ওসি প্রত্যাহার, চারজনের রিমান্ড

নড়াইলে অধ্যক্ষ লাঞ্ছিত

| সোমবার , ৪ জুলাই, ২০২২ at ৮:০৩ পূর্বাহ্ণ

ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে নড়াইল সদর উপজেলায় মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে লাঞ্ছিত করা এবং কলেজে হামলার ঘটনায় গ্রেপ্তার ৪ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে পেয়েছে পুলিশ। গতকাল দুপুরে বিচারিক হাকিম আদালতে আসামিদের হাজির করে রিমান্ড আবেদন করা হলে বিচারক আমাতুল মোর্শেদা তা মঞ্জুর করেন বলে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সঞ্জিত কুমার বসু জানান। খবর বিডিনিউজের।
এদিকে নড়াইল সদর থানার ওসি মোহাম্মদ শওকত কবীরকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তিনি মির্জাপুর ইউনাইটেড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্য ছিলেন। শনিবার রাতে তদন্ত কমিটির প্রধান জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিবেদন দাখিল করার সময় ওসি শওকতও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। রাতেই খুলনা রেঞ্জের উপ-মহাপরিদর্শক
(ডিআইজি) কার্যালয় থেকে ওসিকে প্রত্যাহারের নির্দেশ দেওয়া হয় বলে নড়াইল জেলার পুলিশ সুপার প্রবীর কুমার রায় জানান।
তবে কী কারণে ওসিকে প্রত্যাহার করা হয়ে হয়েছে এ বিষয়ে কিছু জানাতে পারেননি পুলিশ সুপার। রাতে শওকত কবীরকে সদর থানা থেকে খুলনায় রেঞ্জ রিজার্ভ ফোর্সে সংযুক্ত করা হয়েছে। থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ মাহামুদুর রহমানকে ওসির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সঞ্জিত কুমার বসু বলেন, চার আসামিকে সকাল ১০টায় জেলা কারাগার থেকে সদর আমলি আদালতে আনা হয়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মাহমুদুর রহমান প্রত্যেক আসামির পাঁচদিন করে রিমান্ড আবেদন করেন। শুনানি শেষে বিচারক প্রত্যেকের তিন দিন করে রিমান্ডের আবেদন মঞ্জুর করেন। আসামিরা হলেন মির্জাপুরের সৈয়দ রিমন আলী, মির্জাপুর বাজারের মোবাইল ফোন ব্যবসায়ী শাওন খান, মধ্যপাড়ার মো. মনিরুল ইসলাম ও রহমত উল্লাহ রনি।
স্থানীয়দের ভাষ্য অনুযায়ী, গত ১৭ জুন মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের এক ছাত্র ভারতের বিজেপি নেত্রী নূপুর শর্মার বিতর্কিত এক বক্তব্য নিয়ে ফেইসবুকে পোস্ট দেওয়ার পরদিন কলেজে গেলে কিছু মুসলমান ছাত্র তাকে ওই পোস্ট মুছে ফেলতে বলেন। এ নিয়ে উত্তেজনা দেখা দিলে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস পুলিশে খবর দেন। এর মধ্যে ‘অধ্যক্ষ ওই ছাত্রের পক্ষ নিয়েছেন’ এমন কথা রটানো হলে উত্তেজনা বাড়তে থাকে। অধ্যক্ষ ও দুজন শিক্ষকের মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেওয়া হয়। পুলিশ গেলে স্থানীয়দের সঙ্গে তাদেরও সংঘর্ষ বাধে।
ওই সময় ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে কলেজের ছাত্র ও স্থানীয়রা ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসের গলায় জুতার মালা পরিয়ে দেয়। ওই ঘটনার কিছু ছবি ও ভিডিও ফেইসবুকে আসে, যাতে পুলিশের উপস্থিতিও দেখা যায়।
এ ঘটনায় ২৫ জুন মির্জাপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই শেখ মোরছালিন বাদী হয়ে অজ্ঞাতপরিচয় ১৭০ থেকে ১৮০ জনকে আসামি করে নড়াইল সদর থানায় মামলা করেন। তার পরই আসামিদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ ঘটনার পর জেলা প্রশাসন এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) পক্ষ থেকে দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। শনিবার রাতে তদন্ত কমিটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমানের কাছে প্রতিবেদনটি জমা দেয়।
তদন্ত কমিটির প্রধান জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জুবায়ের বলেন, আমরা ভিডিও ফুটেজ, এলাকার জনসাধারণের বক্তব্য পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিচার বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদন তৈরি করেছি। তবে তদন্ত প্রতিবেদনের বিষয়বস্তু সাংবাদিকদের কাছে জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন তিনি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবাবুল আক্তারের দুই সন্তানকে আজ জিজ্ঞাসাবাদ করবে পিবিআই
পরবর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে আরও একজনের মৃত্যু শনাক্ত ৫০