ঐক্যের শক্তি ও চারটি ‘এস’

এম নাসিরুল হক | শনিবার , ৮ মে, ২০২১ at ৫:৩০ পূর্বাহ্ণ

আজ পৃথিবীর যে কোন প্রান্তের বা যে কোন ভাষার বা রং এর লোককে যদি জিজ্ঞেস করা হয় তাহলে সবাই এক কথায় হয়ত বলবে কোভিড-১৯ এর কথা। গোটা পৃথিবীকে অস্থির করে রেখেছে কোভিড। তবে মানুষের কাজ কর্ম যে বন্ধ হয়ে গেছে তা নয়। শ্রমজীবী মানুষ থেকে শুরু করে বিজ্ঞানীরা পর্যন্ত চিন্তিত নিজ নিজ কাজ নিয়ে। শ্রমজীবী মানুষ তার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে যেমন ব্যস্ত তেমনি ডাক্তার, নার্সসহ চিকিৎসাসেবায় নিয়োজিত মানব জাতিকে বাঁচিয়ে রাখতে। আবার লক্ষ লক্ষ বিজ্ঞানী তাদের জায়গায় কাজ করছেন সৃষ্টির সেরা জীব মানবকুলকে একটি সুসংবাদ দিতে। তারা প্রাণান্তর চেষ্টা করে যাচ্ছেন ভেরিয়েন্টকে কিভাবে মোকাবেলা করা যায় বা নিবৃত্ত করা যায়।
বাংলাদেশের ষোল কোটি মানুষও এর বাইরে নেই। সরকার থেকে শুরু করে প্রত্যেকে প্রত্যেকের স্থান থেকে কাজ করে যাচ্ছেন যা প্রশংসার দাবী রাখে। নিম্ন আয়ের মানুষগুলো গরিব থেকে আরো গরিব যাতে না হয় তার জন্য প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগকে অবশ্যই প্রশংসা করতে হবে। এর পরও আমাদেরকে নতুন করে ভাবিয়ে তুলেছে ভারতীয় ভেরিয়েন্ট। এ জন্য যা যা প্রয়োজন সরকার করছে। তবে টাকা লোভে বা দালালদের মাধ্যমে চোরাপথে যাতে কোন মানুষ ভারত থেকে বাংলাদেশে ঢুকতে না পারে সে ব্যাপারে আরো কড়াকড়ি আরোপ করতে হবে। ব্যবসায়ীদের দাবীর প্রেক্ষিতে ব্যবসা বাণিজ্য খুলে দেয়া হচ্ছে। জনপরিবহনেরও একই অবস্থা হতে যাচ্ছে। তবে এসবের মধ্যে স্বাস্থ্য বিধি নিষেধ একে বারেই মানা হচ্ছে না। আমাদের মনে হচ্ছে এবার বাড়ি না গেলে বা ঈদের বাজারে না গেলে কি যেন শেষ হয়ে যাবে। পৃথিবীতে ইসলাম ধর্ম চালু হবার পর থেকে এসব হয়ে আসছে এবং পৃথিবী ধ্বংস না হওয়া পর্যন্ত এসব চলবে। অর্থাৎ রোজা আসবে, ঈদ হবে। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে তা চলতে থাকবে।
সরকার এ জায়গায় বিভিন্ন কারণে কঠিন পদক্ষেপে যাচ্ছে না, ভারতের মত কবরের পর কবর খনন করতে হলে (্‌আল্লাহ মাফ করুক) বা লাশের পর লাশ পোড়াতে হলে আমরা কোথায় যাব।
এই করোনা কালেও কিছু সংখ্যক মানুষ মোদী ইস্যু নিয়ে দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা চালিয়ে ছিল। সরকার খুব সুনিপুনভাবে সেটাকে মোকাবেলা করেছেন।
আজকে করোনাকালে আমাদের মধ্যে কোন দ্বন্দ্ব নয়। ঐক্যবদ্ধতা আমাদেরকে রক্ষা করতে পারে। অর্থাৎ সরকারি নির্দেশগুলো মেনে চললে আমরা অনেক ভাল থাকতে পারব। ১৯৭১ সালের কথাই যদি বলি দেশের ২/১ শতাংশ মানুষ স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল। বাকিরা ঐক্যবদ্ধ ছিলেন বলে মাত্র নয় মাসের সশস্ত্র যুদ্ধের মাধ্যমে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করতে পেরেছি যদি এখানে আমাদের বন্ধু রাষ্ট্রগুলো সহযোগিতাকে অবশ্যই স্বীকার করতে হবে। দেশ থাকলে রাজনীতি থাকবে। রাজনীতি থাকলে ক্ষমতার অদল বদল থাকবে। কিন্তু মানুষ না থাকলে কাকে নিয়ে রাজনীতি হবে। তাই আসুন সব ভেদাভেদ ভুলে সরকারি নির্দেশ স্বাস্থ্য বিধি মানি।
২.
