কক্সবাজার ভূমি অফিসের তহসিলদার গ্রেপ্তার

৫ বছরে অঢেল সম্পদের মালিক

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ২২ জানুয়ারি, ২০২১ at ৫:৩৪ পূর্বাহ্ণ

কক্সবাজারের মহেশখালীর কালারমার ছড়া ভূমি অফিসের তহসিলদার মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন গ্রেপ্তার হয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার নগরীর জিইসি এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করেন দুদক চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়-২ এর উপ-সহকারী কর্মকর্তা মো. শরীফ উদ্দিন। গত বছরের ১০ মার্চ দুদকের করা মামলায় ইতোপূর্বে গ্রেপ্তার হওয়া আসামিদের আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে উঠে আসে জয়নাল আবেদীনের নাম। ওই মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানান মামলার তদন্ত কর্মকর্তা।
দুদকের এক প্রতিবেদনে উঠে আসে, ২০১৬ সালে মহেশখালীর কেরুনতলী ভূমি অফিসে যোগদানের পর থেকে তার অবৈধ সম্পদ বাড়তে থাকে। বিশেষ করে কক্সবাজার জেলায় যেসব ভূমি উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে তার মধ্যে প্রায় ৭ হাজার একর ভূমি অধিগ্রহণ করা হয় কালারমার ছড়া ও কেরুনতলী ইউনিয়ন ভূমি অফিসের অধীনস্থ এলাকায়। ২০১৮ সালের শেষের দিকে এলএ মামলা ০৪/২০১৩-১৪ মূলে ক্ষতিপূরণের টাকা প্রদান প্রক্রিয়া শুরু হলে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে জয়নাল কালারমারছড়া ভূমি অফিসের অতিরিক্ত দায়িত্ব নেন। এরপর শুরু হয় জয়নালের অবৈধ সম্পদ অর্জনের পালা। ২০১৯-২০২০ করবর্ষের তার আয়কর নথি পর্যালোচনা করে দুদকের তদন্ত কর্মকর্তা জানতে পারেন, জয়নাল নিজের নামে ১৪টি দলিল ও স্ত্রী রোকেয়া বেগমের নামে ৩টি দলিলমূলে কৃষি জমি ক্রয় করেন। কক্সবাজার পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ডের পূর্ব পেশকারপাড়ায় তার নিজের বর্তমান বসতবাড়িতে ৪ তলা বাড়িও নির্মাণ করেছেন। কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ সংলগ্ন দুই কোটি টাকায় ২০ শতক জমি ক্রয় করেন। চেইন্দা মৌজায় কাইমারঘোনা মসজিদের পাশে ২০শতক ভাড়া ঘরসহ জমি ক্রয় করেছেন।
অন্যদিকে জয়নালকে যেসব ক্ষতিপূরণ পাওয়া ব্যক্তি ফাইল দেন তাদের বকেয়া থাকা জমির খাজনার সুদ মওকুফ করে দিতেন। আর যারা তাকে ফাইল দেন না, তাদের কাছ থেকে সুদসহ বহুগুণ খাজনা আদায় করেন। তাছাড়া জয়নালের স্ত্রীর নামে ন্যাশনাল ব্যাংক কক্সবাজার শাখায় ২০১৮ সালের আগস্ট থেকে ২০২০ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত তিন দফায় ১৪ লাখ ১০ হাজার ৫৪২ টাকা অবৈধ লেনদেন জমা হয় বলে দুদকের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে।
সূত্র জানায়, গত ২০২০ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি র‌্যাবের অভিযানে ঘুষের ৯৩ লাখ ৬০ হাজার ১৫০ টাকাসহ গ্রেপ্তার হন কক্সবাজার এলএ শাখার সার্ভেয়ার ওয়াশিম খান। ওই ঘটনায় ১০ মার্চ চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়-২ এর উপ-সহকারি পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিন বাদী হয়ে সার্ভেয়র মো. ওয়াসিম খানকে প্রধান আসামী করে মামলা করেন। এরপর গত বছরের ২২ জুলাই কক্সবাজারের শীর্ষ দালাল সেলিম উল্লাহ এবং ৩ আগস্ট দালাল সালাউদ্দিন ও কামরুদ্দিনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ এলএ মামলার মূল নথি, ঘুষ লেনদেনের হিসাব লেখা রেজিস্ট্রার উদ্ধার করা হয়। পরে এসব নথি থেকে সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তা ও লেনদেনের বিষয়টি নিশ্চিত হন দুদকের তদন্ত কর্মকর্তা। পরে চার আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তাদের স্বীকারোক্তিতে কক্সবাজারে ভূমি অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণ লেনদেনে উঠে আসে প্রায় দেড়শ দালালের নাম। তাদের মাধ্যমে কমিশনে জমির ক্ষতিপূরণ ছাড় দিয়েছেন এলএ শাখার কর্মকর্তারা। আসামিদের স্বীকারোক্তিতে ক্ষতিপূরণ লেনদেন কাজে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের বর্তমান ও সাবেক ৫৭ কর্মকর্তা-কর্মচারীর সম্পৃক্ততার তথ্য বেরিয়ে আসে। তন্মধ্যে ৩০জন সার্ভেয়র, ৮ জন কানুনগো, ১০ জন অফিস সহকারী, ৩ জন অতিরিক্ত ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা, ৫ জন ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের (রাজস্ব) নাম।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপ সহকারী পরিচালক শরীফ উদ্দিন বলেন, ‘ গ্রেপ্তার হওয়া জয়নাল সরকারি কর্মচারী হয়েও নিজের নামে তার কর্মস্থলে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে আমমোক্তারনামা নিয়ে টাকা উত্তোলন করে থাকেন। এছাড়া কক্সবাজারে বিভিন্ন ব্যক্তির একাউন্টে ভূমি অধিগ্রহণ শাখা হতে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির চেক ব্যাংকে নগদায়ন হলে কমিশনের ৩০-৫০শতাংশ টাকা উত্তোলন করেন জয়নালের প্রতিনিধি জহিরুল ইসলাম ও আবুল হাসেম। জয়নাল নিজেও ব্যাংক থেকে নগদ টাকা উত্তোলন করে নিজের কিংবা স্ত্রীর একাউন্টে জমা করেন।’

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে নতুন ৬৭ জনের করোনা শনাক্ত
পরবর্তী নিবন্ধনির্বাচনের নামে সরকার ‘অনির্বাচিত প্রতিনিধি’ বাছাই করছে