ওসি প্রদীপের সকল পদক বাতিলের দাবি

কক্সবাজার প্রতিনিধি | সোমবার , ১০ জানুয়ারি, ২০২২ at ৬:৪৫ পূর্বাহ্ণ

সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলায় আদালতে যুক্তিতর্ক চলাকালে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীগণ মেজর সিনহাকে সুপরিকল্পিত ভাবে হত্যা করা হয়েছে উল্লেখ করে পুলিশের সাবেক ওসি প্রদীপের সকল পদক বাতিলের দাবি জানান। অন্যদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবীর দাবি, রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা সন্দেহাতীতভাবে মামলার অভিযোগ প্রমাণে ব্যর্থ হয়েছেন।
সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলায় রোববার থেকে শুরু হওয়া টানা ৪ দিনের যুক্তিতর্ক শুরুর প্রথমদিন রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামি পক্ষের আইনজীবীগণ মামলার অভিযোগ বিষয়ে পাল্টাপাল্টি মন্তব্য করেন। কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইলের আদালতে আগামী ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত এ যুক্তিতর্ক চলবে।
রোববার যুক্তিতর্ক শুরুর প্রথমদিন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী পাবলিক প্রসিকিউটর পিপি ফরিদুল আলম, বাদীপক্ষের আইনজীবী এডভোকেট মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর, এডভোকেট মোহাম্মদ মোস্তফা এবং সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী সৈয়দ রেজাউর রহমান আদালতে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন। সকাল সোয়া ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত চলে মামলাটির যুক্তিতর্ক।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেন, সিনহাকে সুপরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। পরস্পর যোগসাজশে এই হত্যাকাণ্ডটি হয়। হত্যাকাণ্ডের পর আসামিরা আলামত নষ্ট করে ফেলেছিল। আদালতে মেজর সিনহা হত্যাকাণ্ডের তথ্য প্রমাণ দাখিল করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, আসামি প্রদীপ এবং লিয়াকত পরিকল্পিতভাবে এই হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয়। হত্যাকাণ্ডের আগে বাহারছড়া পুলিশ ক্যাম্প এবং টেকনাফ থানায় ওসি প্রদীপ ও পরিদর্শক লিয়াকত সাধারণ ডায়েরি করেন। ডায়েরিতে তারা হত্যাকাণ্ডের ঘটনাস্থলে আসার কারণ বর্ণনা দিয়েছিলেন।
আদালত থেকে বেরিয়ে সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী পিপি ফরিদুল আলম সাংবাদিকদের আরো বলেন, মেজর সিনহা হত্যা মামলার অভিযুক্ত আসামি টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ তথ্য গোপন করে সম্পূর্ণ প্রতারণার মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় পুরস্কার পিপিএম এবং বিপিএম হাতিয়ে নিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে চাকুরিকালীন বিভিন্ন অভিযোগ ছিল। আদালতে আমরা তার সকল পদক বাতিলের দাবি জানিয়েছি।
অপরদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী রানা দাশগুপ্ত বলেন, রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা সাক্ষ্য প্রমাণে আসামিদের অপরাধ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণে ব্যর্থ হয়েছেন। সকাল সোয়া ১০ টার দিকে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী পিপি ফরিদুল আলমের যুক্তিতর্কের মাধ্যমে আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়।
এর আগে সকাল নয়টার দিকে আসামি ওসি প্রদীপসহ এ মামলার ১৫ জন আসামিকে জেলা কারাগার থেকে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে এনে হাজির করা হয়।
২০২০ সালের ৩১ জুলাই ঈদুল আযহার আগের রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের টেকনাফের বাহারছড়ার এপিবিএন চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে খুন হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা রাশেদ খান। এ ঘটনার ৫দিন পর ৫ আগস্ট নিহত সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়ে বাহারছড়া পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের তৎকালীন ইনচার্জ পরিদর্শক লিয়াকত আলীকে প্রধান আসামি এবং টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ নয় পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করেন। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পান র‌্যাব-১৫ এর সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ খায়রুল ইসলাম। চার মাসের বেশি সময় ধরে চলা তদন্তের পর একই বছরের ১৩ ডিসেম্বর ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট জমা দেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। অভিযোগপত্রে সিনহা হত্যাকাণ্ডকে একটি ‘পরিকল্পিত ঘটনা’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। গত ২৭ জুন ১৫ আসামির বিরুদ্ধে মামলাটির বিচারের জন্য অভিযোগ গঠন করা হয়। এরপর গত ২৩ আগস্ট থেকে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমালের আদালতে সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণ এবং জেরা শুরু হয়ে গত ১ ডিসেম্বর শেষ হয়। যেখানে ৬৫ জন সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়েছেন। সর্বশেষ গতকাল রোববার থেকে আদালতে ৪ দিনের যুক্তিতর্ক পেশ শুরু হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসাবেক ডিআইজি প্রিজন্স পার্থ গোপালের ৮ বছরের সাজা
পরবর্তী নিবন্ধকৌতুক কণিকা