কক্সবাজার উপকূলে বাড়ছে ডলফিনের বিচরণ

কক্সবাজার প্রতিনিধি | শুক্রবার , ১৩ জানুয়ারি, ২০২৩ at ৯:২৬ পূর্বাহ্ণ

সাম্প্রতিককালে বঙ্গোপসাগরের কক্সবাজার উপকূলে ডলফিনের বিচরণ বাড়ছে। এমনকি উপকূলের বেশ নিকটে এসেও খেলা করছে ডলফিনের দল। সোনাদিয়া সৈকত থেকে খালি চোখে এবং পেঁচারদ্বীপ থেকে জেলে বোটে করে প্রায় নিয়মিত এমন দৃশ্য দেখা যায় বলে জানান বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) সমুদ্রবিজ্ঞানী সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দার।

তিনি জানান, গত ৬ দিন আগে এই ইনস্টিটিউটের একদল বিজ্ঞানী পেঁচারদ্বীপ সৈকতের কাছাকাছি বঙ্গোপসাগরে পাঁচটি ডলফিনের একটি দলের বিচরণ লক্ষ্য করেন। এরপর ড্রোন দিয়ে সেসব ডলফিনের ভিডিও এবং স্থির ছবি তুলেন। এর আগে গত ১১ ডিসেম্বর সোনাদিয়া সৈকত পরিদর্শনকালেও একটি বিকল যান্ত্রিক নৌকার পাশে একটি ডলফিনকে বার বার ভেসে ওঠতে দেখা যায়। এই দৃশ্যটি প্রায় অর্ধশত বিজ্ঞানী ছাড়াও একদল সাংবাদিক সচক্ষে অবলোকন করেন।

গত ১৮ নভেম্বর কক্সবাজারের একদল সাংবাদিক জেলে বোটে করে পেঁচারদ্বীপ সংলগ্ন সাগর ভ্রমণকালেও তিনটি ডলফিনের একটি দল দেখতে পান বলে জানান সাংবাদিক ইকরাম চৌধুরী টিপু ও মাঈনুদ্দিন হাসান শাহেদ। তারা জানান, উপকূল থেকে মাত্র এক নটিকেল মাইলের মধ্যেই ডলফিনের বিচরণ দেখা গেছে।

তবে সোনাদিয়ায় দেখা ডলফিনটি উপকূল থেকে মাত্র ২০ ফুটের মধ্যে ঘোরাঘুরি করছিল বলে জানান বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দর। তিনি বলেন, সোনাদিয়ায় দেখা পাওয়া ডলফিনটি বেশ কয়েকটি লাফ দেয় এবং এতে ডলফিনটি শনাক্ত করা সহজ হয়।

এই ডলফিনটি স্পিনার ডলফিন বা ঘূর্ণি হুছুম বলে শনাক্ত করা হয়েছে। ডলফিন স্থানীয়দের কাছে হুছুম মাছ নামে পরিচিত। জেলেদের কাছে হুছুম মাছ দেখা পাওয়া সৌভাগ্যের প্রতীক। এই সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণীকে নিয়ে রয়েছে অনেক উপাখ্যান। ডলফিন মানুষের সাথে খেলা করতে পছন্দ করে। আর এই ডলফিনকে ঘিরে রয়েছে দেশে ব্লু-ট্যুরিজমের বিশাল সম্ভাবনা।

ডলফিনেরা ঝড়ের কবলে পড়ে বোটডুবির শিকার অনেক জেলের প্রাণ বাঁচিয়েছে বলে জানান কক্সবাজার জেলা ফিশিং বোট মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মাস্টার মোস্তাক আহমদ। তিনি জানান, মহেশখালী চ্যানেল থেকে শুরু করে সেন্টমার্টিন উপকূল পর্যন্ত এখন ডলফিনের ঝাঁক দেখা যাচ্ছে। ওয়াইল্ড লাইফ কনজারভেশন সোসাইটির সর্বশেষ জরিপে বঙ্গোপসাগরে ৭ জাতের ডলফিন শনাক্ত হয়েছে।

ডলফিনগুলো হল- শুশুক বা গাঙ্গেয় ডলফিন (বৈজ্ঞানিক নাম প্ল্যাটানিস্তা গাঙ্গেটিকা), ইরাবতি ডলফিন (বৈজ্ঞানিক নাম অর্কেলা ব্রেভিরোস্ট্রিস), গোলাপী ডলফিন (বৈজ্ঞানিক নাম সোসা সাইনেনসিস), বোতল-নাক ডলফিন (বৈজ্ঞানিক নাম টার্সিওপস অ্যাডানকাস), দাগি ডলফিন (বৈজ্ঞানিক নাম স্টেনেলা অ্যাটেনুয়াটা), ঘূর্নি ডলফিন (বৈজ্ঞানিক নাম স্টেনেলা লংগিরোস্ট্রিস) ও খর্বদাতি ডলফিন (বৈজ্ঞানিক নাম স্টেনো ব্রেডেনেসিস)।

ওয়াইল্ড লাইফ কনজারভেশন সোসাইটির (ডাব্লিউসিএস) কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ ড. জাহাঙ্গীর আলম জানান, তাদের সংস্থার সর্বশেষ জরিপে বঙ্গোপসাগরে ৭ জাতের ১৬ হাজার ডলফিন শনাক্ত হয়েছে। এরমধ্যে প্রায় ৬ হাজার রয়েছে ইরাবতি ডলফিন। ইরাবতি ডলফিন বিশ্বে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় বাংলাদেশে।

ডলফিন মানুষের মতোই স্তন্যপায়ী প্রাণী, যারা বাচ্চা প্রসব করে এবং সন্তানকে বুকের দুধ পান করায়। তবে ডলফিন সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণী, যারা সিটাসিয়ান নামে পরিচিত। আমাদের বঙ্গোপসাগরে মোট ১৩ জাতের স্তন্যপায়ী প্রাণী শনাক্ত হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিদ্যুতের দাম বাড়ল ৫%
পরবর্তী নিবন্ধএবার বাঁচবে ইছামতী?