চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের আগামীকালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী এটিএম পেয়ারুল ইসলাম কাস্টিং ভোটের ৯০ ভাগের বেশি ভোট পাবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন তার নির্বাচন পরিচালনা কমিটির নেতারা। সমন্বিত উন্নয়নের মাধ্যমে চট্টগ্রাম জেলা পরিষদকে মডেল জেলা পরিষদে উন্নীত করতে আওয়ামী লীগ সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী এটিএম পেয়ারুল ইসলামকে আনারস মার্কায় ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন নির্বাচন পরিচালনা কমিটি নেতৃবৃন্দ।
গতকাল শনিবার বিকেলে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের এস রহমান হলে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী এটিএম পেয়ারুল ইসলামের পক্ষে ১২ দফা ইশতেহার ঘোষণা উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আ জ ম নাছির উদ্দিন।
সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন এটিএম পেয়ারুল ইসলাম। তিনি বলেন, রাজনীতি আমার জন্য ইবাদত। আমার মতে, আওয়ামী লীগ করা পূণ্যের কাজ। এই দল করে এতটুক এসেছি। দলীয় সভানেত্রী আমাকে জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন দিয়ে যে আস্থা রেখেছেন তার প্রতিদান প্রতি মুহূর্তে দেবো। তিনি আরও বলেন, চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলে চট্টগ্রাম জেলা পরিষদকে মডেল জেলা পরিষদে পরিণত করবো। প্রতিটি এলাকার জনপ্রতিনিধি এবং বিশিষ্ট নাগরিকদের নিয়ে সমবণ্টনের ভিত্তিতে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালিত করবো।
সংবাদ সম্মেলনে আরো বক্তব্য রাখেন মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী। চট্টগ্রামের উন্নয়নে পেয়ারুল ইসলামকে সর্বাত্মক সহযোগিতার আহ্বান জানিয়ে সাবেক সিটি মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, দলীয় প্রার্থীর সমর্থনে সিটি করপোরেশন, উপজেলা, পৌরসভা এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে ভোটারদের সঙ্গে মতবিনিময় ও গণসংযোগ করেছি। এসব কর্মসূচিতে ভোটারদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ লক্ষ্য করেছি। একই সঙ্গে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে ব্যাপক সমর্থন পেয়েছি। ভোট কাস্টিংয়ের ভিত্তিতে ৯০ ভাগের বেশি ভোট পাবেন আমাদের প্রার্থী। এটিএম পেয়ারুল ইসলাম ২০০৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফটিকছড়ি সংসদীয় আসন থেকে মহাজোটের প্রার্থী ছিলেন। আন্দোলন সংগ্রাম করতে গিয়ে বারে বারে কারা নির্যাতিত এবং একাধিকবার মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েও আপোষহীন, সাহসী, দৃঢ়চেতা, সৎ ও পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ হিসেবে জননন্দিত ব্যক্তিতে পরিণত হয়েছেন। তিনি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হলে যোগ্যতা এবং দক্ষতার পরিচয় দিতে সক্ষম হবেন।
দেশের সবচেয়ে বৃহৎ এবং প্রাচীন জেলা পরিষদ চট্টগ্রাম দেশের অনেক জেলা পরিষদ থেকে ১৫ গুণেরও বেশি বড়। এটির সামগ্রিক উন্নয়নে পরিকল্পিতভাবে প্রকল্প গ্রহণ করে সর্বোচ্চ বাজেট বরাদ্দ নিশ্চিত করা হবে জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে ১২ দফা ইশতেহার তুলে ধরা হয়। সেগুলো হল- জনপ্রতিনিধির সমন্বয়ে চট্টগ্রামের রোডম্যাপ তৈরি করে সরকার থেকে উন্নয়ন বরাদ্দ করে সিটি করপোরেশন ও সব উপজেলায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সমভাবে উন্নয়ন করা; চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের সম্পত্তিসমূহ যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে আয়বর্ধক প্রকল্প গ্রহণ করা; জেলা পরিষদের নিয়মিত কর্মকর্তা ও কর্মচারী বাড়িয়ে প্রয়োজনীয় উন্নয়ন প্রকল্পের মান নিশ্চিত করে নির্ধারিত সময়ে শেষ করার চেষ্টা করা; অন্যান্য সরকারি সংস্থা ও প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখা; পরিবেশ রক্ষায় ‘গ্রিন চট্টগ্রাম’ হিসেবে গড়ে তোলা; কারিগরি ও প্রযুক্তিগত শিক্ষার পাশাপাশি সার্বিক শিক্ষার মান উন্নয়নে ভূমিকা রাখা; মাদক ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করা; ছেলে মেয়েদের ক্রীড়ামুখী করতে ইনডোর এবং আউটডোর মান উন্নয়ন গ্রহণ করা; গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙ্গা করতে পোল্ট্রি, ডেইরি ও দুগ্ধ শিল্প, হ্যাচারি শিল্প, গরু, ছাগলসহ কৃষিতে বিজ্ঞানভিত্তিক চাষাবাদের উদ্যোগ নেওয়া; স্থানীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে লালন ও চর্চার ব্যবস্থা করা; প্রবাসী রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধির উদ্যোগ নেয়াসহ প্রিয় চট্টগ্রামকে সাজানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা চালানো প্রতিশ্রুতি দেয়া হয় ইশতেহারে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য মজাহারুল হক শাহ চৌধুরী, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ আতাউর রহমান, চট্টগ্রাম ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী প্রবীর কুমার সেন, বঙ্গবন্ধু প্রকৌশল পরিষদের সভাপতি প্রকৌশলী মোহাম্মদ হারুন, চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এএইচএম জিয়াউদ্দিন, চবি শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর সেকান্দর চৌধুরী, মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রদীপ কুমার দাশ, ফটিকছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান এইচএম আবু তৈয়ব, ফটিকছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাজিম উদ্দীন মুহুরি, মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি আশীষ ভট্টাচার্য, সাবেক ছাত্রনেতা মনজুর মোরশেদ ফিরোজ, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ কমিটির সদস্য বেলাল নূরী, সাদাত আনোয়ার সাদী, উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রাজীবুল আহসান সুমন প্রমুখ।