বেশ কিছুদিন জীবন-মৃত্যুর দ্বৈরথে কাটানো খালিদ আহসান একেবারে মানে জীবনের আঙিনা থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেছেন। কবি-চিত্রী, সংস্কৃতিকর্মী, ডিজাইনার, সংগঠক-যার যেভাবে ইচ্ছে সেভাবেই তাঁকে চিহ্নিত করা চলে। আবার, কেবল খালিদ ভাই বললেও চলে। আমাদের অনেকের কাছে তাঁর সবগুলো পরিচয় সম্মিলিত হয়ে মাত্র তিনটে বর্ণের দু’টো শব্দে এসে দাঁড়ায়। এই দু’টো শব্দের ডাক থেকেই বলা চলে, তিনি আমাদের অন্তরের সেই মানুষটা, আমাদের মনের সেই জায়গাটাতে তাঁর অবস্থান যেখানে রয়েছে দীর্ঘকালের প্রবহমানতা, দীর্ঘ চলার অভিজ্ঞতা। কেবল চট্টগ্রাম কেন বলি, গোটা দেশেই তিনি তাঁর কাজের মধ্য দিয়ে এমন একটা অবস্থানে পৌঁছে গিয়েছিলেন যে-অবস্থান অত্যন্ত মর্যাদার, অত্যন্ত গুরুত্বের। খালিদ আহসান মানে উন্মত্ত আশি জুড়ে চলমান সংক্ষুব্ধতার মাঝখানে স্থিতধী-নান্দনিক এক নির্ভরতা, খালিদ আহসান মানে মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তীকাল থেকে সামপ্রতিক কাল পর্যন্ত কোনো না কোনো ইতিবাচক কাজের উৎসভূমি। তাঁর প্রকাশিত ছ’টা (হয়তো আরও বেশিও হতে পারে) কাব্যগ্রন্থের নিরিখে তাঁকে কবি বলে অভিহিত করাই যায়। কিন্তু আমি নিশ্চিত যে-কবিতা তিনি লিখেছেন তা পরিমাণে এর চাইতেও অনেক বেশি। ছ’খানা কাব্যগ্রন্থের মালিক হয়েও তিনি কখনও তাঁর নিজের কবিপরিচিতি নিয়ে তত ভাবিত ও উদ্বিগ্ন ছিলেন না। বলা যায়, কে তাঁকে কবি বললো বা না বললো, তিনি কী মানের কবিতার রচয়িতা বা তাঁর কবিতার আলোচনা-পর্যালোচনা হওয়া দরকার কি দরকার নেই এসব নিয়ে এক ধরনের ঋষিসুলভ নির্বিকারতা ছিল তাঁর মধ্যে। তিনি লিখতেন কেবল তাঁর নিজের মনের আনন্দে। আর তাঁর প্রকাশিত কবিতার বইগুলো নান্দনিকভাবে সৌকর্যে মণ্ডিত।
আমি সৌভাগ্যবান যে তাঁর মত এমন সহৃদয় একজন মানুষের সাহচর্য পাওয়ার সুযোগ আমার জীবনে ঘটেছিল। ১৯৭৯ সালে বিজ্ঞানের লেখাপড়ায় শেষ সনদ নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক বিজ্ঞানের সঙ্গে চিরবিচ্ছেদ ঘটিয়ে আমি চট্টগ্রাম কলেজে ভর্তি হই বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতক সম্মান পর্যায়ে লেখাপড়া করবার জন্যে। খালিদ আহসান তখন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ছাত্র। আমার তা জানা ছিল না। তাঁকে প্রথম চিনতে পারি অন্যভাবে। চট্টগ্রাম, ঢাকাসহ বাংলাদেশের অনেকগুলি জেলা থেকে তখন বিভিন্ন ধরনের লিটল ম্যাগাজিন/ছোট কাগজ বেরোতো। বলা যায় গোটা আশির দশক জুড়ে একদিকে চলেছে সামরিক শাসন এবং অন্যদিকে বেরিয়েছে তারুণ্যখচিত লিটল ম্যাগাজিন/ছোট কাগজ। দেখতাম চট্টগ্রামের দু’জন শিল্পীর করা প্রচ্ছদে শোভিত হয়ে বেরোচ্ছে চমৎকার সেসব পত্রিকা। আসলে অনেকেই ছিলেন সেসময়টাতে