কক্সবাজারে ১৪ লাখ ইয়াবা পাচার মামলায় তিনজনের যাবজ্জীবন

ইয়াবা বিক্রির ১ কোটি ৭১ লক্ষ টাকা রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত

কক্সবাজার প্রতিনিধি | বৃহস্পতিবার , ১৬ মার্চ, ২০২৩ at ১০:৩৫ অপরাহ্ণ

কক্সবাজারে ইয়াবা বিক্রির ১ কোটি ৭০ লক্ষ ৬৮ হাজার ৫০০ নগদ টাকাসহ ১৪ লাখ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার মামলায় ৩ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত।

যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামীরা হলো কক্সবাজার শহরের ২নং ওয়ার্ড উত্তর নূনিয়াছরার নজরুল ইসলাম ও সোলতানা রাজিয়া বেগমের ছেলে জহুরুল ইসলাম প্রকাশ ফারুক (৩৭), একই এলাকার মোজাফফর আহমদ ও হাজেরা খাতুনের ছেলে নুরুল আমিন প্রকাশ বাবু (৫৫) এবং আবুল হোসেন ও হাসনা বানু’র ছেলে আবুল কালাম (৫০)। রায় ঘোষণার সময় ৪ আসামী আদালতে উপস্থিত ছিল।

একইসাথে আদালত তিন সাজাপ্রাপ্ত আসামীর মধ্যে জহুরুল ইসলাম প্রকাশ ফারুক ও নুরুল আমিন প্রকাশ বাবুকে ৫ লক্ষ টাকা করে অর্থদণ্ড এবং আবুল কালামকে ২ লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড ও অর্থদণ্ড অনাদায়ে প্রত্যেককে আরো ১ বছর করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করে।

রায়ে আসামী আবুল কালামের ছেলে শেখ আবদুল্লাহ(১৯)কে বেকসুর খালাস প্রদান করা হয় এবং উদ্ধারকৃত ইয়াবা বিক্রির নগদ ১ কোটি ৭০ লক্ষ ৬৮ হাজার ৫০০ টাকা রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করার আদেশ দেওয়া হয়।

আজ বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল এই চাঞ্চল্যকর মামলাটির রায় ঘোষণা করেন। এটি দেশে এ যাবতকালের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ ইয়াবা ট্যাবলেট ও নগদ টাকা উদ্ধারের ঘটনা।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী পিপি ফরিদুল আলম ফরিদ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, রায়ে রাষ্ট্রপক্ষ সন্তুষ্ট।
মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, ২০২১ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি বেলা ২টার দিকে কক্সবাজার জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) একটি দল অভিযান চালিয়ে সদর উপজেলার চৌফলদন্ডী-খুরুশকুল সংযোগ সেতুর উত্তরে ভারুয়াখালী খাল থেকে একটি কাঠের তৈরি বোট আটক করে। এসময় বোট থেকে জহুরুল ইসলাম প্রকাশ ফারুক ও নুরুল আমিন প্রকাশ বাবুকে গ্রেফতার করা হয় এবং রোহিঙ্গা সৈয়দ আলম পালিয়ে যায়।

এরপর ধৃত আসামীদের দেখানো মতে উক্ত বোট তল্লাশি করে ১৪ লক্ষ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়। পরে আসামীদ্বয়ের স্বীকারোক্তি মতে একইদিন বিকাল ৫টা ৩৫ মিনিটের দিকে কক্সবাজার শহরের উত্তর নুনিয়া ছড়ায় আসামী ফারুক ও তার এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে ২টি বস্তাভর্তি ইয়াবা বিক্রির নগদ ১ কোটি ৭০ লক্ষ ৬৮ হাজার ৫০০ টাকা উদ্ধার করা হয়। সেখান থেকে আসামী আবুল কালাম এবং তার ছেলে শেখ আবদুল্লাহকে গ্রেফতার করা হয়।

এ ঘটনায় কক্সবাজারের ডিবি পুলিশ (গোয়েন্দা বিভাগ) এর ওসি শেখ মোহাম্মদ আলী বাদী হয়ে জহুরুল ইসলাম প্রকাশ ফারুক, নুরুল আমিন প্রকাশ বাবু, আবুল কালাম ও শেখ আবদুল্লাহ এবং অজ্ঞাত আরো ৭/৮ জনকে আসামী করে কক্সবাজার সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

এরপর ২০২২ সালের ১২ ডিসেম্বর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) কক্সবাজার সদর থানার এসআই এস. এম. শাকিল হাসান ৩২ জনকে স্বাক্ষী করে আমলী আদালতে মামলাটির চার্জশীট (অভিযোগপত্র) দাখিল করেন। চলতি বছরের ২২ জানুয়ারি মামলাটি বিচারের জন্য কক্সবাজারের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল এর আদালতে চার্জ গঠন (অভিযোগ) করা হয়।

তিনি জানান, আদালত মামলাটির ১৯ জন স্বাষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করে। এরপর আসামীপক্ষে স্বাক্ষীদের জেরা, আলামত প্রদর্শন, রাসায়নিক পরীক্ষার রিপোর্ট যাচাই, আসামীদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ, যুক্তিতর্ক সহ বিচারের সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে মামলাটি রায় ঘোষণার জন্য বুধবার দিন ধার্য্য করা হয়।

পরে রায়ের তারিখ একদিন পিছিয়ে দিয়ে আজ বৃহস্পতিবার মামলাটির রায় ঘোষণা করেন কক্সবাজারের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপ্রেমিকার বিয়ের খবর শুনে ঘর থেকে বের হয়ে লাশ
পরবর্তী নিবন্ধফটিকছড়িতে বেত্রাঘাতে জখম এসএসসি পরীক্ষার্থী