এখন সময় সামনে এগিয়ে যাওয়ার : প্রধানমন্ত্রী

বর্ণাঢ্য আয়োজনে পর্দা উঠলো ‘মুজিব চিরন্তনের’

আজাদী ডেস্ক | বৃহস্পতিবার , ১৮ মার্চ, ২০২১ at ৫:৪৯ পূর্বাহ্ণ

‘ভেঙেছ দুয়ার, এসেছ জ্যোতির্ময়, তোমারি হউক জয়। তিমিরবিদার উদার অভ্যুদয়, তোমারি হউক জয়’- কবিগুরুর লেখা এ গানের পংক্তিটি যেন বঙ্গবন্ধুর জীবনের সঙ্গে সবচেয়ে তাৎপর্যময়। পাকিস্তানি শাসনের বিরুদ্ধে তারই নেতৃত্বে বিশ্ব মানচিত্রে অঙ্কিত হয় বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের। তিনি পরিণত হন ‘ইতিহাসের মহানায়ক’ হিসেবে। গতকাল বুধবার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উৎসব এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে শুরু হয়েছে ‘মুজিব চিরন্তন’ শীর্ষক দশদিনের আয়োজন। যার প্রথম দিনের প্রতিপাদ্য ছিল ‘ভেঙেছ দুয়ার এসেছে জ্যোতির্ময়’। রাজধানীর জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি। গতকাল এ আয়োজনে প্রধান অতিথি ছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে যোগ দেন মালদ্বীপের রাষ্ট্রপতি ইব্রাহিম মোহাম্মদ সলিহ।
বাসস বাংলানিউজসহ বিভিন্ন সংবাদ সংস্থা পরিবেশিত খবরে বলা হয়, আয়োজনের শুরুতেই শত শিশুকণ্ঠে গীত হয় বাঙালির জাতীয় সঙ্গীত ‘আমার সোনার বাংলা/আমি তোমায় ভালোবাসি’। এরপর তারা কণ্ঠে তুলে নেয় কবিগুরুর গান ‘আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে বিরাজ সত্যসুন্দর’ গানটি। এরপর শিশু কণ্ঠগুলো গেয়ে শোনান জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘শুকনো পাতার নুপূর পায়ে নাচিছে ঘূর্ণি বায়’। এরপর তারা গেয়ে শোনান ‘ধন্য হয়েছি, পূর্ণ হয়েছি, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে জন্ম হয়ে’ গানটি। সবাইকে স্বাগত জানিয়ে বক্তব্য রাখেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ বিরোধী অপশক্তি এখনও দেশে-বিদেশে সক্রিয় রয়েছে। তারা নানা অপতৎপরতার মাধ্যমে এ অর্জনকে নস্যাৎ করতে চায়। তবে, এখন সময় সামনে এগিয়ে যাওয়ার। বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, আজ বাংলাদেশ যে অবস্থানে পৌঁছেছে, সেখান থেকে তাকে সহজে নামানো যাবে না। তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ হচ্ছে, আমরা এই করোনাভাইরাস মহামারির অভিঘাত সফলভাবে মোকাবেলা করতে সক্ষম হয়েছি। তবে আমাদের সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের শুভ জন্মদিনে আসুন আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে সকল অপতৎপরতা প্রতিহত করে প্রিয় মাতৃভূমিকে উন্নয়ন-অগ্রগতির পথ ধরে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাই। তিনি বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে আমরা বাংলাদেশ উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তোলার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখব। এখন শুধু আমাদের সামনে এগিয়ে যাওয়ার পালা। পেছনে ফিরে তাকানোর কোনো সুযোগ নেই। সকল বাধা বিপত্তি অতিক্রম করে এদেশকে আমরা জাতির পিতা বঙ্গন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শোষণ ও বঞ্চনা মুক্ত, ক্ষুধা, দারিদ্র ও নিরক্ষরতা মুক্ত অসামপ্রদায়িক চেতনার সোনার বাংলাদেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করবো, ইনশাল্লাহ। এটাই আজকের দিনে আমাদের প্রতিজ্ঞা। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে জাতির পিতার ছোট মেয়ে শেখ রেহানাও অংশগ্রহণ করেন। এছাড়া রাষ্ট্রপতি মো.