কিন্তু খালিদ আহসান এবং আহমেদ নেওয়াজ এই দু’জনের করা প্রচ্ছদেই প্রকাশিত হয়েছিল অধিকাংশ ছোট কাগজ। আমরা এমন অভ্যস্ততায় পৌঁছেছিলাম যে কেবল বাইরের প্রচ্ছদ দেখে ভেতরের তথ্য না জেনেই আমরা বলে দিতে পারতাম প্রচ্ছদশিল্পীর নাম। আরও কিছুকাল পরে এসে যুক্ত হ’ন উত্তম সেন, সাফায়াত খান এবং পিযুষ দস্তিদার (নান্নু দা’)। আমার ধারণা ছিল প্রচ্ছদশিল্প যখন তিনি নিশ্চয়ই হবেন চারুকলার শিক্ষার্থী। না, জানলাম তিনি আসলে বাংলা সাহিত্যের। একদিন আমাদের সকলের প্রিয় কারেন্ট বুক স্টল থেকে কিনলাম ‘এলবাম’ নামের একটি পত্রিকা, বেরিয়েছে বগুড়া থেকে। দেখেই মনে হলো, এ-প্রচ্ছদ একমাত্র খালিদ আহসানেরই হয়। পাতা উল্টে দেখলাম, হ্যাঁ, ঠিক তাই। চট্টগ্রামের শিল্পী খালিদ বগুড়া কেন আরও বহু জেলার পত্রপত্রিকা-পুস্তক প্রভৃতির নান্দনিক সৌন্দর্য সৃষ্টির কারিগর। অনিন্দ্য বলে এক প্রকাশককে দেখলাম হুমায়ূন আহমেদের বই ছাপছেন একের পর এক এবং সেগুলোরও প্রচ্ছদশিল্পী তিনিই। কেবল হুমায়ূন আহমেদ নয় একপর্যায়ে অনিন্দ্য’র নিয়মিত শিল্পী হয়ে গেলেন খালিদ আহসান। তাঁর সঙ্গে পরিচয় ঘটবার আগেই আমার মনে এমন ধারণা দৃঢ় হয়, কলকাতায় যেমন পূর্ণেন্দু পত্রী তেমনই বাংলাদেশে খালিদ আহসান। আমি কিন্তু জ্যেষ্ঠদের কথা ভুলে যাই নি- কাইয়ুম চৌধুরী, কাজী হাসান হাবিব, সমরজিৎ রায় চৌধুরী, আবুল বারক আলভীসহ আরও অনেক শিল্পী নিশ্চয়ই স্মরণযোগ্য বিশেষ করে কাইয়ুম চৌধুরীর বৈপ্লবিক অবদানকে কোনোভাবেই ভোলা যাবে না। কিন্তু খালিদ আহসানকে আমরা তখন তারুণ্যের স্পর্ধিত প্রতীক বলে গ্রহণ করেছিলাম। তারুণ্য মানে উদ্দামতা, উচ্ছলতা, পরীক্ষা-নিরীক্ষা, তারুণ্য মানে কোনো চাপিয়ে দেওয়া ব্যাকরণে না চলে শুধু নিজের স্বভাবের নিয়মে চলতে থাকা, তারুণ্য মানে কী হবে তা একটুও না ভেবে সৃষ্টিশীলতায় অবিরত সাঁতার কেটে যাওয়া। খালিদ আহসান তখন তাই ছিলেন।
আমি যখন চট্টগ্রাম কলেজ থেকে সাহিত্যে স্নাতক পর্যায়ের লেখাপড়া শেষ করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তরে পড়বার জন্যে ভর্তি হই তখন খালিদ আহসান বেরিয়ে গেছেন সনদ নিয়ে। পরে অবশ্য অনেকবারই এসেছিলেন বিভাগে। লেখালেখির সুবাদে চট্টগ্রাম শহরের কর্মতৎপরতার মধ্যেও থাকি আমরা সকলেই, অন্য অনেকের মতন। কবি-সাংবাদিক আবুল মোমেনের ‘ফুলকি’ ছিল আমাদের সাহিত্যের আড্ডার একটি উজ্জ্বল কেন্দ্র। খালিদ ভাইয়ের সঙ্গে পরিচয় সেখানেই। শহরে তখন অনেকগুলি সাহিত্যের আড্ডা ছিল। ফুলকি ছাড়াও সবুজ হোটেলের আড্ডা, চিম্বুক হোটেলের আড্ডা, কবি সুনীল নাথরা বসতেন সম্ভবত রিয়াজুদ্দিন বাজারে ‘জলযোগ’-এর আড্ডায়, কিংবা মনে পড়ে আন্দরকিল্লায় ‘এপিটাফ’-এর আড্ডার কথা। ‘এপিটাফ’ ছিল মিনার মনসুর, দিলওয়ার চৌধুরীসহ আরও