এবার চট্টগ্রামে ২শ বেদে পেলেন করোনার টিকা

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ২৬ নভেম্বর, ২০২১ at ৭:২১ পূর্বাহ্ণ

বিশেষ কর্মসূচির আওতায় এবার বেদে সমপ্রদায়ের ২০০ জন করোনার টিকা পেলেন চট্টগ্রামে। গতকাল দুপুরে নগরের মনসুরাবাদস্থ বেদে পল্লীতে বিশেষ বুথ স্থাপনের মাধ্যমে তাদের টিকা দেয়া হয়। বিশেষ করে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) বা জন্ম নিবন্ধন সনদ না থাকাসহ বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার কারণে টিকার জন্য অনলাইনে যাদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ নেই এবং যারা রেজিস্ট্রেশন করতে পারেন নি এ ধরণের জনগোষ্ঠীকে টিকার আওতায় আনতে বিশেষ এই কর্মসূচি স্বাস্থ্য বিভাগের।
বেদে সমপ্রদায়ের এ জনগোষ্ঠীর বেশির ভাগেরই জাতীয় পরিচয়পত্র নেই। যার কারণে করোনার টিকার জন্য অনলাইনে রেজিস্ট্রেশনেরও সুযোগ ছিল না অনেকটা অবহেলিত এ জনগোষ্ঠীর। এখন রেজিস্ট্রেশন ছাড়াই টিকা নিতে পেরে বেশ উচ্ছ্বাস দেখা গেছে তাদের চোখে-মুখে। বিশেষ কর্মসূচির আওতায় কেবল তালিকার ভিত্তিতেই তাদের টিকা প্রয়োগ করা হয়েছে। তৃতীয় লিঙ্গের সংগঠন নবজাগরণ হিজড়া শ্রমজীবী সমবায় সমিতির পরিচালক ফাল্গুনী হিজড়ার আবেদনের প্রেক্ষিতে বেদে জনগোষ্ঠীকে টিকা প্রয়োগের এ সিদ্ধান্ত নেয় সিভিল সার্জন কার্যালয়।
গতকাল দুপুরে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে এই টিকাদান কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী। ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ আসিফ খানের সভাপতিত্বে টিকাদান কার্যক্রমে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মীরসরাই উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কর্মকর্তা ডা. শাহেদা আকতার, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এসআইএমও ডা. এফ.এম জাহেদুল ইসলাম, জেলা স্বাস্থ্য তত্ত্বাবধায়ক সুজন বড়ুয়া, হেলথ অ্যাডুকেটর প্রবীর মিত্র, নবজাগরণ হিজড়া শ্রমজীবী সমবায় সমিতির পরিচালক ফাল্গুনী হিজড়া, স্বাস্থ্য পরিদর্শক প্রদীপ কুমার দেব, স্বাস্থ্য পরিদর্শক শক্তি বড়ুয়া ও সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক আকতার বানু।
সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী বলেন, হিজড়া ও বেদে সম্প্রদায়সহ পিছিয়ে থাকা অন্যান্য জনগোষ্ঠীর জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকলেও তারা আমাদের সমাজেরই মানুষ। সুরক্ষা অ্যাপসের মাধ্যমে তারা ভ্যাকসিনের রেজিস্ট্রেশন করতে পারছেন না। তাদেরকে বাদ দিয়ে আমরা সুরক্ষিত থাকতে পারি না। তাই সাধারণ মানুষের পাশাপাশি আমরা তৃতীয় লিঙ্গ ও বেদে জনগোষ্ঠীকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনতে পেরেছি। এভাবে সমাজের পিছিয়ে পড়া অন্যান্য জনগোষ্ঠীকেও ভ্যাকসিনের আওতায় আনার পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে। যে শ্রেণির মানুষ কিংবা লিঙ্গের হোক না কেন কেউ এ কার্যক্রম থেকে বাদ যাবে না। পর্যায়ক্রমে সবাইকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনা হবে।
প্রসঙ্গত, এর আগে গত ২১ নভেম্বর থেকে নগরের বস্তিবাসী জনগোষ্ঠীদের টিকাদান শুরু হয় চট্টগ্রামে। প্রায় সাড়ে ৩’শ তৃতীয় লিঙ্গের (হিজড়া) জনগোষ্ঠীকে টিকা দেয়া হয় ২২ নভেম্বর। সর্বশেষ গতকাল (২৫ নভেম্বর) বেদে সমপ্রদায়ের ২০০ জনকে করোনার এই টিকা দেয়া হল। টিকা গ্রহণের পর স্বাস্থ্য বিভাগকে ধন্যবাদ জানিয়ে বেদে সম্প্রদায়ের বুবলি ও তাহিরুণ বলেন, আমাদের বেশির ভাগের এনআইডি নেই। যার কারণে টিকার জন্য নিবন্ধন করতে পারিনি। নিবন্ধন করতে না পারায় টিকাও নিতে পারিনি। আমরা তো টিকা হয়তো পাবো না বলেই ধরে নিছিলাম। কিন্তু এনআইডি ছাড়া, নিবন্ধনের ঝামেলা ছাড়া এখানে খুব সহজে টিকা নিতে পেরেছি। ফাল্গুনী হিজড়ার (নবজাগরণ হিজড়া শ্রমজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি) সহযোগিতায় এবং স্বাস্থ্য বিভাগের আন্তরিকতায় আমরা টিকা নিতে পারলাম। এজন্য তাদের ধন্যবাদ জানাই। টিকা পেয়ে আমরা খুব খুশি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমাসে দেড় হাজার ‘চায়না ফরম’ সরবরাহের আশ্বাস দূতাবাসের
পরবর্তী নিবন্ধব্যাংকে নিয়োগে বয়সে ছাড়