ভয়ংকর ভুতুড়ে দ্বীপ

আরিফ রায়হান | বুধবার , ২৬ জানুয়ারি, ২০২২ at ৭:৫৮ পূর্বাহ্ণ

 

 

ভূত শব্দটি মুখে নিলেই কেমন যেন ভয়ে গা ছমছম করে ওঠে। যারা বলে ভুতটুত বলে কিছু নেই সে রকম অনেক সাহসী মানুষও একাকি গভীর রাতে ভয়ে কাবু হয়ে পড়েন। তবে ভূত থাকুক আর না থাকুক মানুষ গভীর দ্বীপ, জঙ্গল, গোরস্থান, শ্মশান এমন নির্জন অনেক জায়গায় ভয় পায়। বিশেষ করে রাতের বেলা যদি একাকি পথ চলতে হয় এসব স্থানের আশপাশ দিয়ে তবে তো কথায় নেই। ভয় কি জিনিস তখন তিনি হাড়ে হাড়ে টের পাবেন। কারণ এসব স্থানে ভৌতিক কিছু থাকতে পারে এমন ধারণা মনে আসতেই পারে। তবে যদি বলা হয় আমেরিকার কোনও দ্বীপে ভুতের ভয় আছে তাহলে কি বিশ্বাস করা যায়? কারণ মনে হতে পারে আমেরিকার মতো আলো ঝলমল শহরে ভূত বাস করবে কেমন করে? এটা কিভাবে সম্ভব? হ্যাঁ অসম্ভবের কিছু নেই। ভূত না থাকলেও ভৌতিক কাণ্ড কিন্তু ঘটেছে নিউইয়র্ক সিটির বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উত্তর ব্রাদার আইল্যান্ডে।

নির্জন এই দ্বীপে নেই কোনো মানব বসতি। তথাপি এ দ্বীপের সুনসান নীরবতায় মানুষ ভয়ে শিউরে উঠে। দ্বীপটিকে ঘিরে প্রচলিত আছে নানা কল্পকাহিনী। ধারণা করা হয় এক সময় মানুষ এই দ্বীপে বসবাস করতো এবং যা ছিল নিউইয়র্ক শহরের মতোই আলো ঝলমলে। রহস্য এখানেকী এমন ঘটনা ঘটেছিল রাতারাতি মানুষ এ দ্বীপ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হল। অনেকের ধারণামহামারির ছোবলে জনমানুষ শূন্য হয়েছে দ্বীপটি। কেউ বলেন অদৃশ্য আত্মাদের উৎপাতে মানুষ ছেড়েছে এই দ্বীপ। আবার অনেকই বলেন সমুদ্র থেকে পানি এসে বিলীন হয়ে গিয়েছিল এই দ্বীপটি। তবে ব্রাদার আইল্যান্ড দ্বীপ নিয়ে গবেষণা করা ব্যক্তিরা বলেছেন এই দ্বীপের বয়স খুব বেশি নয়। ১৮৮৫ সালের দিকে এই দ্বীপে মানুষের চলাচল ছিল। তখন নিউইয়র্কে সংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে রোগীদের সরিয়ে আনা হতো এই দ্বীপে। নির্জন এই দ্বীপে গড়ে তোলা হয় একটি হাসপাতাল। টাইফয়েডের চিকিৎসা দেওয়া হতো এখানে। চিকিৎসা চলাকালীন অনেক রোগীই এখানে মারা গেছে এবং তাদের মৃত্যুই এই দ্বীপকে অভিশপ্ত করে তুলেছে। সেই থেকে এ দ্বীপের প্রতি মানুষের কৌতূহল ও ভীতি দুটোই বেড়ে চলে। তখন থেকেই অনেকে এই দ্বীপকে মৃত্যুপুরী বলে মনে করতো। আবার মার্কিনীরা মনে করে মৃতদের আত্মাগুলো এ দ্বীপের নির্জনতায় লুকিয়ে থাকে। রাতের আঁধারে এরা ঘুরে বেড়ায় এবং মানুষের ঘাড় মটকে দেয়। দ্বীপ সম্পর্কে ভয়ঙ্কর এসব কথাবার্তা চারদিকে ছড়িয়ে পড়লে দ্বীপে মানুষের আনাগোনা কমতে শুরু করে। এভাবে দলে দলে মানুষ দ্বীপ ছেড়ে চলে যায়। ফলে জনমানবশূন্য দ্বীপের হাসপাতালটিও এক সময় পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে।

