চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে স্থাপন করা স্যান্ডর ডায়ালাইসিস সেন্টারে ডায়ালাইসিস ফি বৃদ্ধির প্রতিবাদে গতকাল রোববার দ্বিতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ করেছে রোগী ও তাদের স্বজনরা। আগের দিন ডায়ালাইসিস সেন্টারের সামনে ও হাসপাতাল পরিচালকের কার্যালয়ে গিয়ে বিক্ষোভ দেখালেও গতকাল হাসপাতালের মূল ভবনের সামনের রাস্তায় (গোল চত্বরে) অবস্থান নেন তারা। এ সময় তাদের হাতে আগের বছরের ফি বহাল রাখার দাবি সম্বলিত ব্যানার দেখা যায়। সকাল থেকে অন্তত ৪ ঘণ্টা ধরে তারা সেখানে অবস্থান নেন।
বিক্ষোভে অংশ নেয়া রোগী–স্বজনরা কিডনি ডায়ালাইসিসে গত বছরের ফি ও সুবিধা বহাল রাখার দাবি জানান। দুপুর আড়াইটার দিকে চমেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান নিজ দপ্তর থেকে নেমে এসে আন্দোলনকারী রোগী ও স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি তাদের বুঝাতে চেষ্টা করেন। উল্লেখ্য, স্যান্ডরের ডায়ালাইসিস সেন্টারে হাসপাতালের রোগীদের (আর্থিক অবস্থা বিবেচনায়) কম টাকায় সেবা পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। বেসরকারিভাবে প্রতি ডায়ালাইসিস সেশনে গত বছর নিয়মিত ফি ছিল ২৭৯০ টাকা। সরকারি ভর্তুকি প্রদত্ত সুবিধায় সেশন প্রতি ৫১০ টাকায় সেবা গ্রহণের সুযোগ পেতেন গরিব ও অসহায় রোগীরা। এর বাইরে মুক্তিযোদ্ধা ও অতি দরিদ্র কিছু রোগী ফ্রিতে এ সুবিধা পেয়ে থাকেন। যদিও ফ্রি সেশনের সংখ্যা খুবই কম। সারা বছরে সাড়ে ছয়শ সেশন ফ্রি’র সুবিধা প্রদানের সুযোগ রয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের।
তবে সেশন প্রতি নির্ধারিত এই ফি বছরে ৫ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পায়। পিপিপির (পাবলিক–প্রাইভেট পার্টনারশিপ) আওতায় সরকার ও স্যান্ডরের করা চুক্তিতে ফি বৃদ্ধির বিষয়টি উল্লেখ করা আছে। সে হিসেবে ভর্তুকি প্রদত্ত সেশন ফি গত বছরের ৫১০ টাকার স্থলে এবার ৫৩৫ টাকায় দাঁড়িয়েছে। আর বেসরকারি ফি ২৭৯০ টাকার স্থলে দাঁড়িয়েছে ২৯৩০ টাকায়। রোগী ও স্বজনরা এই ফি বৃদ্ধির প্রতিবাদে বিক্ষোভ করছেন। একই সাথে তারা কম টাকার ফিতে বেশি সেশন চান। কিন্তু এক্ষেত্রে নিজেরা অসহায় বলছেন হাসপাতাল প্রশাসন।
ফি কমানোর এখতিয়ার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নেই জানিয়ে চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান বলেন, ফি বাড়ানোর বিষয়টি চুক্তিতেই উল্লেখ আছে। আর এ চুক্তি সরকারের সাথে ওই প্রতিষ্ঠানের। চুক্তি অনুযায়ী এ ফি প্রতি বছরই ৫ শতাংশ হারে বাড়ছে। শুধু যে এ বছর বাড়ল তা কিন্তু নয়। আর প্রতি বছর রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু আমাদের কম ফি’র সেশন নির্ধারিত। যার কারণে আগে কোনো রোগী মাসে ৪/৫টি সেশন কম ফি’র সুবিধায় পেতেন, এখন সে সুবিধাও আমাদের কমাতে হচ্ছে। কারণ একজনকে সুবিধা বেশি দিলে আরেকজন বঞ্চিত হচ্ছেন। কিন্তু আমাদের এখানে যারা সেবা নিতে আসেন, তাদের প্রায়ই সবাই কম খরচের সুবিধাটা বেশি চান। এ জায়গায় আমাদের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। বলতে গেলে আমরাও অসহায়। আমরা সবাইকে ওভাবে কম ফি’র সুবিধাটা দিতে পারছি না।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, কম ফি’র সুবিধায় যারা ডায়ালাইসিস সেবা পাবেন, তাদের সিডিউল দেয়ার কথা ছিল শনিবার। এই সিডিউল নিতেই ডায়ালাইসিসের রোগী ও তাদের স্বজনরা শনিবার হাসপাতাল পরিচালকের কার্যালয়ে আসেন। সেখানে ফি বৃদ্ধির বিষয়টি নজরে আসার পর তারা বিক্ষোভ শুরু করেন। গতকালও তারা বিক্ষোভ অব্যাহত রাখেন।
ডায়ালাইসিস সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান স্যান্ডর মেডিকেইডস (প্রা.) লিমিটেডের ম্যানেজার (হিসাব) নাজমুল হাসান বলেন, রোগী বাড়তে থাকায় অনেকের কম ফি’র সুবিধা কমে গেছে। এছাড়া ফি কিছুটা বেড়েছে। এটি চুক্তি অনুযায়ী প্রতি বছর বাড়ে। রোগীরা জড়ো হয়ে আগের সুবিধা বহাল রাখতে দাবি জানাচ্ছেন।
উল্লেখ্য, পাবলিক–প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) আওতায় ঢাকার জাতীয় কিডনি ইনস্টিটিউট ও চমেক হাসপাতালে কিডনি ডায়ালাইসিসে দুটি সেন্টার স্থাপন করে ভারতীয় প্রতিষ্ঠান স্যান্ডর মেডিকেইডস (প্রা.) লিমিটেড। এর মধ্যে ঢাকার জাতীয় কিডনি ইনস্টিটিউটে ৫৯টি এবং চমেক হাসপাতালে ৩১টি মেশিনে ডায়ালাইসিস সেবা দেয়া হচ্ছে। চমেক হাসপাতালের পুরনো (মূল) ভবনের নিচতলায় এই ডায়ালাইসিস সেন্টারটি স্থাপন করা হয়েছে। ২০১৭ সালে এই সেন্টারে ডায়ালাইসিস সেবা কার্যক্রম চালু করা হয়।