এটিএম আজহারুল ইসলামের মুক্তি দাবিতে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম

লালদীঘি মাঠে জামায়াতের সমাবেশ

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ at ৮:৩২ পূর্বাহ্ণ

দলের কারাবন্দী নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামের মুক্তির দাবিতে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদ।

তিনি বলেন, আমাদের আপনারা বাধ্য করবেন না। ৪৮ ঘণ্টা সময় দেওয়া হলো। ২০ তারিখের (ফেব্রুয়ারি) মধ্যে যদি আমরা আমাদের প্রিয় নেতাকে বুকে জড়িয়ে ধরে মুক্তমঞ্চে আনতে না পারি, তাহলে গোটা বাংলাদেশজুড়ে অব্যাহত কর্মসূচি চলবে। আমরা অনেক ধৈর্য্যের পরীক্ষা দিয়েছি। দেওয়ালে পিট ঠেকে গেলে পেছনে যাবার জায়গা থাকে না। সুতরাং বাংলাদেশ ফুঁসে ওঠার আগে, উত্তাল তরঙ্গের ঢেউ সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়ার আগে আপনাদের শুভবুদ্ধির উদয় হোক। আজহার ভাইয়ের মুক্তি চাই, অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে।

তিনি গতকাল মঙ্গলবার নগরের লালদীঘি মাঠে জামায়াতে ইসলামী চট্টগ্রাম মহানগর শাখার উদ্যোগে এটিএম আজহারুল ইসলামের মুক্তির দাবিতে আয়োজিত ‘বিশাল সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল’এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। এতে সভাপতিত্ব করেন জামায়াতে ইসলামীর চট্টগ্রাম মহানগরী আমীর শাহজাহান চৌধুরী। সমাবেশ শেষে নগর জামায়াতের এক বিশাল বিক্ষোভ মিছিল লালদীঘি থেকে শুরু হয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে পুরাতন রেল স্টেশনে গিয়ে শেষ হয়।

সাবেক এমপি এ এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, আজকে গোটা বাংলাদেশের মানুষ ফুঁসে উঠেছে। আমরা বন্দিশালার তালা ভাঙতে চাই না। বিগত ১৫ বছর আমাদের রক্ত ঝরেছে, কারাবরণ ও ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলিয়েছে। বিরোধী দল দমন করার জন্য গায়েবি মামলা দায়ের করেছিল। জামায়াতকে আদর্শিকভাবে মোকাবেলা করতে না পেরে মামলা দিয়ে হয়রানি করেছিল। সাজানো মামলা এবং ফরমায়েশি রায়ের মাধ্যমে এটিএম আজহারকে বন্দী রাখা হয়েছে। বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার জন্য অসংখ্যবার জেল খেটেছেন এটিএম আজহার। তিনি ১৩ বছরের অধিককাল কারাগারে বন্দী। এভাবে ফ্যাসিবাদের আমলে নির্যাতিত হয়েছে। জামায়াত ইসলামী অন্যায় ও অবিচারের কাছে মাথা নত করবে না। ন্যায় বিচারের জন্য ৫ আগস্ট ছাত্রজনতা রক্ত দিয়েছে। আমাদেরকে আপনারা বাধ্য করবেন না।

আযাদ বলেন, স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকার ২০১১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর জামায়াত নেতা এটিএম আজহারকে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে বাসায় ফেরার পথে গ্রেপ্তার করে। তিনি ২০১২ সালে জামিনে মুক্তি পেলেও আওয়ামী সরকার তাকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মিথ্যা মামলা দিয়ে আবারও বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে। তিনি সম্পূর্ণ নিরপরাধ। তাকে সম্পূর্ণ মিথ্যা ও সাজানো মামলায় মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। তিনি ন্যায় বিচার পাননি। ন্যায়ভ্রষ্ট ও বিচারিক ষড়যন্ত্রের স্বীকার হন। তিনি বলেন, ২০২৪ সালে ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরাচারী হাসিনা দেশ ছেড়ে পালালে দেশবাসী স্বৈরাচারের কবল থেকে মুক্তি লাভ করে, ফলে রাজনৈতিক মিথ্যা মামলায় ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের গ্রেপ্তারকৃত নেতাকর্মী মুক্তি লাভ করে। কিন্তু অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আজ ছয় মাস ১০ দিন অতিবাহিত হওয়া সত্বেও এখনো পর্যন্ত জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মজলুম জননেতা এটিএম আজহারুল ইসলাম মুক্তি লাভ করেনি। দেশবাসী আশা করেছিল চরম অত্যাচার, জুলুম, নির্যাতনের শিকার জননেতা এটিএম আজহারুল ইসলাম মুক্তি লাভ করবেন। কিন্তু দীর্ঘদিন তা হয়নি। তাই জামায়াতে ইসলামী রাজপথে নামতে বাধ্য হয়েছে। জামায়াত স্বৈরশাসকের আমলে চরম নির্যাতনের শিকার। আর স্বৈরশাসকমুক্ত বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামী এখনো বৈষম্যের শিকার।

