প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অতি সম্প্রতি বলেছেন, কম দামে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে এক কোটি মানুষকে বিশেষ কার্ড প্রদান করা হবে। তিনি বলেন, তাঁর সরকার দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা এক কোটি মানুষকে টার্গেট করেছি, আমরা তাদের বিশেষ কার্ড দেব যাতে তারা ন্যায্য মূল্যে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে পারে।’ ইতোমধ্যেই কভিড-১৯ মহামারি চলাকালীন ৩৮ লাখ লোক আর্থিক সহায়তা পেয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই এদের সাথে আরও অনেককে অন্তর্ভুক্ত করা হবে এবং শেষ পর্যন্ত মোট এক কোটি মানুষ এই কার্ড পাবে।’
তিনি উল্লেখ করেন ইতোমধ্যেই ৫০ লাখ লোককে কার্ড দেয়া হয়েছে, যাতে তারা ১০ টাকায় চাল কিনতে পারে। ভোজ্য তেলের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে আলোচনার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তেলের মূল্য বৃদ্ধি নিয়ে টাস্ক ফোর্স গঠনের কথা বলেছি। মজুদ তেলের কোথাও ‘হোল্ডিং’ হচ্ছে কি-না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’ সরকার প্রধান বলেন, ‘ভোজ্য তেলের ভ্যাট কমিয়ে দেয়া বা একটু সমন্বয় করে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছি। যাতে রমজান মাসে কোন সমস্যা না হয়।’
সরকারের কাছে যথেষ্ট খাদ্য মজুদ আছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, এখনো ১৮ লাখ টন খাদ্য মজুদ আছে আমাদের। সেখানে কোন অসুবিধা নাই।’ ফসল উৎপাদন বাড়ানোর তাগিদ দিয়ে তিনি এ সময় বলেন, ‘কারো এতটুকু জমি যেন অনাবাদী না থাকে, যে যা পারেন সেটাই উৎপাদন করবেন। প্রত্যেকটা এলাকাতেই কিছু না কিছু উৎপাদন হবে। সেটাই আমার লক্ষ্য। তাতে আমাদের যে খাদ্য চাহিদা সেটা যেন পূরণ করতে পারি।’
নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি ঠেকাতে সরকার তৎপর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোথাও মজুদ করে তেলের সংকট তৈরি করার ষড়যন্ত্র চলছে, তা খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছেন। সাধারণ ক্রেতারা আশঙ্কায় রয়েছেন আসন্ন রমজানে ভোগ্যপণ্যের দাম আরও বাড়তে পারে। সেই লক্ষ্যে কম দামে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে এক কোটি মানুষকে বিশেষ কার্ড প্রদান করা হচ্ছে। নিত্যপণ্যের উর্ধ্বগতিতে মানুষ দিশেহারা। এ পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের নতুন কর্মসূচি নিঃসন্দেহে সময়োচিত পদক্ষেপ। তবে অর্থনৈতিক ভঙ্গুর জনগোষ্ঠীর কাছে এর সুফল পৌঁছে দিতে সুষ্ঠু বণ্টন নিশ্চিত করা প্রয়োজন বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
আমরা স্মরণ করতে পারি, জীবন-জীবিকা বাঁচাতে করোনা মহামারীর শুরু থেকেই সরকার সচেষ্ট ছিল। দেশের বড়, মাঝারি ও ছোট ব্যবসায়ী, নিম্ন আয়ের মানুষ, দরিদ্র, এমনকি কর্মহীন মানুষের জন্য আর্থিক প্যাকেজ প্রদান করা হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে অর্থ প্রদানে সদিচ্ছার ঘাটতি দেখা যায়নি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকও প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে তদারকি জোরদার করেছে। প্যাকেজ বাস্তবায়ন ও প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের শনাক্তে সরকারের সদিচ্ছারও অভাব নেই। কিন্তু এক্ষেত্রে বড় সমস্যা সরকারের হাতে গরিব, কর্মহীন, দিনমজুর, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের পূর্ণাঙ্গ কোনো তালিকা ছিল না। করোনার কারণে নতুন দরিদ্রের সংখ্যা বেড়েছে, অনেকে কাজ হারিয়ে বেকার হয়ে পড়ছেন, অর্থ সংকটে ব্যবসা বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছেন অনেকে।
সেহিসেবে এবারের সহায়তা কার্ড প্রদান করে এক কোটি মানুষকে তালিকায় নিয়ে আসার পদ্ধতি প্রশংসাযোগ্য। বলতেই হবে এ পরিকল্পনা একটি দরিদ্রবান্ধব জনকল্যাণমুখী পরিকল্পনা। এ কার্যক্রম সফল হওয়া বাঞ্ছনীয়। এতে অন্তত ৫ কোটি মানুষ উপকৃত হবে বলে ধারণা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধরনের কার্যক্রম সফলভাবে পরিচালনার জন্য দেশের প্রকৃত অভাবী মানুষের পরিসংখ্যান ও এলাকাভিত্তিক চিত্র সরকারের কাছে থাকা জরুরি। এক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। সহায়তা প্রদান একমাত্রিক হলে চলবে না। প্রকৃত অভাবী মানুষেরা এই সহায়তা পাচ্ছে কিনা তদারকি দরকার। সরকারের সহায়তার উদ্যোগের পাশাপাশি তার বাস্তবায়নে সচেষ্ট হতে হবে সংশ্লিষ্টদের। দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির কষ্টদায়ক প্রভাব পড়েছে দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষের ওপর। আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের কোনো সমন্বয় নেই। এ অবস্থায় ন্যূনতম জীবনধারণ তাদের জন্য কষ্টকর হয়ে পড়ছে। ফলে সরকারের সহায়তার উদ্যোগ তাদের জন্য বড় আশীর্বাদ। তাই অনিয়ম ও দুর্নীতিমুক্ত বণ্টন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।