অনেকের প্রাণের আশ্রয়। একটা ছাপড়ামত পুরনো ধরনের চায়ের দোকানে চলতো তাঁদের সেই আড্ডা। কবি শিশির দত্ত, আবসার হাবীব, মুনীর হেলাল অর্থাৎ ‘স্পার্ক জেনারেশন’-এর আড্ডা ছিল সম্ভবত চিম্বুক হোটেলে। বোস ব্রাদার্সেও ছিল আড্ডা। বস্তুত ফুলকি-আড্ডার কবিরাই মূলত বোসেও আড্ডা জমাতেন। কবি-ছড়াকার অজয় দাশগুপ্ত অসাধারণ সব ছড়া লিখে তখন বিখ্যাত। তাঁর একটি কবিতা আমাদের মুখে-মুখে ফিরতো- ‘বাংলাদেশকে একটি হাফপ্যান্ট কিনে দিন’। বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ানিবাসী কবি-কলামিস্ট অজয় দা ছিলেন এ-আড্ডার এক তুমুল অভিসারী। খালিদ ভাইয়ের সঙ্গে ছিল তাঁর সখ্য। কবি ওমর কায়সার, শাহিদ আনোয়ার, বিশ্বজিৎ চৌধুরী ছাড়াও অনুবাদক মাইনুল হাসান চৌধুরী, সম্পদ বড়ুয়া এঁরা বোসের আড্ডাকে প্রাণময় করে তুলতেন। আসতেন কবি ইউসুফ মুহম্মদ। ‘তোলপাড়’ নামে একটি লিটল ম্যাগাজিন বের করতেন ইউসুফ ভাই। বহুদিন দেখেছি খালিদ ভাই নিবিষ্ট মনে টেবিলে বসে ভাবছেন তোলপাড়-এর মুদ্রণ-প্রচ্ছদ এসব নিয়ে। এর প্রতিটি সংখ্যা ছিল শিল্পী খালিদ আহসানের নন্দনস্পর্শে ভরপুর। সীতাকুণ্ড থেকে আসতো গল্পকার-ছড়াকার দেবাশিস ভট্টাচার্য। দেবাশিসের গল্প পছন্দ করতেন খালিদ ভাই। বর্তমানে আমেরিকা প্রবাসী কবি-ছড়াকার সন্তোষ বড়ুয়া, নাট্যজন কুন্তল বড়ুয়া, কবি বিকাশ মজুমদার এঁরা খানিকটা বয়োকনিষ্ঠ হয়েও এসব আড্ডাকে রাখতো মাতিয়ে। সুদূর বন্দর মানে পোর্ট কলোনি থেকে আসতো কবি সেলিনা শেলী এবং কবি-চিত্রী গৌতম আশীষ। কবি আসাদ মান্নানদের একটি আড্ডা ছিল বাটালি রোডে ‘মনন’-পত্রিকাকেন্দ্রিক। সে-আড্ডাতেও গিয়েছি খালিদ ভাইয়ের সঙ্গে। অনেক নামই মনে করা দুরূহ হয়ে উঠছে এখন। আমার বন্ধু কবি আহমেদ রায়হান একটা পত্রিকা বের করবে ‘হৃদপিণ্ড’ নামে। রায়হানের দৃঢ় প্রতিজ্ঞা, প্রচ্ছদ করবেন অবশ্যই খালিদ আহসান। কবি আহমেদ রায়হান আমার সেই বন্ধু যার সমস্ত সত্তা জুড়ে কবিতা সমস্ত ভাবনা জুড়ে কবিতা, কবিতাই আর কিছু নয়। এমনই সে-সংলগ্নতা, অবিশ্বাস্য। একদিন চিম্বুকে বসে আছি, সময় সকাল এগারো কি সাড়ে এগারো। চিম্বুকে তখন কবি আবু মুসা চৌধুরী, হাফিজ রশিদ খান, বিশ্বজিৎ চৌধুরী, ইব্রাহিম আজাদ, শাহিদ আনোয়ার, গল্পকার প্রলয় দেব (কিছুকাল আগে কলকাতায় প্রয়াত) এঁরাও আসতেন নিয়মিত-অনিয়মিত। আমি এবং রায়হান অবকাশ পেলে কখনও-কখনও সকালের দিকটাতে চিম্বুকে বসতাম। তো সেরকম একটা দিনের কথাই হচ্ছিলো। চায়ে চুমুক দেবো, আচমকা দেখলাম রায়হান সিঁড়ি ভেঙে ওপরে উঠে আসছে। দেখে আমি হতভম্ব। কেননা, ওর তখন চট্টগ্রাম কলেজে গণিতে সম্মান পরীক্ষা দেওয়ার কথা। (রায়হান আমার সমবয়সী হলেও লেখাপড়ায় অবহেলার কারণে কিছুটা পিছিয়ে পড়ে।) পরীক্ষা না দিয়ে, পরীক্ষায় আর কোনোদিনও বসবার চিন্তা মাথা থেকে একেবারে ঝেড়ে ফেলে, কবিতার রাস্তায় হাঁটবার চিরপ্রতিজ্ঞা নিয়ে চলে এসেছিল আহমেদ রায়হান।
