বিদ্যুতের খুচরা মূল্য ১৫.৪৩% বাড়ানোর সুপারিশ

| সোমবার , ৯ জানুয়ারি, ২০২৩ at ৪:১৬ পূর্বাহ্ণ

পাইকারি বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির এক মাসের মধ্যে বিতরণ কোম্পানিগুলোর প্রস্তাব বিশ্লেষণ করে ভোক্তা পর্যায়ে বিদ্যুতের খুচরা মূল্য ইউনিট প্রতি ভারিত গড়ে এক টাকা ১০ পয়সা বা ১৫ দশমিক ৪৩ শতাংশ বাড়ানোর সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের কারিগরি কমিটি। কারিগরি কমিটির সুপারিশে বলা হয়েছে, ভারিত গড়ে বিদ্যমান খুচরা মূল্য ৭ টাকা ১৩ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৮ টাকা ২৩ পয়সা করা যেতে পারে। গতকাল রোববার রাজধানীর বিয়াম মিলনায়তনে সঞ্চালন সংস্থা ও বিতরণ কোম্পানিগুলোর প্রস্তাবের ওপর গণ শুনানি শেষে এ তথ্য জানানো হয়। এক্ষেত্রে এনার্জি রেট বৃদ্ধির পাশাপাশি বিতরণ ব্যয় বৃদ্ধির হিসাব বিবেচনায় নেওয়ার কথা বলছে বিইআরসি।

সর্বশেষ ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বিদ্যুতের দাম সব পর্যায়ে বাড়ানো হয়। তখন পাইকারিতে দাম ৮ দশমিক ৪ শতাংশ বৃদ্ধির পাশাপাশি সাধারণ গ্রাহক পর্যায়ে (খুচরা) বাড়ানো হয় ৫ দশমিক ৩ শতাংশ। তাতে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম গড়ে ৩৬ পয়সা বেড়ে ৭ টাকা ১৩ পয়সা হয়। খবর বিডিনিউজের।

ভর্তুকির ভার কমাতে গত ২১ নভেম্বর পাইকারিতে বিদ্যুতের দাম ১৯ দশমিক ৯২ শতাংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত দেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিইআরসি। এর ফলে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থাগুলোর কাছে বিক্রি করছে ৬ টাকা ২০ পয়সা, যা আগে ৫ টাকা ১৭ পয়সা ছিল।

বাড়তি ওই ১ টাকা ৩ পয়সা থেকে বিতরণ কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে এনার্জি চার্জ বাবদ আট হাজার কোটি টাকা বাড়তি আয় করবে বিদ্যুতের একক বিক্রেতা বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডপিডিবি। এই বাড়তি ব্যয়ের চাপ কমানোর পাশাপাশি বিতরণ ব্যয় বৃদ্ধির কথা উল্লেখ করে খুচরা বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়েছে কোম্পানিগুলো।

প্রস্তাবক সংস্থা ও কোম্পানিগুলোর প্রতিনিধিরা ছাড়াও বাংলাদেশ হাই টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ ও মেট্রোরেল পরিচালনার দায়িত্বে থাকা ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের প্রতিনিধিরাও শুনানিতে অংশ নেন। ভোক্তাদের পক্ষে ছিলেন কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম।

ক্যাবের বিরোধিতা : শুনানিতে উপস্থিত ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম ৫৩টি প্রশ্ন উত্থাপন করে কোম্পানিগুলোর নানা অনিয়মের তথ্য সামনে আনেন। বিতরণ কোম্পানিগুলোর অপ্রয়োজনীয় ব্যয় নিয়ন্ত্রণ করা গেলে বিতরণ ব্যয় বাড়ানোর প্রয়োজন হবে না বলেও যুক্তি উত্থাপন করেন তিনি।

এই জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অভিযোগ করেন, ইতোপূর্বে বিভিন্ন শুনানিতে কোম্পানিগুলোর কাছে বিভিন্ন তথ্য চাওয়া হলেও তারা সেসব তথ্য দিতে পারেনি। কমিশন পরে সেসব তথ্য সরবরাহ করার আদেশ দিলেও তা বিভিন্ন সময় লংঘিত হয়েছে। আদেশ লংঘনের দায়ে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে কমিশনের চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল জানান, বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ক্যাব চাইলে তারা ব্যবস্থা নেওয়ার এসব তথ্য সরবরাহ করবে। অধ্যাপক শামসুল বলেন, পাইকারি বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির ফলে যে আট হাজার কোটি টাকা খরচ বেড়েছে, তা সাধারণ ভোক্তাদের ওপর চাপানোর পরিস্থিতি নেই। কারণ বৈশ্বিক মন্দার কারণে ইতোমধ্যে জনগণ মূল্যস্ফীতির প্রভাবে নাজুক পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে। বিভিন্ন আয়ব্যয়ের খাতকে ওঠানামা করিয়েও এই বাড়তি ব্যয় সমন্বয় করা সম্ভব। কমিশন চাইলে তিনি কোম্পানিভিত্তিক হিসাব করে দেখিয়ে দিতে পারেন।

একই সঙ্গে বিতরণ চার্জ ও সঞ্চালন চার্জও না বাড়িয়ে এক বছরের জন্য কৃচ্ছ্র সাধনের মানসিকতা অর্জন করতে কমিশনের মাধ্যমে কোম্পানিগুলোর প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

শুনানিতে বিইআরসির চেয়ারম্যান মো. আব্দুল জলিল ও সদস্য মোহাম্মদ আবু ফারুক, মো. মকবুলইলাহী চৌধুরী, মোহাম্মদ বজলুর রহমান ও মো. কামরুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকম টাকার বেশি সেশন চান রোগীরা অসহায় হাসপাতাল প্রশাসন
পরবর্তী নিবন্ধকিডনি ওয়ার্ডে বসছে আরো ১০ মেশিন