শেষ মুহূর্তে চলছে সৌন্দর্যবর্ধন

আনোয়ারা প্রতিনিধি | রবিবার , ১৬ অক্টোবর, ২০২২ at ৫:২৭ পূর্বাহ্ণ

কর্ণফুলীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলে যে দুটি টিউবে গাড়ি চলাচল করবে সেগুলোর কাজ শেষ হয়েছে বহু আগেই। আগামী ডিসেম্বরে উদ্বোধনের টার্গেট রেখে এখন চলছে সৌন্দর্যবর্ধন ও নিরাপত্তামূলক ‘ইলেক্ট্রো মেকানিক্যাল’ কাজ। এসব কাজে নিয়োজিত আছেন আড়াইশ প্রকৌশলীসহ প্রায় দেড় হাজার শ্রমিক। উদ্বোধনের আগে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি হিসেবে অগ্নি নিরাপত্তা, লাইটিং, কন্ট্রোল ব্যবস্থাপনার সমন্বিত ইলেক্ট্রো মেকানিক্যাল কাজ চলছে রাতদিন। সেই সঙ্গে কোনো টিউবে দুর্ঘটনা হলে একটি থেকে আরেকটিতে যাওয়ার জন্য তিনটি ক্রস প্যাসেজ বানানো হচ্ছে। আর দক্ষিণ প্রান্তে আনোয়ারায় চলছে সংযোগ সড়কের সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ। গতকাল শনিবার টানেলের আনোয়ারা প্রান্তে গিয়ে দেখা যায়, সৌন্দর্যবর্ধক গাছ লাগানো ও সংযোগ সড়কের ঢালুতে ঘাস লাগাতে ব্যস্ত নার্সারি শ্রমিকেরা। আবুল হোসেন নামে এক নার্সারি কর্মী বলেন, আমাদের দেড়শ কর্মী দেড় মাস ধরে সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ করে যাচ্ছে। কাজ এখন শেষ পর্যায়ে রয়েছে।
কর্ণফুলী নদীর উপর বর্তমানে শাহ আমানত সেতু নামের একটি সেতু রয়েছে। শহরের প্রাণকেন্দ্র কোতোয়ালী বা বহদ্দারহাট সড়ক হয়ে এই সেতুতে পৌঁছাতে হয়। অপরদিকে শহরের শেষ প্রান্তে পতেঙ্গা হয়ে প্রবেশ করতে হবে টানেলে। সেতু আর টানেলের পার্থক্য হল টানেল ব্যবহার করে অন্তত ১৯ মিনিট আগে নদী পার হয়ে অপর প্রান্তে চলে যাওয়া যাবে। সমীক্ষা রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রথম দিন থেকে টানেলে প্রতিদিন চলাচল করবে ১৭ হাজার যানবাহন। ২০২৫ সালে তা বেড়ে দাঁড়াবে ২৮ হাজারে।
এদিকে টানেল চালুর চূড়ান্ত প্রস্তুতি হিসাবে টোল হার নির্ধারণের প্রক্রিয়াও শুরু হয়ে গেছে। শাহ আমানত সেতুর সঙ্গে তুলনামূলক পর্যালোচনায় রেখে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ (বিবিএ) টোলের সম্ভাব্য একটি প্রস্তাবনা সেতু মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে বলে জানা গেছে। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, ২ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য, ৩৫ ফুট প্রশস্ত, ১৬ ফুট উচ্চতার টানেল টিউবে যান চলাচলের জন্য প্রায় সব কাজ শেষ। সবকিছু ঠিকঠাকমত চললে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে টানেল চালু করে দেয়া হবে। বঙ্গবন্ধু টানেলের প্রকল্প পরিচালক হারুনুর রশীদ চৌধুরী দৈনিক আজাদীকে বলেন, টানেলের মূল কাজ প্রায় শেষ। এখন ফায়ার ফাইটিংসহ মেকানিক্যাল কিছু কাজ চলছে। সেই সঙ্গে দুটি টিউবের মধ্যে ক্রস প্যাসেজের কাজ চলমান রয়েছে।
জানা যায়, দুটি টিউবের কোনো একটিতে দুর্ঘটনা ঘটলে সহজে যাতে অপর টিউবে চলে যাওয়া যায় সেজন্য তিনটি ক্রস প্যাসেজ তৈরি করা হচ্ছে। মূল টানেলের টিউব বোরিং মেশিনের মাধ্যমে করা হলেও আন্তঃসংযোগের তিন ক্রস প্যাসেজ করতে হচ্ছে ফ্রিজিং (কৃত্রিম জমাট বাধানো) পদ্ধতিতে। এ কাজ বেশ চ্যালেঞ্জিং। তিন প্যাসেজের মধ্যে দুইটির কাজও এর মধ্যে শেষ। অপরটির কাজ চলছে। এই পথ দিয়ে কোনো গাড়ি চলবে না। কোনো দুর্ঘটনা হলে কেবল তখনই একটি থেকে অন্যটিতে যেতে ব্যবহার হবে।
সূত্র জানায়, টানেলে দাহ্য পদার্থবাহী পরিবহন, মোটর সাইকেল, অটোরিক্সাসহ কিছু যানবাহন চলাচল করার সুযোগ দেয়া হবে কিনা সে ব্যাপারে বিশেষজ্ঞ মতামত চাওয়া হয়েছে। এছাড়া টোল হার নিয়ে একটি প্রস্তাবনাও সেতু বিভাগ থেকে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। বর্তমান শাহ আমানত সেতুর টোল হার থেকে টানেলের টোলের পরিমাণ দেড় থেকে আড়াইগুণ বেশি হতে পারে বলে জানা গেছে। শাহ আমানত সেতুর বর্তমান টোল রেট মোটরসাইকেলের জন্য ১০ টাকা, অটোরিকশার জন্য ৩০ টাকা, বাসের জন্য ১৫৫ টাকা, মিনিবাসের জন্য ১০০ টাকা, মাইক্রোবাস-কার ও জিপের জন্য ৫০-১০০ টাকা, মিনি ট্রাকের জন্য ১৩০ টাকা, মাঝারি আকারের ট্রাকের জন্য ২০০ টাকা, ট্রাকের জন্য ৩০০ টাকা এবং লম্বা ট্রেলারের জন্য ৭৫০ টাকা।
প্রকল্প পরিচালক হারুনুর রশীদ চৌধুরী বলেন, টানেল বাংলাদেশের জন্য রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা। নদীর তলদেশে সাড়ে ৩ কিলোমিটার পথে গাড়ির সর্বোচ্চ গতি হবে ৮০ কিলোমিটার। এই গতিতে ৫/৬ মিনিটে শহর প্রান্তের পতেঙ্গা নেভাল থেকে নদী পার হয়ে চলে যাওয়া যাবে আনোয়ারা প্রান্তে।
চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, টানেল হলে আনোয়ারা থেকে টেকনাফ পর্যন্ত অর্থনৈতিক অঞ্চল হবে। এর ফলে টানেল সড়কের দুই পাশে অন্তত ৯ হাজার একর জমিতে হবে শিল্পায়ন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপ্রধানমন্ত্রীর কোনো ফেসবুক আইডি নেই
পরবর্তী নিবন্ধএটিএম পেয়ারুলের ১২ দফা ইশতেহার ঘোষণা