বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের আতঙ্ক। কয়েক বছর যেতে না যেতেই আবার পাশ্ববর্তী দেশ ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কাসহ অন্যান্য দেশে নতুনরূপে এই ভাইরাস কোভিড অমিক্রন এর সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় দেশ–বিদেশের সবাই এই ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে চিন্তিত। দেশের ভেতর ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় নতুন করে সতর্কতা জারি করছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ঢাকার পর চট্টগ্রামেও নতুন করে বিভিন্ন জনের শরীরে করোনা ভাইরাস সনাক্ত হওয়ার কারণে ট্রেনে, বাসে ও জনবহুল এলাকায় মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে নিদের্শ দেয়া হয়েছে। বর্তমান সময়ে এই ভাইরাসটি অত্যন্ত ছোঁয়াচে রোগ, একজন থেকে অন্যজনের মধ্যে খুব দ্রুত যেমন ছড়িয়ে পড়তে পারে ঠিক তেমনি খুব দ্রুত বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন এবং নতুন গুণাবলী অর্জনের জন্য কুখ্যাত। তাই কোভিড অমিক্রন দ্রুত ছড়াতে পারে মরণঘাতী রোগ হয়ে। বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে সাধারণ উপসর্গ যেমন জ্বর বা কাশি ছাড়াই শরীরে সংক্রমণ ঘটা। এর পরিবর্তে দেখা দিচ্ছে অন্যরকম লক্ষণ– শরীরের বিভিন্ন স্থানের জয়েন্ট, পিঠে, গলায় ও মাথায় ব্যথা, হঠাৎ ক্ষুধামন্দা, ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া লক্ষণ। প্রথমে এই লক্ষণগুলি সাধারণত হলকা হয় এবং ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ে। এই ভাইরাস মানুষের মধ্যে সংক্রমিত হয় কিন্তু কোনো লক্ষণ দেখা যায় না এবং অসুস্থ বোধও করে না। খুব অল্প সময়ের মধ্যে লক্ষণগুলো অত্যন্ত তীব্র হয়ে উঠে এবং স্পষ্ট লক্ষণগুলির অনুপস্থিতিতেও পরিবর্তন ঘটায়। নতুন এই ভাইরাসটি অতীতের চেয়ে আলাদা ও মারাত্মক এবং সনাক্ত করাও সহজ নয়।
সুসংবাদ হচ্ছে এই প্রাণঘাতী করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট সংক্রমণ ছড়ালেও সুস্থ হওয়ার খবরও পাওয়া যাচ্ছে। এ কারণে এই ভ্যারিয়েন্টের পুরোপুরি লক্ষণ ও ধরণ আবিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত আতঙ্কিত না হয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা এবং অতীতের তিক্ত অভিজ্ঞতা আমলে নিয়ে বিষয়টি অবহেলা না করার উপর জোর দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
তারা করোনাকে ভয় নয় সচেতনতায় জয় উল্লেখ করে নতুন এই ভ্যারিয়েন্ট মোকাবিলায় আরও সচেতনতা, সূক্ষ্ম ও দায়িত্বশীল হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। সবমিলিয়ে আগের ভয়াবহতা অনেক অংশে কমলেও নতুন এই ভ্যারিয়েন্টের দ্রুত সংক্রমণ ও হালকা উপসর্গের কারণে ঝুঁকি এখনো রয়ে গেছে। তাই মনে রাখতে হবে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের কিছুটা ঊর্ধ্বগতি রোধে অবশ্যই আমাদেরকে সচেতনতার পাশাপাশি শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ প্রতিরোধে নিয়মিত মাস্ক পরা, জনসমাগম এড়িয়ে চলা, হাঁচি–কাশির সময় মুখ ঢেকে রাখা, ব্যবহৃত টিস্যু নিরাপদ ভাবে ফেলা, সাবান বা স্যানিটাইজারে হাত ধোয়া, অপরিষ্কার হাতে চোখ–নাক–মুখ স্পর্শ না করা এবং আক্রান্তদের কাছ থেকে কমপক্ষে তিন ফুট দূরত্বে থাকাসহ সকল স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলায় কেবল প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের ভয়কে জয় করা সম্ভব।