কবি আহমেদ রায়হানই আমাকে নিয়ে যায় কবি-চিত্রী খালিদ আহসানের বাসায়। উদ্দেশ্য তার সম্পাদিত ‘হৃদপিণ্ড’ পত্রিকার জন্যে খালিদ ভাইকে অনুরোধ করা। ততদিনে খালিদ আহসান গোটা দেশেই নামকরা, শুধু দেশ কেন বলি তাঁর নাম ছড়িয়েছে পশ্চিমবঙ্গেও। সম্পাদক প্রকাশনীর অসাধারণ নান্দনিক-গুরুত্বপূর্ণ অনেক কাজের কাণ্ডারী ছিলেন তিনি। আজও ভুলতে পারি না শিশির দত্ত সম্পাদিত ‘স্বনির্বাচিত’ গ্রন্থটির কথা। পাতায় পাতায় শিল্পী মুর্তজা বশীরের করা কবিদের স্কেচ এবং কবিতা আর শিল্পী খালিদ আহসানের শিল্পসৌকর্য। কী যে এক ঘোরের মতন ছিল সেসব দিন। খালিদ ভাইয়ের বাসা ছিল দেওয়ান হাটের মোড় থেকে কাছেই। তাঁর পিতা ছিলেন সুলতান দেওয়ান হাসপাতালের প্রধান চিকিৎসক। চিলেকোঠামত একটা ছোট্ট কক্ষে থাকতেন খালিদ ভাই তাঁর নিজের স্বাধীন এলাকায় নিজের মত করে। গোটা কামরায় বইপত্র, কাগজ, শিল্পকর্মের খসড়া, ফোল্ডার, তাঁর নিজের করা অসংখ্য প্রকাশনার সংগ্রহ। সবই ছিল এলোমেলো কিন্তু অবহেলাখচিত নয়। আমার তখন কিছু গল্প এখানে-ওখানে বেরিয়েছে। শহর তো তত বিশাল নয়, সবাই সবাইকে চেনে, ব্যক্তিগতভাবে না হলেও নামের মাধ্যমে। খালিদ ভাইয়ের সঙ্গে প্রায় দু’ঘণ্টা আড্ডা দিলাম। কত প্রসঙ্গেই যে কথকতা হয় তার সব আজ আর মনে নেই। কিন্তু একটা জিনিস স্পষ্ট, রুচি, মেজাজ, সৌন্দর্যচেতনা এসব বিষয়ে অত্যন্ত প্রখর চিন্তার মানুষ তিনি। সেখানে কোথাও এতটুকু ছাড় নয়। আমাকে বললেন, গল্প লিখে যাও, আমাদের চট্টগ্রামে কথাসাহিত্যের সংকট আছে। কথাটা এরপরেও কানে বেজেছে বহুবার। কখনও সেভাবে ভেবে লিখতে বসি নি যে কথাসাহিত্যই আমাকে করত হবে। কিন্তু এটা বুঝতে পারা গেল, খালিদ আহসান আমার গল্প পড়েছেন এবং তিনি চান, আমি গল্পটাকে সিরিয়াসলি নেই। আহমেদ রায়হানের সঙ্গেই আরও অনেকবার গেলাম খালিদ ভাইয়ের বাসায়। এক ভাই এক বোনের সংসারে তিনি ছিলেন, পিতামাতার অসম্ভব আদরের ধন। সেটা টের পেতাম তাঁর বাসায় গেলে। আপ্যায়নে ভরিয়ে তুলতেন আমাদের। ঐ বাসাটা ছিল তাঁর পিতার কর্মসূত্রে পাওয়া। এমনকি তাঁদের দেওয়ানবাজারের বাসাতেও গিয়েছি অনেকবার। চান্দগাঁওয়ে স্থিত হওয়ার আগে সেখানেই থাকতেন তাঁরা। খালিদ ভাইদের দেওয়ান বাজারের বাসা থেকে আন্দরকিল্লা আমার নানাবাড়ি দেখা যায়। একদিন হাসতে হাসতে বললাম, খালিদ ভাই, আপনাদের এই ঘরের সামনে দিয়ে আমার মা, আমার বাবা ঘোড়াগাড়িতে কিংবা পায়ে হেঁটে চট্টগ্রাম কলেজে যেতেন-আসতেন। অবাক কণ্ঠে খালিদ ভাই প্রশ্ন করেন, তুমি জানলে কিভাবে? বললাম, চট্টগ্রাম কলেজে যাওয়ার সবচাইতে অনুকূল পথ তো এটাই। আরও একটা রাস্তা ছিল