এটিএম আজহারুল ইসলাম কারারুদ্ধ অবস্থায় নিজের স্ত্রীকে হারিয়েছেন, প্যারোলে মুক্তি পেয়ে তিনি জানাজায় শরিক হয়েছিলেন। ফ্যাসিবাদের আমলে আমরা এভাবে অনেকেই নির্যাতিত হয়েছি। প্রশ্ন হচ্ছে, দেশে কি এখন ফ্যাসিবাদ আছে? ফ্যাসিবাদ পালিয়ে গেছে। কিন্তু আমার ভাই এটিএম আজহারুল ইসলাম এখনো জনতার কাতারে ফিরে আসতে পারেননি। ফ্যাসিবাদের পতনের পরও কেন জামায়াত নির্যাতনের শিকার হবে, এটা জাতি জানতে চায়।’

তিনি বলেন, আমরা ন্যায়বিচার পাইনি, সুবিচার পাইনি। আমাদের ছাত্রসমাজের স্লোগান ছিলউই ওয়ান্ট জাস্টিস। আমরাও বলছিউই ওয়ান্ট জাস্টিস। ন্যায়বিচারের প্রত্যাশায়, ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য তরুণরা রক্ত দিয়েছে। তাহলে আজও কি আমরা ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হবো? এটা কি জুলুম নয়জাতির কাছে এ প্রশ্ন রেখে গেলাম। বর্তমান সরকার এ দেশের মানুষের রক্তের ওপর, লাশের ওপর দাঁড়িয়ে শপথ নিয়েছে। ১৫ বছর আমাদের রক্ত ঝরেছে, অত্যাচার, জুলুম, নির্যাতন, কারাবরণ, ফাঁসির রশিতে আমাদের নেতাদেরকে ঝোলানো হয়েছে। এমন একটি প্রেক্ষাপটে এ সরকার ক্ষমতায় এসেছে, জনগণের আন্দোলনের ফসল। সেই সরকারের কাছে জেলের তালা ভেঙে আমাদের নেতাদের মুক্ত করতে হবে, আবার রাজপথে নামতে হবে, এটা আমরা কখনও ভাবিনি।

তিনি বলেন, ৫ আগস্ট বঙ্গভবনে সেদিন সাতটি রেজ্যুলেশন হয়েছিল। সেদিন সকল রাজনৈতিক দল একটি কথা বলেছে, আওয়ামী ফ্যাসিবাদের আমলে যত বেআইনি মিথ্যা মামলা হয়েছে, সকল মামলার আসামিদের নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে। সেই রেজ্যুলেশনে প্রেসিডেন্ট সম্মত হয়েছিলেন বলেই বেগম খালেদা জিয়াসহ অসংখ্য রাজবন্দী মুক্তি পেয়েছেন।

শাহজাহান চৌধুরী বলেন, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার শাসনামলে বিচারিক কার্যক্রমসমূহ সারা বিশ্বে বিতর্কিত, প্রশ্নবিদ্ধ ও প্রত্যাখ্যাত। স্বৈরাচারের আমলে গ্রেপ্তারকৃত এটিএম আজহারুল ইসলামকে কারাগারে আটক রাখা তার প্রতি চরম জুলুম ও অন্যায় ছাড়া আর কিছুই নয়। ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশে তাকে এখনো আটক রাখায় জাতি বিস্মিত ও হতবাক। তিনি বলেন, দেশবাসী স্বৈরাচারের কবল থেকে পরিপূর্ণভাবে মুক্তি চায়। এই পরিস্থিতিতে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলামকে অবিলম্বে মুক্তি দেওয়ার জন্য আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছি। পলাতক স্বৈরাচার খুনী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।

সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর চট্টগ্রাম অঞ্চল টিম সদস্য অধ্যাপক আহছানুল্লাহ ভুঁইয়া, জাফর সাদেক, অধ্যক্ষ মাওলানা আমিরুজ্জামান ও অধ্যাপক নুরুল আমিন চৌধুরী, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা জামায়াতের আমীর আনোয়ারুল আলম চৌধুরী, উত্তর জেলা জামায়াতের আমীর আলা উদ্দিন সিকদার, চট্টগ্রাম মহানগরীর নায়েবে আমীর ড. আ জ ম ওবায়েদুল্লাহ ও মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম, সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মুহাম্মদ নুরুল আমিন, দক্ষিণ জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মাওলানা বদরুল হক, উত্তর জেলা সেক্রেটারি আবদুল জব্বার, নগর জামায়াতের এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মাওলানা খাইরুল বাশার, মুহাম্মদ উল্লাহ ও ফয়সাল মুহাম্মদ ইউনুস, নগর জামায়াতের সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ শামসুজ্জামান হেলালী, সাংগঠনিক সম্পাদক ডা এ কে এম ফজলুল হক, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি এস এম লুৎফর রহমান, ছাত্রশিবির চট্টগ্রাম মহানগর উত্তরের সভাপতি তানজির হোসেন জুয়েল, দক্ষিণের সভাপতি ইব্রাহিম হোসেন রনি। উপস্থিত ছিলেন ছাত্রশিবিরের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি মুহাম্মদ ইব্রাহিম হোসেন, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা জামায়াতের এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মাওলানা জহিরুল ইসলাম, দক্ষিণ জেলা জামায়াত নেতা ডা. আবু নাসের, উত্তর জেলা জামায়াতের এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি আনোয়ার সিদ্দিক চৌধুরী।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরুমায় বাস চাপায় স্কুলছাত্র নিহত, ক্ষুব্ধ জনতা আগুন দিল বাসে
পরবর্তী নিবন্ধতিস্তাকে প্রয়োজনে জাতিসংঘের দৃষ্টিতে আনতে হবে : তারেক