এসএসসির অর্ধেক নম্বর লিখিত পরীক্ষায়

নতুন শিক্ষাক্রম

| বৃহস্পতিবার , ২৫ এপ্রিল, ২০২৪ at ৬:৪৭ পূর্বাহ্ণ

নতুন শিক্ষাক্রমের পরীক্ষা পদ্ধতি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার পর মাধ্যমিক পরীক্ষায় লিখিত অংশে নম্বর বাড়ানো হচ্ছে। এসএসসির মূল্যায়ন পদ্ধতি ঠিক করতে গঠিত উচ্চ পর্যায়ের কমিটি লিখিত পরীক্ষায় ৫০ শতাংশ নম্বর রাখার সুপারিশ প্রস্তুত করেছে। এই খবরে অভিভাবকদের একজন নেতা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তবে সরকারের কর্মকর্তারা বলছেন, লিখিত অংশ থাকলেও সেটি আগের পরীক্ষার মত হবে না। খবর বিডিনিউজের।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান বলেন, ‘পরীক্ষা’ না রাখার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত থাকলেও অভিভাবকদের চাপে ‘লিখিত পরীক্ষা’ রাখা হচ্ছে। তিনি বলেন, আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় পরীক্ষা বলতে বলতে এমন একটা অবস্থা হয়ে গেছে যে, কে কত ভালো কে কত খারাপসেটা নির্ধারণ করা হয়। আসলে ব্যাপারটা মোটেও তা না। মূল বিষয় হচ্ছে, শিখন যাচাই করা। কে কতটুকু শিখেছে বা শিখতে পারেনি। আমরা এটিকে মূল্যায়ন বলছি। আমাদের এখানে একটি অসুস্থ প্রতিযোগিতা আমাদের সমস্ত কিছুকে নষ্ট করে দিচ্ছে। আমরা এটিকে মূল্যায়ন বলেছিলাম, মানুষকে প্রতিযোগিতার মনোভাব থেকে বের করার জন্য। কিন্তু যেহেতু এখন সবারই পরীক্ষা নিয়ে চিন্তা, তাই এটিকে পরীক্ষাই বলছি। সবার যে ডিমান্ড ছিল, সেটা আমরা পূরণ করছি। নতুন শিক্ষাক্রমে দশম শ্রেণি শেষে যে পাবলিক পরীক্ষা রাখা হচ্ছে সেটির নাম সেকেন্ডারি স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষাই– (এসএসসি) রাখা হচ্ছে।

অধ্যাপক মশিউজ্জামান বলেন, ১০টি বিষয়ের এসএসসি পরীক্ষা হবে। ৫০ শতাংশ হবে বছরজুড়ে শিখনকালীন মূল্যায়নে আর ৫০ শতাংশে হবে লিখিত পরীক্ষা। এই লিখিত পরীক্ষা দুই ভাগে নেয়া হবে। প্রথমভাগ সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত হবে। সেখানে পারদর্শিতা যাচাই করা হবে, সেজন্য তাকে কিছু টাস্ক দেয়া হবে। কাজগুলো করার পরে এক ঘণ্টার একটি বিরতি থাকবে। তারপর সে পরীক্ষার হলের মত বসে পরীক্ষা দেবে। সে তিন ঘণ্টায় যা করেছে, সেটার ভিত্তিতে সে লিখবে। কাজটা কীভাবে করল, সেটা থেকে তার ফাইন্ডিংস কী আসলসেটা সে লিখবে। এই পরীক্ষাটা সর্বোচ্চ দুই ঘণ্টায় হবে।

এই সিদ্ধান্তকে কীভাবে দেখছেন, এই প্রশ্নে অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মো. জিয়াউল কবীর দুলু বলেন, পরীক্ষা না থাকলে বাচ্চাদের লেখাপড়া হয় না। তারা ঝিমিয়ে পড়ে, পড়ালেখা করতে চায় না। সে জায়গা থেকেই অভিভাবকদের পরীক্ষা নেওয়ার দাবি ছিল। কারণ, যদি প্রতিযোগিতাই না থাকে তাহলে বাচ্চাদের লেখাপড়ার কোন তাগিদ থাকে না। দাবির প্রেক্ষিতে সরকার যে পদক্ষেপ নিয়েছে, সে সিদ্ধান্ত ভালোভাবেই নিয়েছে অভিভাবকরা।

অন্য শ্রেণিতে মূল্যায়ন কীভাবে : নতুন শিক্ষাক্রমে প্রাকপ্রাথমিক থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত কোনো পরীক্ষা থাকছে না। তাদের শতভাগ শিখনকালীন মূল্যায়ন করা হবে। চতুর্থ থেকে অষ্টম শ্রেণিতে বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান ও সামাজিক বিজ্ঞানে ৬০ শতাংশ শিখনকালীন মূল্যায়ন এবং ৪০ শতাংশ সামষ্টিক মূল্যায়ন করা হবে। বাকি বিষয়গুলোতে শিখনকালীন শতভাগ মূল্যায়ন করা হবে। এই শ্রেণিগুলোতে ষান্মাসিক ও বাৎসরিক পরীক্ষার মাধ্যমে হবে সামষ্টিক মূল্যায়ন। নবম ও দশম শ্রেণিতে বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান ও সামাজিক বিজ্ঞানে ৫০ শতাংশ শিখনকালীন মূল্যায়ন এবং বাকি ৫০ শতাংশ সামষ্টিক মূল্যায়ন করা হবে।

এছাড়া জীবন ও জীবিকা, ডিজিটাল প্রযুক্তি, শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য এবং সুরক্ষা, ধর্ম শিক্ষা এবং শিল্প ও সংস্কৃতি বিষয়ে শতভাগ মূল্যায়ন করা হবে। দশম শ্রেণি শেষে দশম শ্রেণির পাঠ্যসূচির উপর পাবলিক পরীক্ষা হবে। নতুন শিক্ষাক্রমে একজন শিক্ষার্থীর মূল্যায়ন নম্বর বা গ্রেডের পরিবর্তে ত্রিভুজ, চতুর্ভুজ ও বৃত্ত ব্যবহার করে করা হবে। ত্রিভুজ হচ্ছে সবচেয়ে ভালো, বৃত্ত হচ্ছে মোটামুটি ভালো এবং চতুর্ভুজ অর্থ উন্নতি প্রয়োজন।

এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলাম বলেন, নৈপুণ্য অ্যাপের মাধ্যমে হবে মূল্যায়ন। সারা বছরে যে ফলাফল হবে, সেটার বোর্ডের পাবলিক পরীক্ষার ফলাফলটাও যুক্ত হয়ে মূল রেজাল্ট হবে। শিক্ষার্থীদের ফলাফলে আইকনগুলোর নিচে একটি মন্তব্য লেখা থাকবে। যেটা থেকে ওই বাচ্চার অগ্রগতি বা অবনতি বোঝা যাবে। কিন্তু অ্যাপে এতকিছু লেখার সুযোগ নেই। অ্যাপে আইকনগুলোই থাকবে।

তিনি বলেন, বলা হচ্ছে পাঁচ ঘণ্টায় এসএসসি পরীক্ষা হবে। কিন্তু সেটা আসলে চাহিদার ওপর নির্ভর করে। কোনো বিষয়ের পরীক্ষা দুই ঘণ্টায়ও হয়ে যেতে পারে। সর্বোচ্চ পাঁচ ঘণ্টার কথা বলা হচ্ছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআজও তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকার আভাস
পরবর্তী নিবন্ধজব্বারের বলী খেলার ১১৫ তম আসর আজ