ঘুরে যাওয়ার কিন্তু মা-বাবা এ-পথেই যেতেন। দেওয়ানবাজারে খালিদ ভাইয়ের বাসায় যখন গিয়েছি, ইচ্ছেমত গল্প করেছি, চেয়ারে বসে, বিছানায় বিশ্রাম নিতে-নিতে এমনকি ভরপেট খেয়েদেয়ে কখনও কখনও ঘুমিয়েও পড়েছি। তাঁর সংগ্রহে ছিল তাঁর একজন খুবই প্রিয় কবি ও প্রিয় শিল্পী পূর্ণেন্দু পত্রীর কবিতার বই এবং কবিতার ক্যাসেট। কখনও কখনও ক্যাসেট চালিয়ে শোনাতেন। তাঁর নিজের ভাললাগা শিল্পী-কবির গান-কবিতা শোনানো-পড়ানো ছিল তাঁর একটা প্রিয় কাজ। অনেক মূল্যবান সংগ্রহ ছিল তাঁর। পশ্চিমবঙ্গের অনেক কবির কবিতা, লিটল ম্যাগাজিন তাঁর কাছ থেকে নিয়ে পড়েছি।
কবি আহমেদ রায়হানের সূত্রে গিয়েছিলাম তাঁর বাসায় প্রথমবার। কিন্তু কি করে যে আমি তাঁর অন্যতম স্নেহের পাত্র হয়ে উঠেছিলাম তা আমার জানা ছিল না। এরপর থেকে প্রায়ই যেতাম তাঁর বাসায়। তিনি তাঁর শিল্পকর্ম-প্রচ্ছদ এসব দেখাতেন। আর ছিল তাঁর অজস্র ধূমপান। আমি চিরকাল অধূমপায়ী এবং আমার প্রায় সকল বন্ধুই ধূমপায়ী। বলা যায় ‘প্যাসিভ স্মোক’ হিসেব করলে আমার চাইতে বড় ধূমপায়ী আর কেউ নয়। ধূমপান না করলেও কোনো এক অজ্ঞাত কারণে ধূমপায়ীদের পাশে বসে থেকে ধূম্ররেখা অনর্গল সয়ে যাওয়ার এক অলৌকিক ক্ষমতা আজও আমার রয়েছে। একদিন খালিদ ভাই বললেন, চলো, তোমাকে একখানে নিয়ে যাবো। একটা রিঙা নিয়ে আমরা গেলাম, দামপাড়ার দিকে। সম্ভবত চায়নিজ হোটেলটার নাম ছিল ‘গোল্ডেন গেট’ বা সেরকম কিছূ একটা। খালিদ ভাইয়ের সবচাইতে পছন্দ ছিল স্যুপজাতীয় খাবার। অন্য খাবার হয়তো খানিকটা খেতেন কিন্তু স্যুপ খেতেন খুব মনোযোগ দিয়ে। ভাবলাম, এটাই তাঁর ‘একখানে নিয়ে যাবো’র অর্থ। না, মোটেও তা নয়। আবার রিঙায়। তাঁর ঠোঁটে অনর্গল সিগারেট, পাশে অধূমপায়ী আমি। রিকশা গিয়ে থামলো সেই সুদূরে, পাথরঘাটার দিকে, জায়গাটার নাম জলিলগঞ্জ। আমার কোনো ধারণাই ছিল না, এ কোথায় তিনি আমাকে নিয়ে এলেন। কেবল মনে আছে কেমন প্রশস্ততায় ছড়ানো, একটা প্রান্তিক নির্জনতা আর খোলামেলা প্রান্তরে গিয়ে দাঁড়ানোর একটা আমেজ টের পাই। বুঝতে পারি, তিনি তাঁর পরিচিত কোনো বন্ধু বা আত্মীয়ের বাড়িতে আমাকে নিয়ে এসেছেন। দরজা খুলে দিল এক তরুণি- গায়ের রং ফর্সা এবং খানিকটা লালচেমত। আমরা সেখানে গল্প করি, চা খাই। খালিদ ভাই পরিচয় করিয়ে দেন, ও হলো অরুন্ধতী, লেখালেখি করে, ডাক-নাম আইভি। হ্যাঁ, অবশ্যই নামে আমি চিনতাম। লেখাও পড়েছি, মনে পড়লো- অরুন্ধতী ভট্টাচার্য। আমার এ-ও মনে পড়লো একই নামে একটা নক্ষত্রও তো রয়েছে। কিছুটা সময় গল্প করে আমরা বেরিয়ে আসি। কিন্তু তখনও আমি তাঁর সঙ্গে অরুন্ধতীর যোগাযোগটা বুঝতে পারি না। রিকশায় উঠেছি ফেরার পথে। একটা সিগ্রেট ধরিয়ে খালিদ ভাই জিজ্ঞ্যেস করেন, কেমন মনে হলো আইভিকে? সে-প্রশ্ন