আব্দুল হামিদের সহধর্মিনী রাশিদা খানম এবং মালদ্বীপের প্রেসিডেন্টের সহধর্মিনী ফাজানা আহমেদ অনুষ্ঠানে যোগ দেন। এর আগে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এদিকে অনুষ্ঠানে অভিনন্দন জানিয়ে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিংপিং, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো, জাপানের প্রধানমন্ত্রী ইয়োশিহিদে সুগা এবং প্রখ্যাত ব্রিটিশ সাংবাদিক মার্ক টালি ভিডিও বার্তা প্রেরণ করেন। অতিথিদের বক্তব্যের পর মিনিট ১৫ বিরতি শেষে শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। শুরুতেই দশদিনের ‘মুজিব চিরন্তন’ প্রতিপাদ্যের উপরে টাইটেল অ্যানিমেশন ভিডিও প্রদর্শিত হয়। এরপর মুজিব শতবর্ষের গেলো এক বছরের আয়োজন নিয়ে একটি ভিডিও প্রদর্শিত হয়। ভিডিও প্রদর্শনী শেষে ‘ভেঙেছ দুয়ার, এসেছ জ্যোতির্ময়’ শিরোনামে অডিও ভিজ্যুয়াল প্রদর্শিত হয়। বাদ্যযন্ত্র সহযোগে অর্কেস্ট্রা মিউজিকের সঙ্গে পরিবেশিত হয় গান পরিবেশনা। ভারতের প্রখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ দেবজ্যোতি মিশ্রের পরিবেশনায় সঙ্গীত পরিবেশন করেন শিল্পী সাদী মহম্মদ, শিমুল ইউসুফ, রফিকুল আলম, সৈয়দ আবদুল হাদী ও রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা। সাদী মহম্মদ গেয়ে শোনান ‘ও আমার দেশের মাটি’, শিমুল ইউসুফ ‘সব লোকে কয় লালন কি জাত’, রফিকুল আলম ‘জাগো অনশন’, সৈয়দ আবদুল হাদী ‘ধনধান্য পুষ্প ভরা’ এবং রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা গেয়ে শোনান ‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে’। সবশেষে পাঁচ শিল্পী সম্মেলক কণ্ঠে গেয়ে শোনান ‘শোনো একটি মুজিবরের থেকে’ গানটি।
এরপর মঞ্চে আসেন ভারতের নৃত্যশিল্পীরা। ভারতের প্রখ্যাত নৃত্যশিল্পী মমতা শংকরের পরিচালনায় দলটি নৃত্য পরিবেশনার মধ্য তুলে ধরেন বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্ম। বঙ্গবন্ধুকে প্রতীকী চিঠি উৎসর্গ করা হয়। জয়ঢাক সহযোগে বিশেষ পরিবেশনার মধ্য দিয়ে শেষ হয় প্রথম দিনের আয়োজন। সবশেষে আর্কষণ হিসেবে ছিল আতশবাজি ও লেজার শো। করোনার কারণে সীমিত পরিসরে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে আগত অতিথিদের বাংলাদেশ সম্পর্কে ধারণা দিতে শৈল্পিক আবহে অনুষ্ঠানস্থলে নির্মাণ করা হয় শহীদ মিনার, পদ্মাসেতু, গ্রামীণ জীবনযাপনের আবহ, জাতীয় মাছ ইলিশসহ নানা উপস্থাপনা। আজ বৃহস্পতিবার মুজিব চিরন্তন আয়োজনের শিরোনাম ‘মহাকালের তর্জনী’। এদিন বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ নিয়ে আলোচনা হবে। প্রচারিত হবে কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন সেনের ভিডিওবার্তা।
কাল ১৯ মার্চ ‘যতকাল রবে পদ্মা যমুনা’, ২০ মার্চ ‘তারুণ্যের আলোকশিখা’, ২১ মার্চ ‘ধ্বংসস্তূপে জীবনের গান’, ২২ মার্চ ‘বাংলার মাটি আমার মাটি’, ২৩ মার্চ ‘নারীমুক্তি, সাম্য ও স্বাধীনতা’, ২৪ মার্চ ‘শান্তি-মুক্তি ও মানবতার অগ্রদূত’, ২৫ মার্চ ‘গণহত্যার কালরাত্রি ও আলোকের অভিযাত্রা’ এবং ২৬ মার্চ ‘স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর ও অগ্রগতির সুবর্ণরেখা’ প্রতিপাদ্যে এ আয়োজন চলমান থাকবে। দশ দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালায় বাকিদিনগুলোতে ২২ মার্চ এবং ২৬ মার্চ তারিখের অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং ১৯ মার্চ, ২২ মার্চ, ২৪ মার্চ এবং ২৬ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত থাকবেন। এসব আয়োজনে বিদেশি রাষ্ট্র ও এবং সরকার প্রধানরা সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। কাল ১৯ মার্চ শ্রীলংকার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দ্র রাজাপাকসে, ২২ মার্চ নেপালের রাষ্ট্রপতি বিদ্যা দেবী ভাণ্ডারী, ২৪ মার্চ ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং এবং ২৬ মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী উপস্থিত থাকবেন। ১৯ মার্চ, ২২ মার্চ, ২৪ মার্চ এবং ২৬ মার্চের অনুষ্ঠান বিকেল সাড়ে ৪টায় শুরু হবে এবং রাত ৮টায় শেষ হবে। অন্য দিনের অনুষ্ঠান বিকেল সোয়া ৫টায় শুরু হবে এবং রাত ৮টায় শেষ হবে। প্রতিদিনের অনুষ্ঠানে সন্ধ্যা ৬টা থেকে সাড়ে ৬টা পর্যন্ত ৩০ মিনিটের বিরতি থাকবে। প্রতিটি অনুষ্ঠান বাংলাদেশ টেলিভিশন, বেসরকারি সব টেলিভিশন চ্যানেলে সরাসরি সমপ্রচারের পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবঙ্গবন্ধু ভারতীয়দের কাছেও বীর : মোদী
পরবর্তী নিবন্ধকিছু সুবিধাবাদী লোক রাজনীতিকে পেশা বানিয়ে ফেলেছে : রাষ্ট্রপতি