এখন দেশের প্রতিটি খাতে নারীরা কাজ করছেন

এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের অনুষ্ঠানে তথ্যমন্ত্রী

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ৬ এপ্রিল, ২০২৩ at ৫:০৯ পূর্বাহ্ণ

বেসরকারি কলেজের নারী শিক্ষকদের দক্ষতা উন্নয়নে এক বছরের প্রশিক্ষণ (কোর্স) শুরু করতে যাচ্ছে নারী শিক্ষায় বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন (এইউডব্লিউ)। আগামী বছরের শুরুতে ত্রিশ জন নারী শিক্ষক নিয়ে এ কোর্স শুরুর কথা রয়েছে। সপ্তাহে দুদিন (শুক্র ও শনিবার) এ কোর্সের ক্লাস অনুষ্ঠিত হবে। বিশেষ করে ইংরেজি শিক্ষায় দক্ষতা উন্নয়নে কোর্সে জোর দেয়া হবে। কোনো ফি ছাড়াই (বিনা ফিতে) এ কোর্সে অংশ নেয়ার সুযোগ পাবেন কলেজের নারী শিক্ষকরা। তবে এ কোর্সে অংশ নিতে কলেজই তাদের প্রতিষ্ঠান থেকে নারী শিক্ষক নির্বাচিত করে দেবে। অংশগ্রহণকারী মনোনয়নে এরই মধ্যে ৫০টি বেসরকারি কলেজ নির্বাচন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা। এসব কলেজের মধ্য থেকে ৩০ জন নারী শিক্ষককে কোর্সের জন্য বেছে নেয়া হবে। এক বছরের এ কোর্স নারী শিক্ষকদের স্কিল ডেভলপমেন্টে বড় ধরনের ভূমিকা রাখবে বলে বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা আশা প্রকাশ করেছেন। গতকাল বিকেলে এইউডব্লিউ’র আয়োজনে এক সেমিনারে এসব তথ্য জানানো হয়।

একই সময়ে সুইজারল্যান্ডের বাসেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি অধ্যাপক এইচ সি আন্দ্রেয়া শেঙ্কারউইকিকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান অনুষ্ঠানেরও আয়োজন ছিল। নগরের এম এম আলী সড়কে বিশ্ববিদ্যালয়টির অস্থায়ী ক্যাম্পাসের সম্মেলনকক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন তথ্য ও সমপ্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. রুবানা হক, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা কামাল আহমেদ, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন অব হিউম্যানিটিজ ডেভিড টেইলর ও ডিন অব আর্টস অ্যান্ড সায়েন্স বিনা খুরানা প্রমূখ।

অনুষ্ঠানে সম্মাননা সূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রাপ্ত অধ্যাপক এইচ সি আন্দ্রেয়া শেঙ্কারউইকি সুইজারল্যান্ডের বাসেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি। ব্যবসায় প্রশাসন বিষয়ে বিশেষজ্ঞ এই অধ্যাপক সুইস সেন্টার অব অ্যাক্রেডিটেশন অ্যান্ড কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স ইন হায়ার এডুকেশনের উপদেষ্টা বোর্ডের সভাপতি এবং অস্ট্রিয়ান সায়েন্স বোর্ডের সদস্য।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্য ও সমপ্রচার মন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা সমাজের অগ্রগতি এবং সমাজে নারীদের অগ্রগতিতে ভূমিকা রেখে চলছে। এটি দেশের একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয়, যার প্রধান পৃষ্ঠপোষক প্রধানমন্ত্রী ও বোর্ডের চেয়ারম্যান শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। এ দেশে আর কোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সরকারের কাছ থেকে এত বেশি সাহায্যসহযোগিতা পায়নি। এইউডব্লিউ’র অধীনে একটি মেডিকেল স্কুল প্রতিষ্ঠার বিষয়েও কথা বলেন মন্ত্রী।

