ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও সংগ্রামে পাহাড়ের নারী

প্রান্ত রনি, রাঙামাটি | শুক্রবার , ৮ মার্চ, ২০২৪ at ৯:২৩ পূর্বাহ্ণ

পার্বত্য জনপদ রাঙামাটির পানিবেষ্টিত একটি উপজেলার নাম জুরাছড়ি। কাপ্তাই হ্রদ বেষ্টিত এই উপজেলায় যাতায়াতের একমাত্র উপায় নৌপথ, পানির কারণে কোনো সড়ক পথ নেই। ভারত সীমান্তবর্তী এই উপজেলার সীমান্তবর্তী মানুষেরা জেলা শহর তো দূরের কথা, উপজেলা সদরে আসেন খুবই কম। জুরাছড়ি উপজেলাা একটি প্রত্যন্ত ইউনিয়ন হলো মৈদং। মৈদং ইউনিয়নের ভূয়াতলীছড়া গ্রামের বাসিন্দা নিয়তি মালা চাকমা। পাহাড়ের প্রান্তিক এলাকার বাসিন্দা নিয়তি মালার জীবনের নিয়তিও বিষাদপূর্ণ।

উঁচু পাহাড়ের জুম ক্ষেতে উৎপাদিত সবজি কুমড়া তুলে বাজারে বিক্রি করে থাকেন নিয়মি মালা। একদিন মাথায় একটি কাল্লোং নিয়ে বাজারে যাচ্ছিল। জানতে চাওয়া হলে নিয়তি জানালেন প্রতিটি কুমড়া ২০ টাকা দরে বিক্রয় করবেন। তার মাথায় থাকা কাল্লোংএ ১০১৫টি কুমড়া ছিল। কুমড়া চাষ করতে দীর্ঘ পাহাড়ি পথ পাড়ি দিতে হয় তাকে। এটি শুধু মৈদং ইউনিয়নের চিত্রই নয়, রাঙামাটির সবকটি উপজেলায় প্রান্তিক এলাকার নারীরা এভাবেই তাদের জীবন সংগ্রাম চালাচ্ছেন। কৃষি পণ্য বাজারে বিক্রয়ের জন্য দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে পৌঁছান হাটে।

একই এলাকার ভূয়াতলীছড়া গ্রামের পাহাড়ি নারী মনমালা চাকমা। সারা বছরই কোমর তাঁত বুনেন তিনি। কোমর তাঁত দিয়ে চাকমাদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক পিননহাদি, বর্গি (শীতের চাঁদর), গামছা তৈরি করে। কোমর তাঁতে উলের সুঁতায় তৈরি এসব পাহাড়ি পোশাকহস্তশিল্প নিজেরা পরিধানের পাশাপাশি বিক্রয় করে সংসার চালাচ্ছেন তারা। ঘরে অলস সময় না কাটিয়ে সংসারের হাল ধরেন পাহাড়ের এই নারীরা। রাঙামাটি শহরের প্রাণকেন্দ্র বনরূপা বাজার। সাপ্তাহিক হাট বসে শনিবার ও বুধবার। হাটের দিন পাহাড়ের বিভিন্ন দুর্গম এলাকায় বাসিন্দারা তাদের কৃষি জমি, জুমে, বাড়ির আঙিনায় উৎপাদিত শাকসবজি ও ফলমূল বনরূপা বাজারে বিক্রয়ের জন্য নিয়ে আসেন। হাটবারে বিক্রেতার মধ্যে বেশিরভাগই থাকেন পাহাড়ের প্রান্তিক এলাকায়। গত বুধবার হাটবারে বনরূপা বাজারে ঘুরে দেখা যায়, রাঙামাটি সদর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন, নানিয়ারচর, বরকল উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকার নারী বোটযোগে বাজারে পাহাড়ে উৎপাদিত কৃষি পণ্য বিক্রয়ের জন্য এসেছেন। কয়েকজন নারী জুমের সিম, আলুসহ বিভিন্ন শাকসবজি নিয়ে বসে আছেন। তাদের একজন সুজাতা চাকমা। সুজাতা জানান, প্রতি সাপ্তাহিক বাজারে আসেন বিভিন্ন কৃষি পণ্য নিয়ে। খুব ভোরে রওনা দিয়ে বনরূপা পৌঁছাতে সকাল ৬৭টা বেজে যায়। এরপর বিক্রয় শেষে দুপুর একটাদেড়টার দিকে আবার বোটে করেই বাড়ি যান। হাটের দিনে ক্রেতাবিক্রেতাদের সিংহভাগই হলেন নারী।

পাহাড়ের নারীদের জীবন সংগ্রাম সম্পর্কে সিএইচটি উইমেন রিসোর্স নেটওয়ার্কের সদস্য নুকু চাকমা বলেন, পাহাড়ের নারীরা আজ কোথাও থেমে নেই। পাহাড়ের নারীরা অনেক সংগ্রামী। তারা এখন অন্যের প্রতি নির্ভর না হয়ে আত্মনির্ভরশীল হতে শিখেছেন। অনেকেই উদ্যোক্তা হয়েছেন, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। পরিশ্রম ও স্বপ্ন মানুষকে এগিয়ে নিতে সাহায্য করে। জীবনে স্বপ্ন থাকলে নারীর অগ্রযাত্রা থেমে থাকবে না। পাহাড়ের নারীরা নিজেদের ঐতিহ্য সংস্কৃতি সংরক্ষণের পাশাপাশি জীবন সংগ্রামও চালিয়ে যাচ্ছেন। আমি বলব অন্যের প্রতি, পরিবারের প্রতি নির্ভরশীল না হয়ে নিজেকে গড়ে তুলুন। সাফল্য আসবেই।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমানুষের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন শেখ হাসিনা
পরবর্তী নিবন্ধআমরা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলবো