উন্নয়ন প্রস্তাবনায় না থাকলেও জনস্বার্থেই হচ্ছে ফুটপাত

৫০ কিলোমিটার নির্মাণের টার্গেট, এরই মধ্যে ২০টি খালের পাড়ে সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার সম্পন্ন

মোরশেদ তালুকদার | বৃহস্পতিবার , ৬ এপ্রিল, ২০২৩ at ৫:০৯ পূর্বাহ্ণ

নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে চলমান মেগা প্রকল্পের উন্নয়ন প্রস্তাবনায় (ডিপিপি) কোনো ফুটপাত নির্মাণ অন্তর্ভুক্ত নেই। এরপরও জনস্বার্থে প্রকল্পটির আওতায় নগরীর বিভিন্ন খালের পাড়ে ফুটপাত নির্মাণ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ২০টি খালের পাড়ে সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার এলাকায় ফুটপাত নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। এছাড়া প্রকল্পের ডিপিপিতে খালপাড়ে ৮৫ দশমিক ৬৮ কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণ অন্তর্ভুক্ত আছে। বিপরীতে মাত্র ১০ দশমিক ৩৯ কিলোমিটারের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতায় বাকি রাস্তা নির্মাণ কাজ থমকে আছে।

প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, ডিপিপিতে অন্তর্ভুক্ত না থাকলেও সংশোধিত ডিপিপিতে ৫০ কিলোমিটার ফুটপাত নির্মাণ প্রস্তাব করা হয়। তবে সেটা এখনো একনেকে চূড়ান্ত অনুমোদন হয়নি। এরপরও জনস্বার্থে ফুটপাত নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়েছে। এদিকে ডিপিপিতে যে পরিমাণ রাস্তা নির্মাণ প্রস্তাব করা হয়েছে তা কমিয়ে হবে ৩৭ দশমিক ৭৪ কিলোমিটার। অনেক খালের পাড়ে পূর্ব থেকে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) নির্মিত রাস্তা রয়েছে। যেটা মেগা প্রকল্পের কাজ শুরুর পর লক্ষ্য করা যায়। ফলে ডিপিপিতে প্রস্তাবিত রাস্তার চেয়ে বাস্তবে অর্ধেকের বেশি কমে গেছে।

মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রকল্প পরিচালক লে. কর্নেল শাহ আলী দৈনিক আজাদীকে বলেন, ভূমি অধিগ্রহণ না হওয়ায় রাস্তা নির্মাণ করা যাচ্ছে না। তবে অনেক জায়গায় ভূমি অধিগ্রহণ না হলেও লোকজন থেকে জায়গা নিয়ে রাস্তা নির্মাণ কাজ শুরু করে দিয়েছি। সেক্ষেত্রে যারা ভূমির মালিক তাদের বুঝিয়ে রাজি করালাম। পরে যখন অধিগ্রহণ কার্যক্রম শুরু হবে তাদের ক্ষতিপূরণের টাকা দেয়া হবে। এভাবে আরো ১০ কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণ করতে পারব। যার কাজ চলমান আছে। আগে থেকে চসিকের করা রাস্তা থাকায় ডিপিপির চেয়েও রাস্তার পরিমাণ কমে যাওয়ার বিষয়টিও নিশ্চিত করেন তিনি।

ফুটপাত নির্মাণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অধিকাংশ ফুটপাত করা হচ্ছে মানুষের জায়গায়। অনেক জায়গায় খাল ঘেঁষে বহুতল ভবন আছে। ওসব ভবন ভেঙে ফুটপাত নির্মাণ করা যাবে না। ফুটপাতের জন্য আলাদা করে আমরা কোনো ভূমি অধিগ্রহণও করছি না। তাই নির্দিষ্ট করে কত কিলোমিটার ফুটপাত নির্মাণ করব তা আগে বলা যাবে না। তবে আমাদের টার্গেট হচ্ছে ৫০ কিলোমিটার করা। তিনি বলেন, ফুটপাতের বিষয়টি আমাদের ডিপিপিতে ছিল না। পরে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়ে অনেক দেরিতে শুরু করেছি। সে জন্য নির্মাণের পরিমাণ এখনো একটু কম মনে হচ্ছে।

নির্মাণ শেষ হওয়া ফুটপাত ও রাস্তা : গত ২৯ মার্চ পর্যন্ত পাঁচ হাজার ৪৬০ দশমিক ৫ মিটার ফুটপাত ও ১ হাজার ৩৯৯ মিটার রাস্তা নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। যে সব খালের পাড়ে রাস্তা ও ফুটপাত নির্মাণ করা হয়েছে সেগুলো হচ্ছেগয়নাছড়া খাল, কলা বাগিচা খাল, মরিয়ম বিবি খাল, রাজাখালী খাল, রাজাখালী খাল২ রাজাখালী খাল, গয়নাছড়া খাল, আজব বাহার খাল, শীতল ঝর্না খাল, রামপুর খাল, গুপ্তা খাল, মহেশ খাল, চশমা খাল, নয়ারহাট খাল, টেকপাড়া খাল, সদরঘাট খাল১ ও ২, ফিরিঙ্গিবাজার খাল, বাকলিয়া খাল, নাসির খাল, ডামখালী খাল, মোঘলটুলি খাল, ত্রিপুরা খাল, বামনশাহী খাল এবং খন্দকিয়া খাল।

