এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে: শহরের যান চলাচলে উন্মোচিত হবে নতুন দিগন্ত

হাসান আকবর | রবিবার , ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ at ৭:৫৯ পূর্বাহ্ণ

বন্দরনগরীর যান চলাচলে ব্যাপক গতিশীলতা আনার লক্ষ্যে গৃহিত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের উপর দিয়ে আগামী মাসেই গাড়ি চলবে। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে চট্টগ্রামবাসীকে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে উপহার দেয়ার লক্ষ্যে অক্টোবরে উদ্বোধনের ডেটলাইন নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। শুরুতে পতেঙ্গা থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত সাড়ে ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে চালু করে দেয়া হবে। প্রাথমিকভাবে লালখান বাজারে মুরাদপুর থেকে আসা আখতারুজ্জামান চৌধুরী ফ্লাইওভারের সাথে যুক্ত করা না হলেও বিমানবন্দর থেকে আসা গাড়ি যাতে লালখান বাজারের ম্যাজিস্ট্রেট কলোনীর সামনে নামতে পারে তা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। একইভাবে ম্যাজিস্ট্রেট কলোনীর সামনে থেকে পতেঙ্গাগামী গাড়িকে ফ্লাইওভারে উঠার অস্থায়ী সুযোগ তৈরি করা হবে। পরবর্তীতে ১৫টি র‌্যাম্প নির্মাণ করে প্রকল্প পূর্ণতা দেয়া হবে। সরকারের বেধে দেয়া টার্গেটের মধ্যে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ শেষ করতে রাতে দিনে কাজ চলছে।

নগরীর যান চলাচলে গতিশীলতাসহ নানামুখী লক্ষ্যকে সামনে নিয়ে পতেঙ্গা থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত সাড়ে ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েকে লালখান বাজারে ইতোপূর্বে নির্মিত আখতারুজ্জামান চৌধুরী ফ্লাইওভারের সাথে যুক্ত করে দেয়া হবে। এতে করে পতেঙ্গা থেকে লালখান বাজার বলা হলেও মুলতঃ বহদ্দারহাট থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত ২২ কিলোমিটারেরও বেশি দীর্ঘ একটি ফ্লাইওভার তৈরি হচ্ছে। যা চট্টগ্রামের যান চলাচলের ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক গতিশীলতা তৈরি করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে।

২০১৭ সালের ১১ জুলাই জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) অনুমোদনের পর প্রকল্পটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছিল। এটি প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার তালিকাভুক্ত এ ক্যাটাগরির একটি প্রকল্প। ইতোমধ্যে প্রকল্পের কাজ ৮০ শতাংশ শেষ হয়েছে। প্রকল্পের বেশ কিছু কাজ বাকি থাকলেও আগামী অক্টোবরে ফ্লাইওভারের উপর দিয়ে যান চলাচল শুরু করার টার্গেট দেয়া হয়েছে। গণপূর্ত মন্ত্রনালয় থেকে এই ব্যপারে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হয়েছে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে।

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ বেশ দ্রুতগতিতে এগুচ্ছে বলে মন্তব্য করে প্রকল্প পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মাহফুজুর রহমান বলেছেন, ইতোমধ্যে ফ্লাইওভারের বেশিরভাগ অংশে উপরে যান চলাচলের জন্য রাস্তা তৈরি হয়ে গেছে। যেসব কাজ বাকি রয়েছে সেগুলোও আমরা দ্রুত সম্পন্ন করার চেষ্টা করছি। আশা করছি অক্টোবরের মধ্যে ফ্লাইওভারের উপর দিয়ে যান চলাচল করতে পারবে।

তিনি বলেন, শুরুতে পতেঙ্গা থেকে আসা গাড়ি যাতে লালখান বাজার ম্যাজিস্ট্রেট কলোনীর সামনে রাস্তায় নামতে পারে তার ব্যবস্থা করে দেয়া হবে। এয়ারপোর্টসহ পতেঙ্গা এলাকা থেকে আসা থেকে সরাসরি লালখানবাজারে নেমে যেতে পারবে। একইভাবে শহর থেকে এয়ারপোর্টমুখী গাড়িগুলোকেও লালখান বাজারে ফ্লাইওভারে উঠার একটি অস্থায়ী ব্যবস্থা করে দেয়া হবে। ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় কিছুটা পরিবর্তন এনে অস্থায়ীভাবে শহরের গাড়িগুলোকে লালখান বাজারে যাতে ফ্লাইওভারে উঠতে পারে তার ব্যবস্থা করা হবে। এতে করে পতেঙ্গা থেকে আসা গাড়িগুলো লালখান বাজার ম্যাজিস্ট্রেট কলোনীর সামনে নেমে ইচ্ছে করলে আমীন সেন্টারের সামনে থেকে আবারো মুরাদপুরমুখী ফ্লাইওভারে চড়তে পারবে। ওখান থেকে বহদ্দারহাট ফ্লাইওভার। অন্যদিকে বহদ্দারহাট ফ্লাইওভার হয়ে আসা গাড়িগুলো মুরাদপুর ফ্লাইওভার হয়ে আমীন সেন্টারের সামনে নেমে লালখান বাজারের ম্যাজিস্ট্রেট কলোনীর সামনে থেকে পুনরায় পতেঙ্গামুখী ফ্লাইওভারে উঠতে পারবে। ফলে বহদ্দারহাট থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত ফ্লাইওভারে যাতায়ত করা সম্ভব হবে। এতে শহরের যে কোন স্থান থেকে মাত্র ২০ থেকে ২৫ মিনিটে বিমানবন্দরসহ পতেঙ্গা অঞ্চলে যাতায়ত করা সম্ভব হবে বলেও সূত্রগুলো জানিয়েছে।

তবে ডিসেম্বরের মধ্যে পতেঙ্গা থেকে আসা ফ্লাইওভারকে আখতারুজ্জামান চৌধুরী ফ্লাইওভারের সাথে যুক্ত করা সম্ভব হবে বলেও প্রকল্প পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মাহফুজুর রহমান জানান।

তিনি বলেন, মুরাদপুর থেকে ফ্লাইওভারে উঠা কোন গাড়ি আর মাটি স্পর্শ না করেই পতেঙ্গা বিচ বা টানেল রোড পর্যন্ত পৌঁছে যাবে। পতেঙ্গা থেকে শহরে আসা গাড়িগুলো টাইগার পাস হয়ে লালখান বাজারে ম্যাজিস্ট্রেট কলোনির সামনে নিচে নামবে এবং যাদের মুরাদপুর বা বহদ্দারহাট কিংবা ওই রোড ধরে অন্য কোথাও যাওয়া দরকার তারা লালখান বাজার থেকে আবারো ফ্লাইওভারে চড়তে পারবে। টাইগারপাসে পাহাড় না কাটার জন্য এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের চার লেনের মধ্যে দুই লাইন নিচে নামিয়ে দিয়ে ডিজাইন করা হয়।

ইঞ্জিনিয়ার মাহফুজুর রহমান জানান, মুল ফ্লাইওভার থেকে ৮টি এলাকায় ১৫টি র‌্যাম্প নির্মাণ করা হবে, যেগুলো শহরের যান চলাচলের ক্ষেত্রে গতিশীলতা তৈরি করবে। এসব র‌্যাম্পের সহায়তায় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কানেক্টিভিটি বেড়ে যাবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, জিইসি মোড়ে পেনিনসুলা হোটেলের সামনে থেকে একটি র‌্যাম্প ফ্লাইওভারে উঠবে। যাতে জিইসি মোড় থেকে ফ্লাইওভারে উঠা যায়। এছাড়া টাইগারপাস মোড়ে দুইটি র‌্যাম্পের একটি সিআরবি রোড থেকে অপরটি আমবাগান রোড থেকে এসে ফ্লাইওভারে যুক্ত হবে। আগ্রাবাদ বাদামতলী মোড়ে ৪টি, ফকিরহাটে ১টি, নিমতলা মোড়ে ২টি, সিইপিজেড মোড়ে ২টি, সিমেন্ট ক্রসিংএ ১টি এবং কেইপিজেডের সামনে দুইটি র‌্যাম্প ফ্লাইওভারে যুক্ত হবে। সাড়ে ১৬ কিলোমিটারের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে এসব র‌্যাম্পসহ ২২ কিলোমিটার দীর্ঘ হবে। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে দেশীয় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স এবং চীনা প্রতিষ্ঠান রেনকিন যৌথভাবে প্রকল্পটির নির্মাণকাজ পরিচালনা করছে।

লেখক : চিফ রিপোর্টার, দৈনিক আজাদী

পূর্ববর্তী নিবন্ধচিকিৎসা সেবায় গরিবের ভরসা : চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
পরবর্তী নিবন্ধআমাদের পরিকল্পনা হচ্ছে, আধুনিক ও প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষাদান অব্যাহত রাখা