স্বাধীনতার পর এক শ্রেণির রাজনীতিবিদ দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিতে মেতে উঠেছিল। ব্যাংক ডাকাত, চুরি, লুট, হাইজ্যাক সন্ত্রাস সৃষ্টি করে দেশের মধ্যে একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টির চেষ্টায় মত্ত ছিল। সেই বিষয়গুলোকে উস্কানি দেয়ার জন্য নতুন নামে রাজনৈতিক দলও গঠিত হয়েছিল এবং এটাতে বিদেশিদের মদতও ছিল। যারা ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে গিয়ে পাকিস্তানকে রক্ষা করার নামে জাতির পিতা স্বপ্ন বাংলাদেশ গড়ার কাজে বাধার সৃষ্টি করার চেষ্টায় ব্যস্ত ছিল। সে সময় দেশে খাদ্য সংকট সৃষ্টির লক্ষ্যেও কতিপয় দেশ পিছপা ছিল না। সে সময় বঙ্গবন্ধু জাতিকে নতুনভাবে ঐক্যবদ্ধ করে দেশের উন্নয়নের কাজে সম্পৃক্ত করার জন্য দ্বিতীয় বিপ্লবের ডাক দিয়েছিলেন।
বঙ্গবন্ধু সে সময়ে এক ভাষণে বলেছিলেন আমার দেশে কোন কিছুর অভাব নেই। আমাদের সব আছে। শুধু দরকার সমন্বয়ের। তিনি বলেছিলেন আমাদের চারটি ‘এস’ আছে। যা পৃথিবীর খুব কম দেশের আছে। তিনি বলেছিলেন আমাদের আছে ঝটঘ, অর্থাৎ সূর্য। এদেশে বছরের ৩৬৫ দিনই সূর্যের রশ্মি পাওয়া যায়। যেখানে পৃথিবীর অনেক দেশ আছে তারা ছয় মাস প্রায় সূর্য দেখে না বা রশ্মি পায় না। আমাদের ঝড়হ আছে যা অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক বেশি উর্বর। একটি কাঁঠাল বিচি লাগিয়ে দিয়ে কিছুদিন পরিচর্যা করলে বছরে পর বছর ফল খাওয়া দেবে। আমাদের ঝড়ষ আছে যা অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক বেশি ঊর্ধ্ব। একটি কাঁঠাল বিচি লাগিয়ে দিয়ে কিছুদিন পরিচর্যা করলে বছরের পর বছর ফল খাওয়া যায়। এমন উর্বর মাটি যা লাগাবেন। তাই ফল দেবে। আমাদের ঝড়হ আছে। অর্থাৎ সূর্য সন্তানেরা আছে। যারা নয় মাসের যুদ্ধ দিয়ে একটি দেশ স্বাধীন করে আমাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছে। পৃথিবীর অনেক দেশ আছে যারা ১০ থেকে ২৫ বছর যুদ্ধ করেও স্বাধীনতা আনতে পারেনি। আছে আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ ‘এস’ তা হচ্ছে ঝড়ষরফবৎরবঃু বা ঐকমত্য। একটি দেশের জন্যে এটি অত্যন্ত প্রয়োজন। যে দেশের জনগণ যত বেশি বিভাজন সমৃদ্ধ সে দেশে তত বেশি বিশৃঙ্খলা। বিশৃঙ্খলা মানে ধ্বংস, হরতাল, কাটাকাটি, মারামারি, আগুন, সন্ত্রাস ইত্যাদি ইত্যাদি। বাঙালি জাতি যে একটি ঐকমত্যের দেশ তার বড় প্রমাণ ১৯৭১ সাল। মাত্র নয় মাসের যুদ্ধের মাধ্যমে তারা একটি দেশ স্বাধীন করেছে।
পৃথিবীর ন্যায় দেশ আজ এক মহামারির সম্মুখীন। দেশকে পশ্চাতে দেশের প্রত্যেকটি মানুষ নিজ নিজ জায়গা থেকে ভূমিকা রেখে চলেছেন। আজ আমাদের যেটির সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সেটি হচ্ছে সলিডারিটি বা ঐক্যবদ্ধতা। আজ আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে কোভিডকে মোকাবেলা করব। এটা সম্ভব কারণ ঐক্যশক্তি। টিকা এসেছে, আসছে, আসবে। তার জন্য অপেক্ষা না করে সরকারি নির্দেশ ঐক্যবদ্ধভাবে যদি মানি, কোভিড অবশ্যই চলে যাবে।

লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক

পূর্ববর্তী নিবন্ধনাক ফুল
পরবর্তী নিবন্ধমানবতার সেবায় ব্রত রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট