এলপিজিএলে বন্ধ হয়েছে ‘অনিয়মের’ গ্যাস বিক্রি

করণীয় ঠিক করতে বিপিসির ৫ সদস্যের কমিটি, আজ বৈঠক

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১ at ১০:২৪ পূর্বাহ্ণ

দৈনিক আজাদীতে গত ৬ জুলাই ৫৯১ টাকার গ্যাস গেট পার হলেই ৮৫০, এলপি গ্যাস লিমিটেড’ শীর্ষক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশের পর তোলপাড় শুরু হয় বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনে। নড়েচড়ে বসেন প্রতিষ্ঠানটির উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। প্রতিবেদন প্রকাশের পরে কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবকালীন সর্বশেষ কঠোর লকডাউন শুরু হওয়ার পর ভোক্তা পর্যায়ে গ্যাস বিক্রি বন্ধ করে দেয় এলপি গ্যাস লিমিটেড (এলপিজিএল)। তবে লকডাউন পরবর্তী গত ১৩ আগস্ট থেকে পুনরায় ভোক্তা পর্যায়ে গ্যাস বিক্রি শুরু হলে সর্বশেষ গত ২৫ আগস্ট প্রতিষ্ঠানটির বোর্ড সভায় বিপিসি চেয়ারম্যানের নির্দেশনায় ২৬ আগস্ট থেকে পুনরায় বন্ধ হয়ে যায় ভোক্তা পর্যায়ে গ্যাস বিক্রি। এদিকে ওই দিনের বোর্ড সভায় পরিচালক কাজী মুহাম্মদ মোজাম্মেল হক বলেন, ভোক্তা পর্যায়ে গ্যাস বিক্রির ক্ষেত্রে প্লান্ট এলাকার আশপাশের লোকজনই সুবিধাটি বেশি গ্রহণ করছে। অন্য এলাকার লোকজন এ সুবিধা গ্রহণের জন্য এত দূর থেকে আসবে না। একটি পরিবারের জন্য একটি সিলিন্ডার হলেই যথেষ্ট, সেখানে একজন দুইটি করে সিলিন্ডার পাওয়ায় অন্য সিলিন্ডার বিক্রির অসাধু কাজটি করতে পারে। তাছাড়া একই পরিবারের দুইটি বা তিনটি ভোক্তা কার্ড করে সিলিন্ডার নিয়ে তার বাইরে বিক্রি করে দিতে পারে। এজন্য কার্ড প্রদান ও একই পরিবারকে একটি কার্ডে গ্যাস দেয়ার বিষয়টি ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নেয়া উচিত।
এরপর সভার সভাপতির (বিপিসির চেয়ারম্যান) নির্দেশে ভোক্তা পর্যায়ে এলপি গ্যাস বিক্রির বিষয়টি কোম্পানির জন্য কতটুকু লাভজনক, ভোক্তা পর্যায়ে গ্যাস বিক্রি কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালন করা সম্ভব কিনা, সার্বিক বিষয় পর্যালোচনা করে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য ৫ সদস্যের কমিটি করা হয়। বিপিসির পরিচালক (বিপণন) কাজী মুহাম্মদ মোজাম্মেল হককে আহবায়ক করে গঠিত কমিটিতে এলপিজিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবু হানিফ, বিপিসির উপ-মহাব্যবস্থাপক (বন্টন ও বিপণন) মুহাম্মদ মোরশেদ হোসাইন আজাদ, উপ-মহাব্যবস্থাপক (বাণিজ্য ও অপারেশন) মোহাম্মদ জাহিদ হোসাইনকে সদস্য এবং এলপিজিএলের উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. ছিদ্দিক হোসেনকে সদস্য সচিব করা হয়েছে। কমিটি বিষয়টি পর্যালোচনা ও করণীর নির্ধারণ করতে আজ (৮ সেপ্টেম্বর) বিপিসিতে বৈঠকে বসার কথা রয়েছে।
এদিকে গত ৬ জুলাই প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর ১১ জুলাই বিপিসির মহাব্যবস্থাপক (বন্টন ও বিপণন) মো. আবুল কালাম আজাদ স্বাক্ষরিত এক পত্রে আজাদীতে প্রকাশিত প্রতিবেদনের বিষয়টি বিশ্লেষণপূর্বক জরুরি ভিত্তিতে বস্তুনিষ্ঠ মতামত ও সুপারিশ প্রদানের জন্য অনুরোধ জানিয়ে এলপি গ্যাস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে পত্র দেন। ওই প্রতিবেদনে উঠে আসে, ভোক্তাদের কাছে ৫৯১ টাকায় বিক্রি করা গ্যাস গেট পার হলেই সিন্ডিকেট সদস্যরা বেশি দামে কিনে নিচ্ছেন। এতে ভোক্তা কার্ডধারীরা সিলিন্ডারপ্রতি দেড়শ থেকে দুইশ টাকা পান। ভোক্তা পর্যায়ের গ্যাস বিপণনে অসাধু কয়েকজন শ্রমিকও জড়িত।
এরপর গত ২৮ জুলাই বিপিসির পত্রের জবাবে দেয়া এলপিজিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবু হানিফ স্বাক্ষরিত এক পত্রে উল্লেখ করা হয়, ‘এলপিজিএল থেকে গ্যাস ভর্তি সিলিন্ডার প্রাপ্তির পর গেট পার হলেই বেশি মূল্যে অন্য কারো নিকট কিংবা ব্যবসায়ীর নিকট বিক্রির বিষয়টি এলপিজিএল এর মাধ্যমে তদারকি করা কোনক্রমেই সম্ভব নয়। ভবিষ্যতে ভোক্তা পর্যায়ে এলপি গ্যাস বিক্রির ক্ষেত্রে এলপিজিএল কর্তৃপক্ষ নজরদারি বৃদ্ধি করবে।’ এলপিজিএল থেকে বর্তমানে সাড়ে চার হাজার ভোক্তা কার্ড ইস্যু করা হয়েছে বলে ওই পত্রে উল্লেখ করা হয়। পাশাপাশি ভোক্তা পর্যায়ে মাসে দুইটি সিলিন্ডার সরবরাহের বিষয়ে বিপিসির গঠনমূলক নির্দেশনা চেয়ে অনুরোধ করা হয় ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবু হানিফ স্বাক্ষরিত একইপত্রে। পরবর্তীতে বিপিসির নির্দেশনা মোতাবেক করণীয় ঠিক করতে বিষয়টি বোর্ড সভায় তোলা হয়।
এ বিষয়ে ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবু হানিফ দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘এলপিজিএলের ভোক্তা পর্যায়ে গ্যাস বিক্রির বিষয়ে গত ২৫ আগস্ট বোর্ড সভায় আলোচনা হয়েছে। আলোচনা নানা সমস্যা উঠে আসায় গত ২৬ আগস্ট থেকে ভোক্তা পর্যায়ে গ্যাস বিক্রি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তাছাড়া করণীয় নির্ধারণে পর্ষদ সভায় ৫ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। বুধবার কমিটির বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। ’

পূর্ববর্তী নিবন্ধসাক্ষী মিয়ানমার নাগরিক তার সাক্ষ্য বৈধ নয়
পরবর্তী নিবন্ধকোন দিশা খুঁজছেন বিদিশা?