পরিবেশ সংরক্ষণ এবং পাটের বহুমুখী ব্যবহার নিশ্চিত করতে ধান, চাল, গম, ভুট্টা, সার ও চিনিসহ ১৯টি পণ্যের পরিবহন ও মজুদের ক্ষেত্রে পাটের বস্তার ব্যবহার বাধ্যতামূলক করে সরকার। এসব পণ্যের ব্যবহারকারীদের বিভিন্ন সময় পাট অধিদপ্তর ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্লাস্টিকের বস্তা ব্যবহার না করার অনুরোধ জানানো হয়। অথচ বাধ্যতামূলক করার প্রায় ১০ বছরের কাছাকাছি হয়ে গেলেও এখনো প্লাস্টিকের বস্তায় পণ্যের পরিবহন ও মজুদ করা হচ্ছে। এসবের প্রজ্ঞাপন জারি হয়েছে মোট তিনবার। সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষিত থাকার কারণে পুরো বাজার এখন প্লাস্টিকের বস্তায় সয়লাব হয়ে গেছে। এতে পাটের ব্যবহার বাড়াতে সরকারি উদ্যোগও এক প্রকার মুখ থুবড়ে পড়েছে। আবার দীর্ঘদিন ধরে প্লাস্টিকের বস্তার বিরুদ্ধে প্রশাসনের অভিযানও নেই। এই সুযোগটাই মূলত কাজে লাগাচ্ছেন ব্যবসায়ী ও মিল মালিকরা।
চাক্তাইয়ের চালপট্টি ও পাহাড়তলীর চালের আড়তদাররা জানান, আমদানির চাল আসছে প্লাস্টিকের বস্তায়। এখন সেইসব পণ্যের বস্তা পরিবর্তন করে বাজারজাত করা দুরূহ কাজ। বিষয়টি বিভিন্ন সময় প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। এছাড়া বেশিরভাগ দেশি চালের মিল মালিক প্লাস্টিকের বস্তায় চাল পরিবহন ও মজুদ করছেন। আমাদের কাছেও তারা প্লাস্টিক বস্তায় চাল পাঠাচ্ছেন। খাতুনগঞ্জের আটা–ময়দার একজন ব্যবসায়ী জানান, পাটের তৈরি বস্তায় আটা–ময়দা পরিবহন করাটা একটু কঠিন। কারণ পাটের বস্তায় আঁশ ও ছিদ্র থাকে। দেখা যায়, আটা ও ময়দার সাথে এসব আঁশ মিশে যায়। অনেক সময় ধুলাবালু বস্তার ছিদ্র দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে। এতে আটা–ময়দার গুণগত মান নষ্ট হয়। তবে পাটের বস্তা আটা–ময়দার জন্য উপযোগী করে তৈরি হলে এটি ব্যবহারে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। তাই আটা–ময়দার ক্ষেত্রে সুবিধা ও অসুবিধার কথা বিবেচনা করে সরকারকে এই বিষয়টি ভেবে দেখা দরকার। চাক্তাই খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন বলেন, অনেক ক্রেতাই পাটের বস্তার পরিবর্তে প্লাস্টিকের বস্তায় পণ্য নিতে বেশি পছন্দ করেন। কারণ পাটের বস্তার চেয়ে প্লাস্টিকের বস্তায় পণ্য বেশি পাওয়া যায়। এছাড়া প্লাস্টিক বস্তার দাম পাটের বস্তার তুলনায় কম। এতেও অনেক ব্যবসায়ী প্লাস্টিক বস্তা ব্যবহারে উৎসাহী হচ্ছেন।
পাহাড়তলী বণিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এসএম নিজাম উদ্দিন বলেন, আড়তদারদের মিলাররা যেভাবে চাল পাঠাচ্ছেন আমরা সেভাবে বিক্রি করি। বর্তমানে নওগাঁ ও আশুগঞ্জ থেকে যেসব চাল আসছে সবই প্লাস্টিকের বস্তায় আসছে বলা যায়। ফলে বাজারে এখন প্লাস্টিকের বস্তার ছড়াছড়ি হয়ে গেছে। তবে আড়তগুলোতে অভিযান না চালিয়ে প্রশাসনের উচিত ধান–চালের মোকামগুলোতে নজরদারি বাড়ানো। পণ্য প্যাকিংয়ের ক্ষেত্রে প্লাস্টিকের বস্তার পরিবর্তে পাটের বস্তার ব্যবহার নিশ্চিত সেখান থেকেই করতে হবে। উল্লেখ্য, পাটের বহুমুখী ব্যবহার, সম্প্রসারণ এবং পরিবেশ সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে ১৯টি পণ্যের ক্ষেত্রে চটের বস্তার ব্যবহার বাধ্যবাধকতা করে সরকার। সর্বশেষ ২০১৮ সালের ১২ আগস্ট পোল্ট্রি ও ফিশ ফিডের মোড়কে পাটের বস্তার ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়। এর আগে ২০১৫ সালের ১৭ ডিসেম্বর ধান, চাল, গম, ভুট্টা, সার, চিনি সংরক্ষণ ও পরিবহনে বাধ্যতামূলকভাবে পাটের বস্তা ব্যবহারের নির্দেশ দেয় বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়। এছাড়া ২০১৭ সালের ২৪ জানুয়ারি পেঁয়াজ, আদা, রসুন, ডাল, আলু, আটা, ময়দা, মরিচ, হলুদ, ধনিয়া ও তুষ–খুদ–কুঁড়ার মোড়ক হিসেবে পাটের বস্তার ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়।
এদিকে পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন, ২০১০–এর ধারা–১৪ অনুযায়ী পাটের মোড়ক ব্যবহার না করলে অনূর্ধ্ব এক বছর কারাদণ্ড বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে। এ অপরাধ পুনঃসংগঠিত হলে সর্বোচ্চ দণ্ডের দ্বিগুণ দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে।