গত ১৪ বছরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশে নারীদের অনেক অগ্রগতি হয়েছে মন্তব্য করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, এখন দেশের প্রতিটি খাতে নারীরা কাজ করছেন। আদালতের বিচারক, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারের দায়িত্ব পালন করছেন নারীরা। এখন মাঠ পর্যায়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হিসেবেও কাজ করছেন নারীরা। আগে এসব কল্পনাও করা যায়নি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশে শুধু রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন নয়, অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নও হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা শিক্ষার্থীরা শুধু শিক্ষিতই নয়, স্বনির্ভরও হয়ে ওঠে, সমাজে অবদান রাখার যোগ্যতা অর্জন করে। এইউডব্লিউ’র শিক্ষার্থীরা অনেক দিক দিয়েই অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় অনেক বেশি যোগ্য। এখানকার শিক্ষার্থীদের মানসম্মত শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে।

সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি দেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান, সুইজারল্যান্ডের বাসেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি অধ্যাপক এইচ সি আন্দ্রেয়া শেঙ্কারউইকি। তিনি বলেন, ‘এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন ব্যতিক্রমী একটি বিশ্ববিদ্যালয়, যা নারী শিক্ষা ও নারী দক্ষতা উন্নয়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। যা প্রশংসনীয়। শিক্ষা প্রত্যেক মানুষ তথা সমাজ উন্নয়নের মূল ভিত্তি। তিনি বলেন, আমরা জানি, একটি স্বল্প ও মধ্যম আয়ের দেশের জন্য নারী শিক্ষায় বিনিয়োগ হল সর্বোচ্চ ফলপ্রসূ বিনিয়োগ। প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই এই বিশ্ববিদ্যালয় নারী শিক্ষার উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে। প্রতিদিনই এই বিশ্ববিদ্যালয় নারী বৈষম্য দূর করতে এবং সামাজিক ও অর্থনৈতিক ভিত তৈরি করতে অবদান রাখছে। সমাজে পরিবর্তন আনতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের শিক্ষার্থীদের সমাজে সাহসী হিসেবে গড়ে তুলতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে।

অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য রুবানা হক বলেন, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের ছাত্রীরা এখানে সাহসিকতা বিষয়ে অনেক কিছু শিখছেন। বিশ্ববিদ্যালয় হলো উদ্ভাবনের ক্ষেত্র। একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় ও একাডেমিক ব্যক্তিরা জনগণ এবং রাজনীতিবিদদের সহায়ক হতে পারেন। তবে এই সহায়ক ভূমিকার ক্ষেত্রে অনেক বেশি দায়িত্বশীল হতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়কে সমাজ এবং জনগণের আশা আকাঙ্ক্ষা মেটাতে ভূমিকা পালন করতে হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা কামাল আহমেদ বলেন, ‘আমরা চাই আমাদের ছাত্রীরা সমাজে প্রতিষ্ঠিত হোক। অধিকার আদায়ে, সমঅধিকার চর্চায় ও সহিংসতা দূর করতে তারা নিজেদের জায়গায় সোচ্চার হোক।’ এইউডব্লিউ ১ হাজার আফগান শিক্ষার্থীকে এখানে পড়ার সুযোগ দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে বলেও জানান তিনি।

আলোচনা পর্ব শেষে অধ্যাপক এইচ সি আন্দ্রেয়া শেঙ্কারউইকির হাতে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রির সনদ তুলে দেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। উত্তরীয় পরিয়ে দেন রুবানা হক ও কামাল আহমেদ।

এ সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন অব হিউম্যানিটিজ ডেভিড টেইলর ও ডিন অব আর্টস অ্যান্ড সায়েন্স বিনা খুরানা। অনুষ্ঠানের শুরুতে বিদেশি শিক্ষার্থীরা বাংলায় বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত পরিবেশন করেন।

এরপর ‘বাংলাদেশের উচ্চমাধ্যমিক কলেজের রূপান্তর’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এইউডব্লিউ’র এমএড প্রোগ্রামের গবেষণা সহকারী নুজহাত জাহান ও সুমাইয়া হালিম। সঞ্চালনায় ছিলেন প্রোগ্রাম পরিচালক ড. সেলিম রেজা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ২ কোটি ১০ লাখ টাকার ৩ কেজি স্বর্ণের চালান জব্দ
পরবর্তী নিবন্ধউন্নয়ন প্রস্তাবনায় না থাকলেও জনস্বার্থেই হচ্ছে ফুটপাত