কংসারী হালদার : তেভাগা আন্দোলনের নেতা

| সোমবার , ২৯ আগস্ট, ২০২২ at ৬:২৮ পূর্বাহ্ণ

কংসারী হালদার। তেভাগা আন্দোলনের খ্যাতনামা নেতা ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। কংসারী হালদার দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলার ডায়মন্ড হারবার আনধারিয়া গ্রামে ১৯১০ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম নরেন্দ্রকৃষ্ণ হালদার আর মাতার নাম যশোদারাণী হালদার। প্রথমে পড়াশোনা করেন মাথুর স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত। এরপর ১৯৩০ সালে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক পাস করেন সরিষা হাই স্কুল হতে। কলকাতার রিপন কলেজ (বর্তমানের সুরেন্দ্রনাথ কলেজ) হতে আই.এ. এবং ১৯৩৩ সালে বঙ্গবাসী কলেজ হতে বি.এ. ও ১৯৩৫ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় হতে এম.এ. পাস করেন। ১৯৩০ সালে ছাত্রাবস্থায়তেই লবণ আইন ভাঙার আন্দোলন বা লবণ সত্যাগ্রহ তথা সিভিল ডিসওবেডিয়েন্ট মুভমেন্ট আইন অমান্য করে কারাবাস করেন। প্রথম দিকে কংগ্রেসের সমর্থক হলেও পরে ১৯৪১ সালে তদানীন্তন কালে বেআইনি ঘোষিত কমিউনিস্ট দলে যোগ দেন। পড়াশোনা শেষে তিনি স্থানীয় আঁধার-মাণিক হাই স্কুলে শিক্ষকতা করেন। তিরিশের দশকে কাকদ্বীপ এলাকায় কৃষক অসন্তোষ দেখা দেয়। মূলতঃ কাকদ্বীপ-সুন্দরবনের বিস্তৃত এলাকার অজ্ঞ, অশিক্ষিত বঞ্চিত, জমিদার ও জোতদার দ্বারা শোষিত কৃষককুল তথা জনগোষ্ঠী পৌণ্ড্র সম্প্রদায়ভুক্ত ও প্রকৃতই অবহেলিত ছিল। কংসারী হালদার ছিলেন ওই পৌণ্ড্র সম্প্রদায়ের মানুষ। ১৯৪০ সালেই তাদের নেতৃত্ব দিতে এগিয়ে আসেন তিনি। এর সুবাদে জীবদ্দশাতেই কিংবদন্তি হয়ে ওঠেন। বাংলায় কৃষি উৎপাদনের দুই তৃতীয়াংশ দাবির সমর্থনে কমিউনিস্টদের সংঘটিত বর্গা তথা ভাগচাষিদের আন্দোলনই ছিল তেভাগা আন্দোলন। সে আন্দোলনে পুলিশের সঙ্গে মুখোমুখি গণ-সংঘর্ষে বহু আন্দোলনকারী নিহত হয়। ১৯৪৮ সালের অক্টোবর মাসে কাকদ্বীপের চন্দনপিঁড়ে গ্রামের অহল্যা নামে এক সন্তানসম্ভবা কৃষকবধূ পুলিশের গুলিতে প্রাণ দেন। চন্দনপিঁড়ির মামলায় কংসারী হালদারের প্রাণদণ্ডের আদেশ হলে তিনি ‘মধু’ ছদ্মনামে আত্মগোপন করেন। ১৯৫১ সালে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির উপর নিষেধাজ্ঞা উঠে যায়। দীর্ঘদিন আত্মগোপন অবস্থাতেই ১৯৫২ সালে প্রথম লোকসভার নির্বাচনে ডায়মন্ড হারবার কেন্দ্র হতে তফশিলি প্রার্থীর জন্য সংরক্ষিত আসনে কমিউনিস্ট পার্টির প্রার্থী হিসাবে জয়ী হন। এদিকে ১৯৬০ সালে স্পেশাল ট্রাইব্যুনালের বিচারে তাঁর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। পরে ১৯৬২ সালে ১০ এপ্রিল তারিখের কলকাতা উচ্চ আদালত (কলিকাতা হাইকোর্ট)-এর রায়ে তিনি মুক্তি পান। ১৯৬৭ সালের লোকসভার নির্বাচনে মথুরাপুর কেন্দ্র থেকে নির্বাচিত হন। ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দে কংগ্রেস সমর্থিত সি পি আই প্রার্থী হিসাবে সোনারপুর কেন্দ্র থেকে বিধানসভার সদস্যও হয়েছিলেন। কংসারী হালদার ১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দে ২৯ আগস্ট ৮৭ বৎসর বয়সে কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএই দিনে
পরবর্তী নিবন্ধসর্বত্র নারী নির্যাতন প্রতিরোধ গড়ে উঠুক