কক্সবাজার পৌর মেয়রকে তিন ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ

ভূমি অধিগ্রহণে দুর্নীতি

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ১৪ অক্টোবর, ২০২০ at ৫:১৩ পূর্বাহ্ণ

সরকারি প্রকল্পে ভূমি অধিগ্রহণের দুর্নীতি, অনিয়ম, কমিশন বাণিজ্যে জড়িত থাকার অভিযোগে কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র মুজিবুর রহমানকে টানা তিন ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল মঙ্গলবার দুদক চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়-২ এর উপ-পরিচালকের দপ্তরে তাকে এ জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। বিকেল তিনটা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত এ জিজ্ঞাসাবাদ চলে। একইসময়ে কক্সবাজারের জাতীয় এক দৈনিকের প্রতিনিধি সাংবাদিক তোফায়েল আহমদকেও জিজ্ঞাসাবাদ করেন দুদক কর্মকর্তারা।
দুদকের তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মেয়র মুজিবুর রহমানকে ডাকা হয়েছিল। তিনি এসেছিলেন। প্রাথমিকভাবে কিছু তথ্য দিয়েছেন। তবে তিনি কাগজপত্র সাথে আনেননি। এখন উনার বক্তব্যের স্বপক্ষে কাগজপত্র নিয়ে আসার জন্য বলা হয়েছে। পাশাপাশি সাংবাদিক তোফায়েল আহমদকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এলএ অফিসে দালালি ও কমিশন বাণিজ্য করে তোফায়েল শত কোটি টাকার মালিক বনেছেন’।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, গত ১৯ ফেব্রুয়ারি র‌্যাবের অভিযানে ঘুষের ৯৩ লাখ ৬০ হাজার ১৫০ টাকাসহ গ্রেপ্তার হন কক্সবাজার এলএ শাখার সার্ভেয়ার ওয়াশিম খান। তার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া দুদকের মামলার তদন্ত শুরু হলে গত তিনমাস ধরে কক্সবাজার জুড়ে এলএ শাখার দালালদের মধ্যে আতংক তৈরি হয়। ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার হওয়া ৪ আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
তাদের স্বীকারোক্তিতে কক্সবাজার পৌর মেয়র মুজিবুর রহমান, তার ছেলেসহ কক্সবাজারের দুজন সাংবাদিক, কয়েকজন আইনজীবী, উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউপি চেয়ারম্যান, পৌর কাউন্সিলরসহ প্রায় অর্ধশত দালালের নাম উঠে আসে। তাছাড়া আসামিদের স্বীকারোক্তিতে জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ শাখার বর্তমান ও সাবেক প্রায় ৫৭ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর নামে কমিশন বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, মামলার তদন্তে ইতোমধ্যে মেয়র মুজিবুর রহমান, তার ছেলে হাসান মেহেদী রহমান ও শ্যালক মিজানুর রহমানের ব্যাংক হিসেব থেকে প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকা জব্দ করে দুদক। তন্মধ্যে চার কোটি টাকা শ্যালক মিজানুর রহমানের ব্যাংক হিসাব থেকে জব্দ করা হয়। তাছাড়া বেশ কয়েকটি জমির দলিলও মামলায় সম্পৃক্ত করা হয়।
তাছাড়া ওই মামলায় সম্পৃক্ত প্রায় ১৩ জন দালালকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চিঠি দেয় দুদক। তন্মধ্যে কয়েকজন ইতোমধ্যে দুদকের জিজ্ঞাসাবাদে হাজির হলেও কয়েকজন উপস্থিত হননি। সর্বশেষ গতকাল হাজির হন পৌর মেয়র মুজিবুর রহমান। তার সাথে আরিফ নামের এক ব্যক্তিসহ সাংবাদিক তোফায়েল আহমেদ ছিলেন।
জিজ্ঞাবাসাদ শেষে মেয়র মুজিবুর রহমানের সাথে একই গাড়িতে চড়ে দুদক কার্যালয় ত্যাগ করেন সাংবাদিক তোফায়েল। এর আগে উপস্থিত সাংবাদিকদের মুজিবুর রহমান বলেন, ‘দুদক কর্মকর্তারা কিছু কাগজপত্র নিয়ে আসতে বলেছেন। তখন কাগজপত্র অনুযায়ী আমার বক্তব্য দুদককে উপস্থাপন করবো’।
প্রসঙ্গত, গত ১৩ সেপ্টেম্বর দৈনিক আজাদীতে ‘প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের প্রকল্পে জমি অধিগ্রহণে অনিয়ম; নেপথ্যে স্ত্রী-শ্যালকসহ পৌর মেয়র, অনুসন্ধানে দুদক; কক্সবাজার ভূ-উপরস্থ পানি শোধনাগার স্থাপন প্রকল্প’ শীর্ষক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশের পর কক্সবাজারজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধফোনে স্বজনদের সঙ্গে কথা বলতে পারবেন না ওসি প্রদীপ
পরবর্তী নিবন্ধরাসুলের (সা.) রওজা জিয়ারত করা যাবে ১৮ অক্টোবর থেকে