‘এখন আমরা কী করব?’

বন্যায় দীঘিনালার কৃষিতে ব্যাপক ক্ষতি, দিশেহারা কৃষক

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি | সোমবার , ২৬ আগস্ট, ২০২৪ at ১০:৪২ পূর্বাহ্ণ

খাগড়াছড়ির দীঘিনালার মেরুং ইউনিয়নের পূর্ণচন্দ্র কার্বারি পাড়ার কৃষক সুমতি রঞ্জন চাকমা। ছয় কানি (এক কানিতে ৪০ শতক) জমি বর্গা নিয়ে চাষ করেছেন তিনি। প্রতি কানি জমিতে বর্গা বাবদ দিতে হয়েছে ৪ হাজার টাকা। আগস্ট মাসে দুই দফায় বন্যায় ডুবেছে। তবে সবশেষ চারা রোপণ করার কয়েকদিন পর থেকে বন্যা শুরু। সোমবার থেকে ধানের চারা ডুবতে শুরু করে। শনিবারও ধানের জমি পানির নিচে ছিল। দুবার জমি নষ্ট হওয়ার পর আর কিছু করার নেই। এখন বন্যার পানি কমলেও নতুন করে চাষ করার মতো সময় নেই। তাছাড়া সার, বীজ এবং শ্রমিকের মজুরি বাবদ যে অর্থ খরচ হবে সেটাও হাতে নেই। কৃষি বিভাগ কোনো সহযোগিতা করে নাই। এখন আমরা কী করব?

চলতি বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দীঘিনালা উপজেলা। মাইনী নদীর অববাহিকায় গড়ে ওঠায় এটি মাইনী ভ্যালি হিসেবে পরিচিত। উপজেলার মেরুং ইউনিয়ন ৫ দিন ধরে বন্যার পানির নিচে। কিছু কিছু গ্রামে ঘরবাড়ি থেকে পানি নেমে গেলেও ফসলি জমি থেকে নামেনি। ফলে এখানকার কৃষি জমির সর্বনাশ হয়েছে। মেরুং বাজার এলাকা, ভুয়াছড়ি, চংড়াছড়ি, রশিকনগর, বেতছড়ি, মধ্য বোয়ালখালী, বোয়ালখালী, তারাবুনিয়া, পাবলাখালি, শান্তিপুরা, মিলনপুরসহ ৫০টির বেশি গ্রাম আগস্টের সবশেষ বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। মাইনী নদীর তীরবর্তী এসব এলাকায় আমনের চাষাবাদ করেছে কৃষক। কৃষকদের অভিমত, বন্যা এক থেকে দুদিন স্থায়ী হলে ধানের চারার তেমন ক্ষতি হতো না। কিন্ত টানা ৪ থেকে ৫ দিন স্থায়ী হওয়ায় অধিকাংশ ফসলি জমি নষ্ট হয়ে গেছে। মেরুংয়ের আরেক কৃষক মোবারক হোসেন বলেন, দুই কানিতে চাষ করছি। এই মাসে দুইবার ধান রোপণ করলাম। আগস্টের শুরুতে একবার সব নষ্ট হয়ে গেছে। এবার সব চারা এখনো পানির নিচে। এখন আর কিছু করার নেই।

মেরুং বাজার থেকে এখনো পুরোপুরি পানি নেমে যায়নি। বাজারে লাউ আর করলা বিক্রি করতে আসা কৃষক আমিনুল ভূইয়া বলেন, বন্যায় আমার ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। ধানে গেছে ১৫ হাজার টাকা। বাড়ির পাশের ক্ষেতে বিভিন্ন ধরনের সবজির চাষ করেছি। সেখানে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকার সবজি বিক্রি করতে পারতাম। সব বন্যায় গেছে।

সবচেয়ে নিচু এলাকায় হওয়ায় মেরুংয়ে বন্যা স্থায়ী হয়েছে। দীঘিনালার বাবুছড়া, কবাখালি ও বোয়ালখালী ইউনিয়ন থেকে পানি নেমে গেলেও মেরুংয়ের ২০ গ্রাম এখনো পানিবন্দি।

মেরুং ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের সদস্য সমীরণ চাকমা বলেন, বাঁচা মরং এলাকা থেকে হেডম্যানপাড়া পর্যন্ত পুরোটা ধানি জমি। আমার গ্রামে ১শ ৪০ পরিবার আছে। সবাই কৃষক। বন্যায় সব শেষ। অনিন্দ্য কার্বারি পাড়ায় কয়েকটি পানের বরজ নষ্ট হয়ে গেছে। কৃষকদের জন্য কোনো সহযোগিতা এখনো আসেনি। সরকারি প্রণোদনা না পেলে তারা ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না।

দীঘিনালা কৃষি অফিসার মো. শাহাদাৎ হোসেন বলেন, বন্যায় আমনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। বন্যার পানিতে ৭শ ৬৫ হেক্টর জমির আমন চারা নষ্ট হয়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১৩শ ২৩ কৃষক। ৯০ হেক্টর আউশ এবং ১শ ৩৯ হেক্টরের সবজি ক্ষেত নষ্ট হয়েছে। এতে প্রায় ৮শ কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের তালিকা প্রস্তুত করেছি। আগামীকাল আমরা পার্বত্য চট্টগ্রামের কৃষি সম্প্রসারণে অতিরিক্ত পরিচালকের সাথে কথা বলে পরিকল্পনা নির্ধারণ করব। আমানের চারা রোপণের সময় নেই। সেক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের আগাম রবিশস্য চাষাবাদ করার জন্য প্রণোদনা দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসরকারকে সময় দিতে প্রস্তুত, তবে অনির্দিষ্টকালের জন্য নয় : ফখরুল
পরবর্তী নিবন্ধবন্যার প্রভাবে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে পণ্য পরিবহনে ধস