বুঝতেও সময় লাগে আমার। সত্যি কথা বলতে কি, আমি বলতে পারতাম, তিনি এমনই যে সহজেই তাঁর প্রেমে পড়ে যাওয়া যায়, কথাবার্তা এবং আন্তরিকতায় তিনি এমনই যে মনে হয় খুবই কাছের জন। সরাসরি বলেন না কিন্তু আমি বুঝতে পারি, ইনি হলেন কবি খালিদ আহসানের মানস-সুন্দরী। হ্যাঁ, পরবর্তীকালে আমাদের প্রিয়-পরিচিত আইভি হাসান। তিনিও শিল্পী এবং একসময়ে লেখালেখিও করেছেন। আমার নিজের কবিতার বইয়ের প্রচ্ছদও তিনি করেছেন। খালিদ ভাই কখনও উচ্ছ্বসিতভাবে তাঁর নিজস্ব ভালোবাসা-প্রেম এসব নিয়ে কথা বলতেন না বরং এড়িয়েই যেতেন। তিনি বরং অন্যদের সম্ভাবনার কথা উৎসাহভরে বলতেন এবং প্রচার করতেন। কবি সুনীল নাথের কবিতা খুব পছন্দ করতেন খালিদ ভাই। সুনীল দা’ও অসম্ভব ভালোবাসতেন তাঁকে। নন্দনকাননের সেই সুনীল-চেম্বারে মানে কবি ও হোমিওপ্যাথ চিকিৎসক সুনীল নাথের বাসায়, বাসাসংলগ্ন সাবিত্রী পাইচ হোটেলে খেয়ে আবার আড্ডায় বসা। মাঝে-মাঝে নাট্যকার মিলন চৌধুরী এবং কথাশিল্পী রথীন্দ্রপ্রসাদ দত্ত, কবি ফাউজুল কবির এলে সময়জ্ঞানহীন আড্ডার বয়ে চলা– এসবই ছিল তখনকার তারুণ্যখচিত দিন। খালিদ ভাই সম্ভবত সুনীল নাথের প্রায় সব কবিতার বইয়ের (২/১টি বাদে) প্রচ্ছদ করেছিলেন। সুনীল দা’র কবিতার ওপর আমি আলোচনা লিখি এবং খালিদ ভাই সেটা খুব পছন্দ করেন।
যাহোক, সব কথাই এখন আর গুছিয়ে কিংবা সুবিন্যাসে বলা যাচ্ছে না কিন্তু আমার নিজের লেখক হিসেবে আত্মপ্রকাশে যে তাঁর একটা বিরাট ভূমিকা ছিল সেটা না বললে এই লেখাটার প্রকৃত উদ্দেশ্য থেকে সরে যাওয়া হবে। আমরা তখন নজির আহমদ সড়কস্থ গুটেনবার্গে একটা প্রায় নিয়মিত আড্ডা দাঁড় করিয়েছিলাম। এটি একটি প্রেস এবং এর কর্ণধার ছিল আমাদের বন্ধু গল্পকার প্রলয় দেব। এর পরিচালনায় আরও ছিল নাট্যজন দুলাল দাশগুপ্ত। এমনকি এর কম্পোজিটর রুচিস্নিগ্ধ সুনীল দাশের কথাও আমার মনে থেকে যায়। অনেকেই এখানে আসতো। এর সন্নিকটে ছিল চিত্রী-গল্পকার শাফায়াত খানের কর্মস্থলও। গল্পকার প্রলয় দেব, দুলাল দাশগুপ্ত এরা তখন ‘কালপুরুষ’ কেন্দ্রিক নাট্যব্যস্ততায় মুখর। নাট্যজন শান্তনু বিশ্বাসের দৌত্যে চলছে তাদের অবিরাম কর্মযজ্ঞ। প্রায় রোজই আমাদের আড্ডা জমে উঠতো গুটেনবার্গে। এখানেই একদিন খালিদ ভাই চা খেতে খেতে আমাকে বললেন, তুমি তো অনেক গল্প লিখেছো, একটা গল্পের বই বের করো। আমি নিরীহ গোবেচারা ঢংয়ে বলি, কী বলেন, খালিদ ভাই, আমার বই! কে পড়বে আমার বই? আর কীইবা আমি লিখেছি? পাশ থেকে প্রলয় বলে, ওর বই আমি বের করবো, অসুবিধে নেই। প্রলয় দেব তখন গল্প পত্রিকা নামে দারুণ একটি গল্পের পত্রিকা বের করবার পথে। খালিদ আহসান বললেন, সত্যি বলছি, আমি তোমার বই বের করবো। পরিকল্পনার কথাটাও তিনি খুলে বলেন। তাঁর একটি প্রতিষ্ঠান ছিল, ক্রিয়েটিভ ওয়ার্কশপ নামে। তাঁরই এক ভাই (চাচাতো বা খালাতো) শাহেদ তৈমুর তাঁর সহযাত্রী। শাহেদ ভাই আবার মিনার মনসুর ও দিলওয়ার চৌধুরীদের সঙ্গে ছিলেন ‘এপিটাফ’-এও। এখন প্রায় আদেশই দিয়ে ফেলছেন খালিদ ভাই। সেটা ১৯৮৮ সাল। হিসেব করে দেখি, গল্প আমি লিখেছি কম করে হলেও গোটা ত্রিশেক। কিন্তু পাতে দেওয়ার মত গল্প কই! শেষে বহু ঝেড়ে বেছে পেলাম সর্বমোট ৮টি গল্প, যেগুলোতে মনে হয় যে, হ্যাঁ, আমি নিজেই রয়েছি। একটা গল্প নিলাম ১৯৮০ সালে লেখা- ‘পুন্নিমা হেয়ার কাটিং সেলুন’ আমার আঠার বছর বয়সে লেখা গল্প। সেটাই আমার সবচাইতে কম বয়সে লেখা গ্রন্থর্ভূত গল্প। তারপর পাণ্ডুলিপি হস্তান্তর করলাম তাঁকে। প্রত্যেকটি গল্পের শিরোনাম তিনি আমার হস্তাক্ষর দিয়ে বিন্যস্ত করলেন। হস্তাক্ষরকে ব্লক করিয়ে নিয়ে লেটার প্রেসে ছাপা। হোমো সেপিয়েন্স-ই সম্ভবত লিখতে গিয়ে ভুল হলো। খালিদ ভাই বললেন, ভুলটা কেটে দাও, দিলাম। সেটাকে নতুন আরেকটা কাগজে লিখতে না দিয়ে বললেন, ভুলটা কেটে দিয়ে পাশে আবার নতুন করে লেখো শব্দটা, লিখলাম। সেই ভুল-শুদ্ধটাই ব্লক করা হলো। পেঙ্গুইন-এর মত করে পেপার-ব্যাক ধরনে ক্রোমোল্যাঙ কাগজে তাঁরই প্রচ্ছদে বেরোলো আমার প্রথম বই, আমার আত্মপ্রকাশ, আমার ঘোষণা, ‘গ্রাম উন্নয়ন কমপ্লেক্স ও নবিতুনের ভাগ্যচাঁদ’। চট্টগ্রাম তো বটেই, ঢাকার ‘ম্যারিয়েটা’সহ আরও অনেকগুলি বুকস্টলে দেওয়া গেল সেই বই। এখানে খানিকটা আত্মবর্ণন হয়ে পড়লেও না বলে এড়িয়ে যাওয়াও মুশকিল। কথাসাহিত্যিক আখতারুজ্জামান ইলিয়াস খুব পছন্দ করেছিলেন আমার প্রথম গল্পগ্রন্থটির মুদ্রণ-পারিপাট্য। তিনি স্বয়ং বইটির একটি কপি পাঠিয়েছিলেন কলকাতার বিখ্যাত ‘চতুরঙ্গ’ পত্রিকায়। সেখানে কান্তি গুপ্ত লিখেছিলেন বইটির আলোচনা। সেটা এতটাই প্রশংসার যে আমার জন্যে তা ছিল অনিঃশেষ অনুপ্রেরণার মত। খালিদ ভাই খুবই উচ্ছ্বসিত হয়েছিলেন সেই আলোচনা দেখে। এই বইটি বের হওয়ার আরেকটি ইতিবাচক কারণ উল্লেখ করা দরকার। একই সমান্তরালে চলছিল আমার আরেকটি বই ‘হাসান আজিজুল হক : রাঢ়বঙ্গের উত্তরাধিকার’ বইয়ের মুদ্রণকাজ ব্নধুবর কবি ইব্রাহিম আজাদের ‘ইউনিটি প্রেস’-এ। আজাদ প্রেস বিক্রি করে দেওয়ার আগে আমার বইটা দিয়েই সম্ভবত শেষ পেরেকটি ঠুকতে চাইছিলেন। কিন্তু গল্পের বইটা বের হওয়ার ফলে গল্পকার হিসেবে একটা পরিচিতি আমার জুটে যায়। একই বছরে অল্প পরে বেরোয় গবেষণা-গ্রন্থটি। খালিদ ভাই সে-বই বের না করলে পরে কখন কে আমার বই বের করতো সেটাও ভাবি। হতে পারে, বিস্তর সময় লেগে যেতো। তা না হলেও যে-বই খালিদ আহসান বের করেন আমার তার মধ্য দিয়ে আমি তার ভালোবাসার এক বিশাল স্পর্শ টের পাই। নিজের গাঁটের টাকা খরচ করে আমার মত অর্বাচীন লেখকের বই বের করা আর বেকারকে ব্যবসার পুঁজি