক কলাম লেখক দ্য নিউজ পত্রিকায় ‘এইড ফ্রম বাংলাদেশ’ নামে একটি কলাম লেখেন। নিবন্ধে লেখক উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ যদি বর্তমান ধারা অব্যাহত রাখে এবং পাকিস্তান যদি তার অবস্থার উত্তরণ ঘটাতে না পারে তাহলে ২০৩০ সাল নাগাদ পাকিস্তানকে বাংলাদেশের সাহায্য নিতে হবে।

বিশ্ব ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ও ভারত সরকারের সাবেক প্রধান অর্থনৈতিক উপদেষ্টা কৌশিক বসু বাংলাদেশের ৫০ বছরের অর্জন নিয়ে বলেছেন, এরই মধ্যে দেশটি বিশ্ব অর্থনৈতিক উন্নয়নের একটি সমীক্ষায় (কেস স্টাডি) পরিণত হয়েছে, যা খুব কম অর্থনীতিবিদই অনুমান করেছিলেন।

মোট কথা, বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে। ১৯৭২৭৩ অর্থবছরে দেশের মাথাপিছু আয় ছিল ৮৮ মার্কিন ডলার। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে বর্তমানে দেশের মাথাপিছু আয় দুই হাজার ২২৭ মার্কিন ডলার। ২০১৯২০ অর্থবছরে মাথাপিছু আয় ছিল দুই হাজার ২৪ মার্কিন ডলার। এক বছরের ব্যবধানে তা বেড়েছে ১০ শতাংশ। মাথাপিছু আয়ে বাংলাদেশ পাশের দেশগুলোর চেয়ে এগিয়ে আছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আমাদের অর্থনীতি ২০৩০ সালের মধ্যে ট্রিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে। করোনাভীতি জয় করে যেভাবে এগোচ্ছে মানুষ ও অর্থনীতি, তাতে আশান্বিত না হয়ে পারা যায় না।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকৌতুক কণিকা
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে