ওদের এগিয়ে যাওয়ার গল্প

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি | মঙ্গলবার , ৭ মার্চ, ২০২৩ at ৫:১২ পূর্বাহ্ণ

বাধা ডিঙিয়ে পাহাড়ে নেতৃত্ব দিচ্ছে নারীরা। প্রশাসন, জনস্বাস্থ্য, খাদ্যসহ বিভিন্ন বিভাগে প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে। পাহাড়ের ভৌগোলিক ভিন্নতা, দুর্গম অঞ্চলে নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে সরকারি দায়িত্ব সাফল্যের সাথে পালন করছেন নারী কর্মকর্তারা। নারী হিসেবে আলাদা প্রতিবন্ধকতা অনুভব করেন না বলে জানান পাহাড়ে শীর্ষ দায়িত্বে থাকা ৪ নারী কর্মকর্তা।

নাজমুন আরা সুলতানা : নাজমুন আরা সুলতানা খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ২০১০ সালে বিসিএস ইকোনমিক ক্যাডার হিসেবে চাকরিতে যোগ দেন। ২০১৯ সালে প্রশাসন সার্ভিস ক্যাডারে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে যোগ দেন। ২০২০ সালের এপ্রিলে রাঙামাটির কাউখালি উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে যোগ দান করেন। ২০২২ সালের অক্টোবরে খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসনে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হিসেবে বদলি হন উপসচিব পদমর্যদার এই কর্মকর্তা।

তিনি বলেন, পাহাড়ের প্রতি আমার অন্যরকম একটা ভালোবাসা কাজ করে। কাউখালিতে ইউএনও হিসেবে দায়িত্ব পালন করার সময় পাহাড় আমাকে মুগ্ধ করেছে। পাহাড়ের প্রতি ভালোবাসা থেকেই খাগড়াছড়িতে যোগদান করেছি। মাঠ পর্যায়ে পরিদর্শন গেলে নারীরা আন্তরিক হয়ে কথা বলে। তাদের নানা সমস্যা আমাকে জানায়। একজন নারী অফিসারের সাথে মেয়েরা যেভাবে তাদের সমস্যা শেয়ার করবে, পুরুষ সহকর্মীদের সাথে সেভাবে করবে না। প্রশাসনিক যে দায়িত্ব দেয়া হয় তা দক্ষতার সাথে পালন করছি। একজন পুরুষ কর্মকর্তা যেভাবে দায়িত্ব পালন করে নারী হয়েও আমরা সেভাবে দায়িত্ব পালন করছি। নারী হিসেবে কখনো বাড়তি সুবিধা প্রত্যাশা করি না।

মুনতাসির জাহান : খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হিসেবে (শিক্ষা ও আইসিটি) দায়িত্ব পালন করছেন মুনতাসির জাহান। ২০২০এর আগস্টে উপজেলা নির্বাহী অফিসার কাপ্তাইয়ে যোগ দেন ৩১তম বিসিএসের এই কর্মকর্তা। চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত ইউএনও হিসেবে দায়িত্ব পালন করে ফেব্রুয়ারিতে খাগড়াছড়িতে যোগ দেন তিনি। কাপ্তাইয়ে ইউএনও হিসেবে পর্যটনসহ নানামুখী উন্নয়ন কাজ করে প্রশংসিত হয়েছেন।

তিনি বলেন, পাহাড়ের দুর্গম অঞ্চলেও আমি কাজ করেছি। ভৌগলিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে মানুষের কাছে সরকারি সেবা পৌঁছে দিচ্ছি। তবে নারী হিসেবে কিছুটা বাড়তি চ্যালেঞ্জও নিতে হয়। সন্তান, সংসারের প্রতি দায়িত্ব পালন করতে হয়; আবার অফিসও সামলাতে হয়। দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নারী হিসেবে বাড়তি কোনো সুবিধা চাই না। আমরা পুরুষ সহকর্মীদের সিমপ্যাথি চাই না, বরং তাদের এমপ্যাথি চাই। নারীরা অর্থনৈতিকভাবে স্বাধীন হলে আরো অগ্রসর হবে বলে মনে করেন তিনি।

