কমেছে গ্যাসের যোগান সংকট বিভিন্ন সেক্টরে

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ১৯ জুলাই, ২০২২ at ৬:০০ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামের গ্যাস সেক্টরে সংকট তীব্র হয়ে উঠছে। প্রয়োজনীয় গ্যাসের অভাবে গ্যাস নির্ভর বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর সিংগভাগই বন্ধ করে দিতে হচ্ছে। দেশের কৃষি উৎপাদনের বিষয়টি মাথায় রেখে সরকার সার উৎপাদন অব্যাহত রাখতে গ্যাসের বড় একটি অংশ সার কারখানায় সরবরাহ দিচ্ছে। তবে সীমিত গ্যাসের কারণে সব কারখানায় সার উৎপাদন অব্যাহত রাখাও সম্ভব হবে না। গ্যাসের সংকটের মাঝে শিল্প কারখানাগুলোতে রেশনিং এবং বিভিন্ন এলাকায় লোডশেডিং করে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তবে নগরীতে লোডশেডিং করলে ডিজেলের উপর চাপ আসবে বলে উল্লেখ করে সূত্র বলেছে, যেসব এলাকায় লোডশেডিং করা হবে সেখানে ডিজেল নির্ভর জেনারেটর চালিয়ে বিদ্যুতের সংস্থান করা হবে। ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধ এবং আমেরিকার নিষেধাজ্ঞার কারণে বিশ্বব্যাপী অস্থির হয়ে উঠা জ্বালানি খাত শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে ঠেকে তা নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে এলএনজির দাম স্বাভাবিকের তুলনায় প্রায় ছয় গুণ বেড়ে যাওয়ায় গ্যাস আমদানি কমিয়ে দেয়ায় বিদ্যমান সংকট তৈরি হয়েছে।

পেট্রোবাংলার দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানিয়েছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং আমেরিকার নিষেধাজ্ঞার কারণে বিশ্বব্যাপী জ্বালানি সেক্টরে মারাত্মক রকমের নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। জ্বালানির দাম বেড়েই চলেছে। বিশেষ করে রাশিয়া এবং ইরানের গ্যাস বিশ্বের সরবরাহ নেটওয়ার্কে স্বাভাবিকভাবে না আসায় পরিস্থিতি ক্রমে জটিল হয়ে উঠছে। এতে করে পেট্রোবাংলা এলএনজি আমদানি কমিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছে। স্পট মার্কেটে ১০ ডলারের ১ মিলিয়ন বিটিইউ (ব্রিটিশ থার্মাল ইউনিট) এলএনজির দাম বর্তমানে ৫৬/৫৭ ডলারে গিয়ে ঠেকেছে। এত চড়া দামে এলএনজি কেনা সম্ভব না হওয়ায় সরকার স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি কেনা বন্ধ করে দিয়েছে। এই অবস্থায় দেশে গ্যাস সরবরাহ কমিয়ে দিতে হয়েছে।

পেট্রোবাংলা সারাদেশের গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলোকে রেশনিং করে পরিস্থিতি সামাল দিতে নির্দেশ দেয়ার পাশাপাশি সার কারখানা এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য বরাদ্দকৃত গ্যাসের পরিমাণ নির্দিষ্ট করে দিয়েছে।

পেট্রোবাংলার দায়িত্বশীল সূত্রটি দৈনিক আজাদীকে জানায়, সার কারখানার জন্য সরকার ১৩০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস বরাদ্দ করে দিয়েছে। এরমধ্যে কাফকো এবং শাহজালাল সারখানা উৎপাদন অব্যাহত রাখবে। এই দুইটি কারখানার মধ্যে কাফকো ৪৩ মিলিয়ন ঘনফুট এবং শাহজালাল ৪৩ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস ব্যবহার করছে। বাকি ৪৬ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস ব্যবহার করে সিইউএফএল অথবা আশুগঞ্জ সার কারখানার যে কোনো একটিকে উৎপাদন অব্যাহত রাখতে বলা হয়েছে। তবে গতকাল পর্যন্ত দুইটি কারখানাই উৎপাদন অব্যাহত রেখেছে। এতে করে সার কারখানার জন্য বরাদ্দকৃত ১৩০ মিলিয়ন ঘনফুটের চেয়ে বেশি গ্যাস ব্যবহৃত হচ্ছে। ফলে অন্যান্য সেক্টরগুলোতে সংকট প্রকট হয়ে উঠছে।

