নিশাত তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। তার পছন্দের একটি কাজ ছবি আঁকা। পড়ালেখা শেষ করে একটা না একটা ছবি সে ছবি আঁকবেই। স্কুলের ড্রইং স্যার পাহাড়িয়া এলাকার ছবি এঁকে নিয়ে যেতে বলেছে। আজ শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় মনোযোগ দিয়ে ছবি আঁকতে বসে নিশাত।
একটা ছবি দাঁড় করাতে চেষ্টা করে, পাহাড় ও গাছঘেরা বন সাথে নীলাকাশ লাল সূর্য সাদা কালো মেঘ তার পাশেই একটা ঝরণা।পাহাড় ও মেঘ ঘেষে ঝরনার উপরে এক ঝাঁক পাখি। সুন্দর একটা ছবি হয়ে উঠতেই ঝামেলা বাঁধলো রঙ করতে গিয়ে, লাল নীল সবুজ হলুদ রঙগুলো রঙের প্লেটে নিয়ে জল মেশাতে যাবে ঠিক সেই মুহূর্তে হাত ফসকে জলরঙ পরে কার্টিস পেপারে আঁকা ছবি অন্য রকম হয়ে গেল। পাহাড়ের রঙের সাথে আকাশের রঙ মিশে ছবিটা হয়ে ওঠে মহাকাশে গ্রহ নক্ষত্র সমৃদ্ধ ছবি তাতে একটা এলিয়েনের মতো প্রাণী উড়ছে। প্রাণীটি হঠাৎ থেমে এক দৃষ্টিতে নিশাতের দিকে তাকিয়ে থাকে।
নিশাত অবাক হয়ে দেখে। কার্টুন বা এনিমেশন ছবির মতো প্রাণীটি বলছে কী ছবি আঁকলে?
নিশাত চোখ কচলাতে কচলাতে ভাবছে স্বপ্ন দেখছে নাকি। না স্বপ্ন না বাস্তব।
নিশাত বলল, কে তুমি?
প্রাণীটি বলল, আমি এলিয়েন।
এলিয়েন!
হ্যাঁ, অনেক দূরে আকাশের ওপাড়ে আমাদের বাড়ি।
তুমি আমার ছবিতে কিভাবে এলে?
জানালায় বসে বসে তোমার ছবি আঁকা দেখছিলাম, মন চাইলো আর হুট করে তোমার ছবির মধ্যে ঢুকে গেলাম। ভেবেছিলাম তুমি ভয় পাবে। কিন্তু তুমি তো খুব সাহসি ভয় তো পেলেই না বরং জিজ্ঞেস করছ আমি কে?
নিশাত বলল, এখন তো আমার ভয় করছে।
কিসের ভয়?
টিভিতে ভূত, ডাইনি অনেক কিছু দেখি। তুমি ও দেখতে তাদের মতো?
সত্যি কি তাই?
হ্যাঁ
আমার গঠন আকৃতি তেমন হলে ও তোমার ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আমি তোমার বন্ধু হতে এসেছি।
এলিয়েন কারো বন্ধু হয়?
হয় তো, দেখ না আমি বন্ধু হতে এসেছি। আর আমার ছবি আঁকাতে তোমার আঁকাটা অন্য রকম হয়ে ওঠে। বন্ধুকে কি কেউ ভয় পায়?
সত্যি বন্ধু!
এলিয়েন বলল, হ্যাঁ। সত্যি বন্ধু । তোমার স্কুলের সাদমান, সাব্বির, রিয়া, আসিফ, জুঁই এদের মতো একজন বন্ধু!
নিশাত বলল, তুমি আমার বন্ধুদের নাম জানলে কী করে?
জানি জানি সব জানি। বাহ্ রে তোমার বন্ধু হব আর তোমার অন্য বন্ধুদের নাম জানবো না তা কেমন করে হয়।
এলিয়েন বন্ধু!
হ্যাঁ, এলিয়েন বন্ধু।
নিশাত বলল, দেখো এলিয়েন আমার কিন্তু এখনো ভয় করছে।
এলিয়েন বলল, এই আমাকে ছুঁয়ে দেখো। ভয় কেটে যাবে। নিশাত আস্তে আস্তে হাত বাড়াতে গিয়ে ও ছুঁই না।
এলিয়েন বলল, ভয় পাচ্ছো কেন? যারা ঠিকমতো পড়াশোনা করে তাদের ভয় পেতে নেই?
ভয় পেতে নেই কেন? নিশাতের প্রশ্ন।
কারণ পড়ালেখা মানুষকে জ্ঞানী করে বুদ্ধিমান বানায় আর্দশবান বানায়। আর বুদ্ধিমান মানুষের ভয় থাকতে নেই।
আচ্ছা বলে এবার এলিয়েনকে ছুঁয়ে দেখে নিশাত, হ্যাণ্ডশেক কর, হঠাৎ যেন এক ধরণের অনুভূতি ফিল করে নিশাত। হাত ছেড়ে দেয়।
এলিয়েন বলল, ভয় নেই বন্ধু, আমি অন্য গ্রহের প্রাণী তো তাই তোমার অন্য রকম একটা অনুভূতি হবে এটা স্বাভাবিক। নিশাত ভাবছে সত্যি তো এলিয়েন আমার মনের কথা ও বুঝেছে।
হঠাৎ নিশাতের মায়ের ডাক। নিশাত, নিশাত এই নিশাত কার সাথে তুমি কথা বলছো?
না , মা। কারো সাথে না ।
নিশাত এলিয়েনকে বলল, এখন কী হবে?
এলিয়েন বলল, কিছুই হবে। তুমি চোখ বন্ধ করো, ঠিক দুই সেকেন্ড পরে চোখ মেলবে।
নিশাত দুই সেকেণ্ড পরে চোখ খোলে দেখে এলিয়েন নেই। চতুর্দিকে খুঁজে ও পায় না। মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে। ঠিক সেই মূহুর্তে নিশাতের মা নিশাতের রুমে ঢুকে।
মা বলল, তুমি কার সাথে কথা বলছিলে?
নিশাত বলল, কই না কারো সাথে না।
মা বলল, ছবি আঁকা শেষ?
হ্যাঁ মা, দেখো না রঙ পরে ছবিটা কেন বিশ্রি হয়ে গেছে।
মা বলল, না তো খুবই সুন্দর হয়েছে। যে অন্য গ্রহের ছবি।
নিশাত বলল, স্যার বকা দিলে।
মা বলল, স্যার বকা দিবে না, তোমার ছবি আনকমন, চমৎকার। মা চলে গেলে নিশাত ভাবে কখন আবার তার এলিয়েন বন্ধু আসবে।b