দেওয়া প্রায় সমান কথা। এরপর খালিদ ভাই আমার আরও অনেক বইয়ের প্রচ্ছদ করেন। গল্পগ্রন্থ মৎস্যপুরাণ-এর প্রচ্ছদ করেছিলেন তিনি বড় ভালোবেসে। সেই গ্রন্থ উৎসর্গ তাঁকেই করেছিলাম। ‘প্রথম আলো’ পত্রিকার বছরের নির্বাচিত দশটি সৃজনশীল বইয়ের তালিকায় সে-বছর বইটির স্থান হয়। আলোচনা লেখেন, কবি-কথাকার আবুবকর সিদ্দিক। আরও উল্লেখ করবার মত ঘটনা, দশটা বইয়ের মধ্যে কেবল একটা বইই ছিল চট্টগ্রামের। সেদিনও খালিদ ভাই অত্যন্ত আনন্দিত হয়েছিলেন আমার বইয়ের সাফল্য দেখে।
আসলেই আমি বলতে পারছি না কথাগুলো কিভাবে বললে গোছানো বলে বিবেচ্য হবে কিন্তু কবি-চিত্রী খালিদ আহসানের সৃজনশীল কাজের মূল্যায়ন পৃথকভাবে অবশ্যই করবো কিন্তু এখন এই বেদনাঘন উদযাপনের আচ্ছন্নতায় সেটা সত্যি অসম্ভব। আমার চোখের সামনে ভাসছে তাঁর কবিতার পংক্তি। প্রথম বইয়ের প্রথম কবিতাটি শীতের কফিন থেকে উৎসারিত তুমি মানিপ্ল্যান্ট। পড়ি সর্বপ্রথম লাইন- “বরফ কফিনের পাশে সবুজ মানিপ্ল্যান্ট উঁকি দিচ্ছে ভোরবেলায়।” ২০০৮ সালে মুদ্রিত কাব্যগ্রন্থ ‘তোমাকে পানকৌড়ি’ থেকে “তোমাকে দেখার আগে সূর্যোদয় দেখি” (‘সুপ্রভাতের বারান্দায়)। খালিদ আহসান যা লিখতেন কষ্টকল্পিত লিখতেন না। যা তাঁর স্বভাবজাত যা তাঁর স্বতঃস্ফূর্ত তাই তিনি লিখতেন। দারুণ গতিতে লিখতে পারতেন প্রেমের কবিতা। জীবনের এক বিপুল ও প্রাণনাময় শক্তি হলো প্রেম সেটা তাঁর কবিতা পাঠ করলে উপলব্ধি করা যায়। ২০১৪ সালে প্রকাশিত তাঁর ‘কলম লিখেছে কবিতা আমি তার প্রথম শ্রোতা’র শিরোনামহীন কবিতাগুলোয় চোখ রাখি। একটা হিম-ঠাণ্ডা স্রোত বয়ে যায় শিরদাঁড়ায়। লিখে রেখে গেছেন কবি খালিদ আহসান “এই মৃত্যু উপত্যকা নিয়ে কবিতা লিখে বনানীতে মাটির নীচে অন্ধকারে- উপরে ল্যাম্পপোস্টের আলোয়- শুয়ে আছে- প্রিয় কবি-প্রিয় বন্ধু-/ আমি তার আগেই যৌবন উলোট-পালোট করে তেড়ে আসবো তোমার স্বর্গের বাগানে। আমাকে বাঁচতে হবে।” হ্যাঁ, স্পষ্টই পড়তে পারা যাচ্ছে, ‘আমাকে বাঁচতে হবে’। লিখেছিলেন ২০১৪-তে, এখন এই ২০২১-এ মৃত্যু তাঁকে আর বাঁচতে দেয় না।
মৃত্যু আমাদের কাউকেই বাঁচতে দেবে না, আমাদের বাঁচতে না দেওয়াটাই মৃত্যুর একমাত্র কাজ। প্রশ্ন, এমন অসময়ে কেন! কবি-চিত্রী খালিদ আহসানের জীবনসঙ্গী আমাদের অতি পরিচিত আইভি হাসান এবং তাঁর আত্মজা ফাইরুজ হাসানের অন্তরে কী শক্তি আছে এমন শোককে সামাল দেওয়ার সেটা ভাবতে গিয়ে বিষন্ন হয়ে পড়ি। জানি না, আমাদের সামনের দিনগুলো আর কি বেদনার ভার আমাদের কাঁধে চাপিয়ে দেওয়ার আয়োজনে রত, যে-ভার এরিমধ্যে কাঁধে এসে জমেছে তা বইবার মত শক্তি যেন আমরা হারিয়ে ফেলছি ক্রমশ। খালিদ ভাই, খালিদ আহসান, আপনি সত্তা থেকে চলে গেলেন স্মৃতির পথের দিকে। তবু, আপনাকে ভোলা অন্তত সম্ভব নয় আমার পক্ষে।