ওষুধী গুণের কারণে হলেও বাঁচিয়ে রাখতে হবে রাজকাঁকড়াকে

কক্সবাজারে আলোচনা সভায় বক্তারা

কক্সবাজার প্রতিনিধি | বুধবার , ২১ জুন, ২০২৩ at ৫:১৩ পূর্বাহ্ণ

অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত গুরুত্বের কারণে দেশের মূল্যবান সম্পদ রাজকাঁকড়া। আমাদের বঙ্গোপসাগরে দুই জাতের রাজকাঁকড়া দেখা যায়। এদের ডিম পাখি ও মাছের পুষ্টিকর খাদ্য। কিন্তু প্রতিবছর প্রজননকালে এরা যখন উপকূলের কাছাকাছি আসে, তখন মাছধরার বিভিন্ন জালে আটকা পড়ে প্রতিদিন হাজার হাজার রাজকাঁকড়া মারা যায়। যাদুকরী ওষুধী গুণের কারণে হলেও বিশ্ববিখ্যাত এই প্রাণীটিকে সগর্বে টিকিয়ে রাখতে হবে।

চতুর্থ আন্তর্জাতিক রাজকাঁকড়া দিবস উপলক্ষে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে হর্সশো ক্র্যাব কনজার্ভেশন গ্রুপ, বাংলাদেশ আয়োজিত ‘রাজকাঁকড়াকে বাঁচাই দেশের সমৃদ্ধি বাড়াই’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় বক্তারা এ কথা বলেন।

হর্সশো ক্র্যাব কনজার্ভেশন গ্রুপ, বাংলাদেশ এর ফাউন্ডার চেয়ারম্যান ও টিম লিডার আহমদ গিয়াসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় গ্রুপ মেম্বার এবং মিডিয়াকর্মী আবদুল আজিজ, মাঈনুদ্দিন হাসান সাহেদ, তারেকুর রহমান, পূর্ণবর্ধন বড়ুয়া, ব্যবসায়ী শাহেদ আলম বাচ্চু, জেলা যুবমৈত্রী সভাপতি বেলাল হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক জিকু পাল, মৎস্যজীবী মোহাম্মদ হোসেন, আবদুল মতলব, নুর মোহাম্মদ, হোসন আহমদ, আবু তাহের, ইলিয়াছ প্রমুখ অংশ নেন। এর আগে দিবসটি উপলক্ষে একটি শোভাযাত্রা দরিয়ানগর ও শুকনাছড়ি সৈকত প্রদক্ষিণ করে।

সভায় বলা হয়, চিকিৎসা শাস্ত্রে রাজকাঁকড়ার নীল রক্ত এক যাদুকরী বৈপ্ল্লবিক পরিবর্তন এনেছে। এছাড়া এর শরীরের পেছনে থাকা ছোট্ট লেজটি দিয়ে তৈরি করা হয় ক্যান্সারের মহা ওষুধ। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে একেকটি রাজ কাঁকড়ার দাম পনের থেকে বিশ লাখ টাকা। এর এক গ্যালন রক্তের দাম অন্তত ৭০ হাজার মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় হয় ৭০ লাখ টাকার বেশি। সম্প্রতি করোনা ভ্যাকসিন তৈরিতেও রাজ কাঁকড়ার নীল রক্ত ব্যবহৃত হচ্ছে। ফলে বিশ্বব্যাপী প্রাণীটি বিলুপ্তির ঝুঁকিতে পড়েছে। প্রাণীটিকে বাঁচাতে ২০২০ সালের ২০ জুন থেকে এই দিবসটি আন্তর্জাতিকভাবে পালন করা হচ্ছে।

এক সময় দেশের বঙ্গোপসাগর উপকূলে রাজকাঁকড়ার ব্যাপক উপস্থিতি দেখা যেত। কিন্তু ধীরে ধীরে এর প্রাচুর্য কমে আসে। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন উপকূলের নদী ও নদীমোহনায় অবৈধভাবে বসানো বিহিন্দি জালে প্রতিদিন হাজার হাজার রাজকাঁকড়া আটকা পড়ার পর মারা পড়ছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, কক্সবাজারসহ বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলে এই প্রাণীটি ‘দিয় কিঁয়ারা’ বা দৈত্য কাঁকড়া নামেই সমধিক পরিচিত। আন্তর্জাতিক প্রকৃতি সংরক্ষণ সংস্থা আইইউসিএন এর পর্যবেক্ষণেও বাংলাদেশের পরিবেশে ঝুঁকির হার বিবেচনায় প্রাণীটির অবস্থান লাল তালিকায়। বাংলাদেশের ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনের সর্বশেষ তফসিলে গতবছর রাজকাঁকড়াকে সংরক্ষিত ঘোষণা করা হয়েছে। অর্থাৎ আইন অনুসারে এই প্রজাতির প্রাণী শিকার, বিক্রয় ও বিপণন বাংলাদেশের আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তবে এই আইনটির প্রয়োগ করা হচ্ছে না অভিযোগ করেন ‘হর্সশো ক্র্যাব কনজার্ভেশন গ্রুপ, বাংলাদেশ’ এর স্বেচ্ছাসেবীরা। হর্সশো ক্র্যাবের রক্ত থেকে বিশেষ প্রক্রিয়ায় তৈরি করা হয় লিমুলাস অ্যামিবায়োসাইট লাইসেট যা সংক্ষেপে (এলএএল) নামে পরিচিত। ভ্যাকসিনসহ মানবদেহের পেশী বা শিরায় প্রয়োগের জন্য যেকোনো ওষুধ প্রস্তুতকালে কিংবা কৃত্রিম অঙ্গ বা যন্ত্র প্রতিস্থাপন করতে হলে মানব দেহে এসব পুরোপুরি নিরাপদ কীনা তা এলএএল টেস্ট এর মাধ্যমে পরীক্ষা করে দেখা হয়। আমেরিকা, চায়না, ভারতসহ বিভিন্ন দেশে হর্সশো ক্র্যাব থেকে বাণিজ্যিকভাবে এলএএল উৎপাদন ও বাজারজাত করা হয়। অবশ্য এশিয়ান হর্সশো ক্র্যাব থেকে উৎপাদিত লাইসেট টিএএল নামে বাজারে পরিচিত।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসালাহউদ্দিনের ইন্ধনে এমপি জাফরের বিরুদ্ধে দলেরই একটা অংশের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ
পরবর্তী নিবন্ধমাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের দাবি