বিশ্বব্যাপী সময়টা অত্যন্ত অসহনীয় অবস্থায় চলছে এবং আরও কিছুকাল (কয়েক বছর) চলবে। এই চলার চালিকা মূল শক্তিই হল কোভিড-১৯ তথা মরণব্যাধি মহামারী। অর্থ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খাদ্য ও যোগাযোগ ব্যবস্থা হতে সর্বস্তরে এই মহামারী কোভিড-১৯ মরণছোবল মারছে-মারবে অনিশ্চিত সময় ধরে।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা আমাদের প্রধানমন্ত্রী গণতন্ত্রের মানসকন্যা দৃঢ়চেতা নেত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বাংলাদেশ বিশ্ব আর্থ-সামাজিকস্থানে এক অভাবনীয় অবস্থান নিশ্চিত করল তখনই বিশ্বব্যাপী মহামারীর মরণছোবল বিষাক্ত লালায় আমরাও নীলাভ হয়ে গেলাম। শিশু হতে বৃদ্ধ পর্যন্ত কেউ অচ্যুত রইলাম না। এর মরণ ধাক্কা সইতে না পেরে হারিয়ে যাচ্ছে আবার কেউ লড়াইয়ে অনিশ্চিতায় বেঁচে রইলাম। আমার মত আশির ছুঁই ছুঁই ‘যুবকরা’ করে ‘দম ফুরালো ঠুস’ হয়ে যাব তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই।
এহেন অনিশ্চিত অবস্থায় চলতি বছরের গত ৭ই এপ্রিলে অনুষ্ঠিতব্য এইচ.এস.সি. পরীক্ষাটাও শেষ পর্যন্ত হলো না এই মহামারীর কারণে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায় ১৪ লক্ষ শিক্ষার্থীর জীবন নিয়ে কোনো অবস্থাতেই খেলতে রাজি না হওয়ায় তাঁর সুযোগ্য শিক্ষামন্ত্রী (’৭৫ পরবর্তী দৃঢ়চেতা একমাত্র সফল পররাষ্ট্রমন্ত্রী ২০০৯-২০১৪) ডা. দিপু মনি গত ৭ অক্টোবর এক সাংবাদিক সম্মেলনে পরীক্ষা না নিয়ে সব পরীক্ষার্থীকে পাস বলে ঘোষণা দেন। এই ঘোষণা, এই দৃঢ়চেতা সিদ্ধান্ত অত্যন্ত সময়োপযোগী সঠিক সিদ্ধান্ত। অবশ্য কেউ কেউ অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন, বিরূপ মনোভাবে পোষণ করেছেন, তাই বলে ১৪ লক্ষ এক বিশাল ভবিষ্যত জীবনকে তো মৃত্যুমুখে ঠেলে দেওয়া যায় না। তাই এজন্য অবশ্যই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শিক্ষামন্ত্রী ডা. দিপু মনি-কে ধন্যবাদ জানাই এবং এটা এক সময়োপযোগী ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত। আগামীতে এহেন উত্তীর্ণদেরকে ‘টোয়েন্টি টোয়েন্টি’ সনদধারী বলতে পারে এবং বলা যায়।
এহেন একটি পাশের ঘটনাও প্রায় ৫৮ বছর আগেও ঘটেছিল। ১৯৬২ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর তথাকথিত শরীফ শিক্ষা কমিশন, ৫৮’র বিরুদ্ধে এক ঐতিহাসিক শিক্ষা আন্দোলন সংঘটিত হয়েছিল। এতে চট্টগ্রামের মাধ্যমিক স্কুল ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করা আমার সৌভাগ্য হয়েছিল। তখন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ও সামরিক শাসক ছিলেন (৭অক্টোবর ১৯৫৮ – ২৩ মার্চ ১৯৬৯) জেনারেল মোহাম্মদ আইয়ুব খান ও চট্টগ্রামের ফজলুল কাদের চৌধুরী (স্পিকার, পাক জাতীয় পরিষদ ২৮ অক্টোবর ’৬৩ – ২ জুন ’৬৫) ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী। শেষ পর্যন্ত আন্দোলনের কাছে নত স্বীকার করে ’৬২-এর ২৭ সেপ্টেম্বর শিক্ষামন্ত্রী শরীফ কমিশনের রিপোর্টের কার্যকারিতা স্থগিত করে তা সংশোধনকল্পে হামিদুর রহমান শিক্ষা কমিশন ’৬২ গঠন করেছিলেন, হামিদুর রহমান (নোয়াখালী জেলার সন্তান) তখন হাইকোর্টের বিচারপতি পরবর্তীতে জেনারেল ইয়াহিয়া খান শাসনামলে পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি (১৯৭১-৭৩)। ’৭১-র আমাদের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে ৯৩ হাজার পাকিস্তানী তথা হানাদার বাহিনীর চরম পরাজয়ের কারণে গঠিত পাকিস্তানের তদন্ত কমিশনের চেয়ারম্যানও ছিলেন।
শরীফ শিক্ষা কমিশনের কার্যকরী হওয়ার আগে (’৬০-এর জুন) আমাদের শিক্ষা আন্দোলনের চাপে শিক্ষা কমিশনের রিপোর্টের কার্যকারিতা স্থগিত হয়ে গেলে ’৬২-এর জুন-এ অনুষ্ঠিত দ্বিতীয়বর্ষ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ তৃতীয়বর্ষে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের ডিগ্রি পাস বা গ্র্যাজুয়েট বলে ঘোষণা দেয়া হয়। তখন থেকে কয়েকবছর চাকরির জন্য আবেদনকারীদের ওজিএল পাস বলা হত। কিন্তু পরবর্তীতে আর কোন অসুবিধা হয়নি।
উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট পরীক্ষায় ’২০ ভয়ঙ্কর মহামারী কোভিড-১৯এর কারণে টোয়েন্টি টোয়েন্টি পাস বলে অভিহিত হলেও ওজিএল ডিগ্রির মত আগামীতে কোন অসুবিধা হবে না।