কচুরিপানা দিয়ে নদী দখলের নতুন কৌশল

মীরসরাইয়ে পানি প্রবাহের পথ বন্ধ করে করা হচ্ছে মাছের প্রকল্প

মীরসরাই প্রতিনিধি | বৃহস্পতিবার , ২৫ মে, ২০২৩ at ৫:৪১ পূর্বাহ্ণ

মীরসরাইয়ে ফেনী নদীর পাড় দখল করে দীঘি খননের মহোৎসব চলছে। এতে করে উপজেলার পশ্চিম বাঁশখালী গ্রামে জলাবদ্ধতার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। এদিকে স্থানীয় ক্ষুদ্ধ জনসাধারণ শিগগিরই অবৈধ দীঘিখনন বন্ধে প্রশাসনের সহায়তা কামনা করেছেন।

সরেজমিন দেখা যায়, মুহুরী প্রজেক্ট বাজার থেকে মুহুরী প্রজেক্ট গেট পর্যন্ত বয়ে যাওয়া সড়কের উত্তরাংশে ফেনী ও মুহুরী নদীর মোহনা অংশের বিশাল অংশ দখল করা হয়েছে। গড়ে তোলা হয়েছে মাছের প্রজেক্ট। দখল করা অংশ যে নদীর সেটি যাতে বুঝা না যায় এর জন্য কচুরিপানা ফেলে রাখা হয়েছে। ফলে ছোট হয়ে গেছে ফেনী নদী। নদীর পূর্বাংশে জোরারগঞ্জআজমপুর খালের পানি যাওয়ার পথটিও সরু হয়ে গেছে। বর্ষায় এ খাল দিয়ে মীরসরাই উপজেলার পূর্বাংশের পাহাড়ি পানি বঙ্গোপসাগরে গিয়ে মিশে যায়। এখন পানি প্রবাহের সে পথটি নদী দস্যুদের কারণে ভরাট হয়ে যাচ্ছে।

এ পথ ঘেঁষে উপজেলার ওচমানপুর ইউনিয়নের পশ্চিম বাঁশখালী গ্রামের অবস্থান। গ্রামটি ফেনী নদীর উপকূলে হওয়ায় বর্ষায় পানি প্রবাহের গতি বৃদ্ধি পেলে এই গ্রামের শতাধিক বাড়িঘর পানিতে ভাসে। এবার নতুন করে নদী ভরাটের কারণে আগামী বর্ষায় দীর্ঘমেয়াদী পানিবন্দী হয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন ওই গ্রামবাসী। সম্প্রতি সামান্য বৃষ্টিতে তাহের আহম্মদের বাড়ি, ফয়েজ বঙ ভূঁইয়ার বাড়ি, নাছির উদ্দিনের বাড়ি, হাছান আলী মিয়াজী বাড়িসহ শতাধিক পরিবার পানিতে নিমজ্জিত হয়। তাই তারা দাবি জানানদ্রুত যেন প্রশাসন অবৈধভাবে দখল করা নদীর অংশ উদ্ধারের উদ্যোগ নেয়।

মৎস্য প্রকল্প নির্মাণ তদারকি কাজে নিয়োজিত ঠিকাদার মো. শিমুল জানান, সরকারি খাস জমি কিনা তার জানা নেই। তবে এখানে কামরুল ইসলাম, দৌলতবিবি মসজিদ এবং আরও একজন মালিকের বিএস খতিয়ানভুক্ত জমি রয়েছে বলে শুনেছেন। তিনি প্রকল্পের বাঁধ নির্মাণের তদারকি করছেন। প্রতি চেইন (এক চেইনে ১০০ ফুট) ৮০ হাজার টাকা করে তার সঙ্গে চুক্তি হয়েছে।

এলাকার প্রবীণ মৎস্য চাষী কামরুল ইসলাম বলেন, ‘কে বা কারা আমার নাম প্রচার করেছে জানি না। আমি এখানে মৎস্য প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত নই। আমার বিএস খতিয়ানভুক্ত জমিতে আমাকে না জানিয়ে স্থানীয় কিছু লোক মৎস্য প্রকল্প করছে শুনে তাদের মধ্যে মিরাজকে জিজ্ঞাসা করি। সে আমাকে জানায় আমার যেটুকু জমি তাদের প্রকল্পে পড়বে ইজারা হিসেবে আমার অংশের টাকা দেবে। এর বেশি কিছু জানি না।’

স্থানীয় গ্রামবাসী বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজ উদ দৌলা বলেন, এমনিতে বর্ষা মৌসুমে পানি প্রবাহ বৃদ্ধি পেলে আমাদের বাড়িঘরে পানি ঢুকে পড়ে। ফেনী নদীতে পানি চলাচলের পথ বন্ধ করার কারণে দীর্ঘদিন পানিবন্দী হয়ে পড়ার আশঙ্কা করছি। তাই দ্রুত অবৈধ দখল বন্ধে প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করছি।

মীরসরাই উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি মিজানুর রহমান বলেন, ‘বিষয়টি আমি সরেজমিন তদন্ত করে দেখে আইনগত পদক্ষেপ নেব। নদী দখল বা সরকারি জমি দখল করে পানি প্রবাহের পথ কিছুতেই বন্ধ করতে দেওয়া হবে না। মৎস্য প্রকল্প করতে হলে ভূমি এবং জলাধার আইন মেনে করতে হবে। অন্যথায় ছাড় দেওয়া হবে না।’

পূর্ববর্তী নিবন্ধকৌতুক কণিকা
পরবর্তী নিবন্ধনানা প্রতিবন্ধকতার পর খুলছে রেলের নিয়োগ জট