সুমাইয়া নাজনীন : ২০১০ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতকোত্তর শেষ করেন সুমাইয়া নাজনীন। বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিয়ে প্রথমবারেই উত্তীর্ণ হন। ২০১২ সালে ময়মনসিংহে সহকারী খাদ্য নিয়ন্ত্রক হিসেবে চাকরি জীবন শুরু করেন। ২০১৫ সালে মৌলভীবাজারে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক হিসেবে দায়িত্ব পান। ২০১৭ সালে রাঙামাটিতে যোগ দেন। ২০২১ সালের অক্টোবরে খাগড়াছড়িতে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক হিসেবে দায়িত্ব পান ৩০তম বিসিএসের এই কর্মকর্তা।

তিনি বলেন, ভৌগলিক ভিন্নতার কারণে পাহাড়ে কাজের ধরনটা আলাদা। রাঙামাটিতে কাজ করার সময় একই রকম প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতাম। শুষ্ক মৌসুমে কাপ্তাই লেকের পানি শুকিয়ে যাওয়ায় কয়েকটি উপজেলায় পরিদর্শন কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হতো। তবে এখানকার কর্মপরিবেশ নারীবান্ধব। পুরো জেলায় ৬০ জনের জনবল রয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ৩ জন নারী। সারা দেশে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক রয়েছে মাত্র ৪ জন। খাদ্য বিভাগের কাজ বেশ চ্যালেঞ্জিং। জেলার ৯ উপজেলায় ১১টি গুদাম রয়েছে। প্রতি মাসে পরিদর্শনে যেতে হয়। এছাড়া সঠিকভাবে খাদ্যশস্য ব্যবস্থাপনা করতে হয়। পুরুষ সহকর্মীরা যেভাবে দায়িত্ব পালন করছে নারী হিসেবে সেভাবে কাজ করছি। বাড়তি কোনো সুবিধা চাই না। নারী হিসেবে দায়িত্বে পালনে কখনো ব্যর্থও হইনি।

রেবেকা আহসান : খাগড়াছড়ি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ৩২তম বিসিএসের ক্যাডার রেবেকা আহসান। ২০২১ সালের শুরুতেই যোগ দেন। পাহাড়ি জনপদে নিরাপদ পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশনের ব্যবস্থাপনা করা বেশ চ্যালেঞ্জিং। বিশেষত দুর্গম পাহাড়ে পানি সরবরাহের জন্য নানামুখী প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলা করে কাজ করছেন তিনি। অধিদফতরের প্রধান হিসেবে বিভিন্ন গুরত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তও তাকে নিতে হয়। দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে দীঘিনালার নয়মাইল এলাকা নিরাপদ পানি সরবরাহ করে প্রশংসা কুড়িয়েছেন।

তিনি বলেন, পাহাড়ি এলাকায় নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন নিয়ে কাজ করতে হয়। এ কাজে সামাজিকভাবে নারীর অংশগ্রহণের সুযোগ বেশি। এখানে কাজ করতে গেলে নানামুখী বাধা মোকাবেলা করেই কাজ করতে হয়। কর্মক্ষেত্রের পরিবেশসহ বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। যেহেতু দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় কাজ করতে হয়, সেখানে নিরাপত্তার সংকট রয়েছে। নারী হিসেবে আরেকটি বাড়তি চ্যালেঞ্জ হলো, আমরাও পারিনারী কর্মকর্তা হিসেবে এটি ক্রমাগত প্রমাণ করতে হয়। সরকার আমাকে দায়িত্ব দিয়েছে এ কারণে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধগরম বেশি পড়লেও দোষ আমাদের : ফখরুলকে কাদেরের জবাব
পরবর্তী নিবন্ধপুকুরে ডুবে দুই বোনের মৃত্যু