এদিকে ব্রাদার আইল্যান্ড সম্পর্কে মানুষের ভীতি দূর করার জন্য ১৯৫০ সালের দিকে এই দ্বীপে একটি মাদক নিরাময় কেন্দ্র স্থাপন করা হয়। তখন হেরোইন আসক্ত মানুষের চিকিৎসা দেয়া হতো এখানে। কিন্তু এই দ্বীপে আনার পর রোগীরা এমন অস্বাভাবিক আচরণ করতো যে, তাদের পাগলামি দেখে অনেক চিকিৎসকই এই দ্বীপ ছেড়ে পালিয়ে যান। এরপর আবারও পরিত্যক্ত হয়ে যায় হাসপাতালটি এবং দিন দিন জনমানব শূন্য হয়ে পড়ে ব্রাদার আইল্যান্ড। দ্বীপটিকে ঘিরে বের হতে থাকে নানান ধরনের ভৌতিক কাহিনী। এই দ্বীপে বসবাসকারীদের বর্ণনায় বেরিয়ে আসে ভয়ানক একেক ঘটনা। দ্বীপ থেকে ফেরত আসা অনেকেই অশুভ আত্মার ভয়ানক সব কর্মকাণ্ডের গল্প বলতে শুরু করে যা শুনে মানুষের মনে ভয় আরও বাড়তে থাকে। ব্রাদার আইল্যান্ড স্থায়ীভাবে প্রেতের দ্বীপ বলে কুখ্যাতি পায় এক হেরোইন আসক্ত ব্যক্তির কথায়, যাকে চিকিৎসার জন্য এই দ্বীপে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সে এই দ্বীপ থেকে ফিরে এসে জানায়, এই দ্বীপে রাতে মৃত মানুষেরা চলাফেরা করে আর রাতে কান্নার আওয়াজ শোনা যায়। দ্বীপের আনাচেকানাচে জ্বলে আগুন। দ্বীপটিকে দূর থেকে দেখলে মনে হতো স্বপ্নপুরী কিন্তু এর ভেতরে ঢুকলে সবুজ গাছের নিচে অন্ধকারে ডুবে যেতো। এই অন্ধকার পেরিয়ে দ্বীপে চলাচলের রাস্তা খুঁজে পাওয়া ছিল কঠিন। অনেকেই ভুল রাস্তায় হেঁটে ক্লান্ত হয়ে ঢুকে পড়তো পাথুরে গুহায়। এ দ্বীপের পাথুরে গুহাগুলো কেবল অন্ধকারেই মুখ খুলে বসে থাকে। যখন কেউ এ গুহায় ঢুকত অমনি বন্ধ হয়ে যেত গুহার মুখ।

১৯৬৩ সালের দিকে ব্রাদার আইল্যান্ড ছেড়ে লোকজন চলে যায় কিন্তু হাসপাতালটি সেখানে সে অবস্থাতেই পড়ে ছিল। মাদকাসক্তদের বসতবাড়ির ও আসবাবপত্র এখনো আগের মতোই পড়ে রয়েছে সেখানে। ১৯৭০ সালের দিকে দ্বীপটি বিক্রি করার চেষ্টা হয়। কিন্তু এই দ্বীপটি কিনতে কেউই আগ্রহী হয়নি। কেননা এমন অভিশপ্ত দ্বীপ কিনে বিপদ ডেকে আনতে চায়নি কেউ। তারপর থেকে দ্বীপটি পরিত্যক্ত অবস্থাতেই ছিল। ২০১০ সালের দিকে ব্রাদার আইল্যান্ডকে হঠাৎ করেই আবার আলোচনায় আনেন এক পর্যটক। ঘোরা ফেরার মধ্যে তিনি পথ ভুলে পৌঁছে যান এই দ্বীপের কাছে। তিনি তুলে আনেন এই দ্বীপের একের পর এক দুর্দান্ত ছবি। দ্বীপের ভেতরের চিত্রগুলো দেখে অনেকেই আগ্রহী হয়ে ওঠে এই দ্বীপের আসল রহস্য জানার।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএলিয়েন বন্ধু
পরবর্তী নিবন্ধচিটাগাং উইম্যান চেম্বারের প্রশিক্ষণ শুরু