অপরদিকে গ্যাস নির্ভর চট্টগ্রামের চারটি বিদ্যুৎ উৎপাদন প্ল্যান্টের মধ্যে শুধুমাত্র একটিতে উৎপাদন অব্যাহত রয়েছে। রাউজান তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ১ এবং ২ নম্বর ইউনিট এবং শিকলবাহা ২৬০ মেগাওয়াট তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং ১৫০ মেগাওয়াট তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মধ্যে কেবলমাত্র রাউজান তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ১ নম্বর ইউনিটে উৎপাদন চলছে। তাও পুরোদমে উৎপাদন চালানো যাচ্ছে না। এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ২৯ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস ব্যবহার করে ১২০ মেগাওয়াটের মতো বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে বলে পিডিবি সূত্র জানিয়েছে।

সূত্র বলেছে, চট্টগ্রামে এবং সন্নিহিত অঞ্চলে গ্যাস সরবরাহের দায়িত্বে থাকা কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির গ্যাসের চাহিদা ৪০০ মিলিয়ন ঘনফুটের বেশি। কিন্তু এই কোম্পানিকে ৩১৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ দেয়া হচ্ছিল। যা দিয়ে কোনো রকমে জোড়াতালি দিয়ে চট্টগ্রাম অঞ্চলে গ্যাস সরবরাহ ব্যবস্থা চালু রাখা হয়েছিল। স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানি বন্ধ করে দেয়ার পর চট্টগ্রামে গ্যাসের যোগান ২৭০ মিলিয়ন ঘনফুটে নিয়ে আসা হয়। এরমধ্যে বহুজাতিক সার কারখানা কাফকো ৪৩ মিলিয়ন ঘনফুট, সিইউএফএল ৪১ মিলিয়ন ঘনফুট এবং রাউজান তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ১ নম্বর ইউনিটকে ২৯ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস দেয়া হচ্ছে। বাকি গ্যাস দিয়ে চট্টগ্রামের অনেকগুলো সেক্টর, সিএনজি রি-ফুয়েলিং স্টেশন এবং বাসা বাড়িতে গ্যাসের যোগান দেয়া হচ্ছে। ৪৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের যোগান কমে যাওয়ায় চট্টগ্রামের বিভিন্ন সেক্টরে সংকট প্রকট হয়ে উঠছে। ঈদের সময় বন্ধ হয়ে যাওয়া বিভিন্ন কলকারখানা চালু হতে শুরু করেছে। এই অবস্থায় গ্যাস ও বিদ্যুৎ সেক্টরে নতুন নতুন করে সংকট দেখা দেবে বলেও আশংকা প্রকাশ করা হয়েছে।

বিষয়টি নিয়ে পেট্রোবাংলার শীর্ষ একজন কর্মকর্তা বলেছেন, আতংকের কিছু নেই। সরকার বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এসব সিদ্ধান্ত ঠিকঠাকভাবে বাস্তবায়ন করা গেলে এই সংকট কাটিয়ে উঠা কঠিন হবে না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির পদস্থ একজন কর্মকর্তা বলেছেন, পরিস্থিতির উপর কারো হাত নেই। এটি বৈশ্বিক সংকট। কবে এই সংকটের সুরাহা হবে তা কেউ জানে না। সবাই মিলে সতর্কতার সাথে পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমিনি সেক্রেটারিয়েট ফর চট্টগ্রাম প্রকল্পের নকশা চূড়ান্ত
পরবর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে কোন এলাকায় কখন বিদ্যুৎ থাকবে না জানা যাবে আজ