বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর ‘আষাঢ় কবিতায় বলেছেন, ‘বাদলের ধারা ঝরে ঝরঝর, আউশের ক্ষেত জলে ভরভর, কালি-মাখা মেঘের ওপারে আঁধার ঘনিয়েছে দেখ্ চাহি রে। ওগো, আজ তোরা যাস নে ঘরের বাহিরে।’
ঋতুচক্রে আষাঢ়-শ্রাবণ দু’মাস মিলিয়ে বাংলায় বর্ষাকাল। আষাঢ়ের মধ্য দিয়েই সাধারণত বাংলার প্রকৃতিতে বর্ষা প্রবেশ করে। মরুদেশে খট খটে রোদ্দুর, তাতে কি! আমার তো মন পড়ে আছে বাংলাদেশের বর্ষাতে! আমি দেখি বাংলা ক্যালেন্ডার! আমার চোখে ক্যালেন্ডারের পাতা মেনে, বর্ষার শুরু। মরুদেশে গ্রীষ্মের দাবদাহে মানুষ যখন পুড়ছে তখন আমি বাংলা ক্যালেন্ডারের পাতায় চোখ বুলিয়ে ভাবছি বর্ষাতো এসেই গেছে, ঝুম ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে। রিমঝিম বৃষ্টিতে ভেজার যে কি আনন্দ, আহা! সে কথা ভুলি কেমনে! প্রকৃতির সাথে সখ্যতা গড়ে কেটেছে আমার শৈশব। কখনো স্কুলে যেতে যেতে কিংবা কখনো ফেরার পথে আনন্দে গায়ে মেখেছি বৃষ্টির ফোটা।
বর্ষা এলে প্রকৃতি সবুজ-সতেজ-নির্মল হয়ে ওঠে। পাখির কলকাকলিতে প্রকৃতি মুখর হয়ে ওঠে। নদ-নদী-খাল-বিল প্রাণ ফিরে পায়। বর্ষা ঋতুতে সৃষ্টিকর্তা আমাদের উপহার দেন বিচিত্র সব ফুল, ফল ও সব্জি। গন্ধরাজ, বাগানবিলাস, শ্বেতরঙ্গন, টগর, জুঁই, কেয়া ও কদমসহ নাম না জানা আরও কতরকম ফুল ফোটে বর্ষাকালে। গাছে গাছে দেখা যায় পেয়ারা, আমড়া, কামরাঙা, জাম, ডেউয়া, জামরুল, লটকন, গাবসহ রকমারি ফল। সব্জির তালিকায় যোগ হয় ঢেঁড়স, করলা, কাঁকরোল, চিচিঙ্গা, ঝিঙ্গা, পটোল, বরবটিসহ বিচিত্র সব সব্জি। বর্ষার এই রূপ কখনো কি ভোলা যায়?
বর্ষার সবই উপভোগ্য। বৃষ্টিরধারায় নবতর জীবন আসে পুষ্প-বৃক্ষে, পত্রপল্লবে, নতুন প্রাণের সঞ্চার করে প্রকৃতির অবয়বে। বর্ষা আর বৃষ্টি এলেই তাড়িত করে অন্য এক আবেগ। বৃষ্টির নির্ঝরণীতে অধিক যেন ব্যাকুল হয়ে ওঠে আবেগতাড়িত মন। বর্ষার ভাবনা থেকে অনেকেই কবি হয়েছেন। এমন কোনো কবি পাওয়া কঠিন, যিনি বর্ষাকে কেন্দ্র করে দু’চার লাইন লেখেননি। আসলে বর্ষার রূপটা এমনই আকর্ষণীয় যে, যেকোনো মানুষকেই সহজে আকৃষ্ট করতে সক্ষম হয়।
বাংলা কবিতায় বর্ষার বন্দনা হয়েছে সেই মধ্যযুগ থেকে আজ পর্যন্ত। বর্ষা আর বৃষ্টি এখন কবিতার একটি অংশ। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘বর্ষার দিনে’ কবিতায় বলেছেন- ‘এমন দিনে তারে বলা যায়, এমন ঘনঘোর বরিষায়। এমন দিনে মন খোলা যায়–এমন মেঘস্বরে বাদল-ঝরোঝরে/ তপনহীন ঘন তমসায়।’ বর্ষায় ধুয়ে-মুছে যাক সব রোগ-ব্যাধি। পৃথিবী সুস্থ হয়ে উঠুক তাড়াতাড়ি।