এর মধ্যে গয়নাছড়া১ খালের ফইল্লাতলী ব্রিজ থেকে প্রিন্স ভবন পর্যন্ত এলাকার ৩৪৭ মিটার ফুটপাত এবং একই খালের লোহারপুল দক্ষিণ সাইড পাথরশাহ মাজার ও লোহারপুল উত্তর সাইড পোর্ট কানেকটিং রোডের ১ হাজার ২৮২ মিটার রাস্তা, কলাবাগিচা খালের মেরিন ড্রাইভ রোডে ২৪৭ মিটার ফুটপাত ও ১৩১ দশমিক ৫ মিটার রাস্তা, মরিয়ম বিবি খালের ব্রিক ফিল্ড থেকে পূরবী সিনেমা হল পর্যন্ত ৩১৫ দশমিক ৭ মিটার রাস্তা, ব্রিক ফিল্ড পয়েন্টের ব্রিক ফিল্ড থেকে লাল দালান পর্যন্ত অংশে ৬৭ মিটার রাস্তা, রাজাখালী খাল১ এর ৪ নম্বর ব্রিজ পর্যন্ত পশ্চিম সাইড থেকে খালের তিন মাথা পর্যন্ত অংশে ৬১৩ মিটার রাস্তা, রাজাখালী খাল২ এর স্পেক্ট্রা গেইট থেকে রাজাখালী জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১ হাজার ৯৯২ মিটার রাস্তা নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে।

অন্যান্য খালগুলোর মধ্যে যেসব পয়েন্টে ফুটপাত ও রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে সেগুলো হচ্ছেরাজাখালী জিরো পয়েন্ট থেকে তিন নম্বর ব্রিজ, মুনমুন ক্লাব থেকে এসএনবি এর শেষ অংশ, পুলিশ লাইন ব্রিজ থেকে তালতলা ব্রিজ, পুলিশ বিড থেকে রেল লাইন ব্রিজ, পুলিশ লাইন ব্রিজ থেকে ইউএসটিসি কর্নার, আমতলী ব্রিজ থেকে রেল লাইন, এসএনবি আপস্টিম শেষে জয়েন্ট কানেক্টিং রোড, রাজাখালী ৩ নম্বর ব্রিজ থেকে ৪ নম্বর ব্রিজ, পাবলিক মোড় থেকে স্টারশিপ বিল্ডিংয়ের সামনে পর্যন্ত, পাবলিক মোড় থেকে ড্রাইভার কলোনি পর্যন্ত, ক্যান্টনমেন্ট ১ নম্বর গেইট থেকে ১১১ ফিল্ড ওয়ার্কশপ, পাবলিক মোড় থেকে ২ নম্বর গেইট পর্যন্ত, স্টারশিপ বিল্ডিং থেকে কেডিএস পর্যন্ত, ১ নম্বর গেইট থেকে ক্যান্টনমেন্ট ১১ ফিল্ড ওয়ার্কশপ, আগ্রাবাদ পুলিশ লাইন এর ভিতর, ৯ নম্বর ঘাট থেকে এয়ারফোর্স পর্যন্ত, নীমতলা ব্রিজ থেকে বন্দর কবরস্থান, ২ নম্বর গেইট থেকে এন মোহাম্মদ প্লাস্টিক, পিডিবি ব্রিজ থেকে নয়ারহাট বাজার, মেরিন ড্রাইভ রোড থেকে বংশাল পর্যন্ত, বংশাল থেকে কোতোয়ালী থানা রোড, সুর্জা কাঠঘর থেকে ৫ তলা ভবন পর্যন্ত, ৫ তলা ভবন থেকে কাজী নজরুল ইসলাম রোড, ফিরিঙ্গিবাজার ঘাট থেকে এনডিসি বিল্ডিং, কাজী নজরুল ইসলাম রোড থেকে কালী মন্দির, দিশারী চক্ষু হাসপাতাল থেকে কে বি আমানত আলী ব্রিজ, ঠান্ডা মিয়ার ব্রিজ থেকে ওয়াপদা পর্যন্ত, র‌্যাব৭ কার্যালয় থেকে খতিব বাড়ি রোড, রেল গেইট থেকে সিটি কর্পোরেশনের ডাস্টবিন পর্যন্ত, শমসের পাড়া ব্রিজ থেকে জাঙ্গাল পাড়া পর্যন্ত, শমসেরপাড়া ব্রিজের কানেকটিং রোড, অনন্যা আবাসিক এভারকেয়ার হাসপাতাল এবং খন্দকিয়া বাজার থেকে পুরাতন ব্রিজ পর্যন্ত।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএখন দেশের প্রতিটি খাতে নারীরা কাজ করছেন
পরবর্তী নিবন্ধইউএনওদের নিয়ে হাইকোর্টের রায় চেম্বারে স্থগিত