করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রনের বিস্তার ঠেকাতে ভ্রমণ সতর্কতা জারির পাশাপাশি সব ধরনের সমাবেশে জনসমাগম সীমিত করার সুপারিশ করেছে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। কমিটির প্রধান অধ্যাপক মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ গতকাল রোববার তাদের সভা শেষে বিডিনিউজকে এ তথ্য জানান। এছাড়া ওমিক্রন নিয়ে দেশের প্রবেশপথগুলোতে সতর্কবার্তা দেওয়ার কথা জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। খবর বিডিনিউজের।
গত সপ্তাহে দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম শনাক্ত হওয়া করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন ইতোমধ্যে বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা একে ‘ভ্যারিয়েন্ট অব কনসার্ন’ শ্রেণিভুক্ত করেছে। এশিয়া, ইউরোপ ও আমেরিকার অনেক দেশ ওমিক্রনের বিস্তার ঠেকাতে দক্ষিণ আফ্রিকাসহ ওই অঞ্চলের কয়েকটি দেশের যাত্রীদের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশেরও একই ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া উচিত বলে মনে করছে পরামর্শক কমিটি।
সভা শেষে পাঠানো কমিটির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এ সমস্ত দেশ এবং যে সমস্ত দেশে সংক্রমণ ছড়িয়েছে সে সমস্ত দেশ হতে যাত্রী আগমন বন্ধ করার সুপারিশ করা হচ্ছে। কেউ গত ১৪ দিনের মধ্যে এসব দেশে ভ্রমণ করে থাকলে তাদের বাংলাদেশে ১৪ দিন প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে রাখা এবং কোভিড সংক্রমণ ধরা পড়লে আইসোলেশনে রাখার কথা বলা হয়েছে সুপারিশে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দেশের প্রতিটি প্রবেশ পথে স্ক্রিনিং-পরীক্ষা, সামাজিক সুরক্ষা সংক্রান্ত ব্যবস্থা আরও কঠোরভাবে পালন করা (স্কুল কলেজসহ), চিকিৎসা ব্যবস্থা শক্তিশালী করা ও বিভিন্ন (রাজনৈতিক, সামাজিক, ধর্মীয়) সমাবেশে জনসমাগম সীমিত করার সুপারিশ করা হলো। পাশাপাশি কোভিড-১৯ পরীক্ষায় জনগণকে উৎসাহিত করার জন্য বিনামূল্যে পরীক্ষা করার সুযোগ আবার ফিরিয়ে আনার সুপারিশ করেছে পরামর্শক কমিটি।
অধ্যাপক শহীদুল্লাহ বলেন, পৃথিবীর বেশ কিছু দেশে ওমিক্রন ছড়িয়ে গেছে। সেই হিসেবে আমাদের মনে হয় বাংলাদেশেও এ বিষয়ে প্রস্তুতির ব্যাপার আছে। পৃথিবীর অনেক দেশ সাউথ আফ্রিকাসহ কয়েকটি দেশের সাথে যোগাযোগ বন্ধ করেছে। আমরা মনে করি আমাদেরও এখন সেটি করা উচিত।
গত কিছুদিনে দেশে সংক্রমণ কম থাকায় স্বাস্থ্যবিধি মানা থেকে ‘খুব ঢিলেঢালা ভাব’ দেখা যাচ্ছে জানিয়ে এক্ষেত্রেও কড়াকড়ি বাড়ানোর পক্ষে মত দিচ্ছেন কমিটির সভাপতি। তিনি বলেন, দেশে এখন যেভাবে জনসমাগম হচ্ছে, স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করা হচ্ছে, তাতে সংক্রমণ আবার বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এটা খুবই উদ্বেগের বিষয়, যদি আমরা আগের মতোই সবকিছু করি তাহলে সংক্রমণ অবশ্যই বেড়ে যাবে। সে কারণে আমরা বেশি জোর দিয়েছি বিভিন্ন সমাবেশে লোকসমাগম সীমিত আকারে করা।
সভা শেষে কমিটির সদস্য সচিব স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, ওমিক্রন নিয়ে বৈশ্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এখন পর্যন্ত যে তথ্য আছে, তাতে এ ভ্যারিয়েন্ট দ্রুত ছড়ায়। কেইস ফ্যাটালিটি বা সিভিয়ারিটি এখনও খুব বেশি না। কিন্তু আমি বলব যে ভ্যারিয়েন্টই হোক, স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো বিকল্প নাই। যত ভ্যারিয়েন্টই আসুক, প্রতিরোধের উপায় হলো স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা। সে জায়গাটায় মনে হয় আমরা উপেক্ষা করছি। যদি ভ্যাকসিন নিই এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলি, তাহলে যে ভ্যারিয়েন্টই আসুক, আমাদের অসুবিধা হবে না।
দেশের সব প্রবেশপথে সতর্কবার্তা
করোনার নতুন ধরন ওমিক্রন নিয়ে দেশের প্রবেশপথগুলোতে সতর্কবার্তা দেওয়ার কথা জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. মো. নাজমুল ইসলাম গতকাল এক বুলেটিনে বলেন, নতুন এই ভ্যারিয়েন্ট প্রতিরোধে সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে স্বাস্থ্য বিভাগ।
তিনি বলেন, দক্ষিণ আফ্রিকায় পাওয়া এ ভ্যারিয়েন্টকে ইতিমধ্যে ভ্যারিয়েন্ট অব কনসার্ন হিসেবে চিহ্নিত করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এ বিষয়ে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিচ্ছে। আমরাও পোর্ট অব এন্ট্রিগুলোয় সতর্কবার্তা দিয়েছি। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলছি। আমাদের জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি বিভিন্ন পর্যায়ে পাওয়া তথ্যগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখছেন। তারা সভা করছেন। সেই সভা থেকে দেশের মানুষকে নিরাপত্তা দিতে যেসব কাজ করা দরকার তার নিতে যাচ্ছি।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী শনিবার বলেছিলেন, দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে যোগাযোগ এখনই স্থগিত করা হচ্ছে। এর মধ্যে বতসোয়ানা, বেলজিয়াম, হংকং ও ইসরায়েলে শনাক্ত হয়েছে এই নতুন ভ্যারিয়েন্ট। বলা হচ্ছে, চীনের উহানে আবির্ভূত হওয়ার পর এই ভাইরাসের যতগুলো ধরন এখন পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছে, তার মধ্যে ওমিক্রনেই জিন বিন্যাসে পরিবর্তন এসেছে সবচেয়ে বেশি। এর মানে করোনার যেসব টিকা এ পর্যন্ত তৈরি হয়েছে, সেগুলো ওমিক্রনের ক্ষেত্রে কার্যকর নাও হতে পারে। আবার জিন বিন্যাসে পরিবর্তনের কারণে এ ভাইরাস অনেক বেশি দ্রুত ছড়ানোর ক্ষমতা রাখতে পারে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, করোনার নতুন ধরন কতটা প্রভাব ফেলতে পারে সেটা বুঝতে কয়েক সপ্তাহ সময় লাগবে।