মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে চট্টগ্রাম বন্দরের ইয়ার্ডে কন্টেনারের পরিমাণ প্রায় ছয় হাজার টিইইউএস বেড়ে গেছে। ঈদের ছুটিতে রাতে-দিনে কাজ হলেও আমদানিকারকেরা কন্টেনার খালাস না করায় বন্দরের অভ্যন্তরে কন্টেনারের সংখ্যা বেড়ে গেছে। ধারণক্ষমতার প্রায় পুরোটা শেষ হওয়ার শঙ্কা এবং বন্দরের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ায় সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থাকে দ্রুত কন্টেনার খালাসের তাগাদা দেওয়া হয়েছে।
বন্দর সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম বন্দরের অভ্যন্তরে কন্টেনার ধারণক্ষমতা ৪৯ হাজার ১৮ টিইইউএস। গতকাল বন্দরে আটকা পড়া কন্টেনারের সংখ্যা ছিল ৪২ হাজার ১৭৩ টিইইউএস। আমদানিকারকেরা কন্টেনার খালাস না করায় বন্দরের অভ্যন্তরে কন্টেনারের পরিমাণ বেড়ে গেছে। স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন বন্দর থেকে গড়ে ৫ হাজার টিইইউএস কন্টেনার খালাস হয়। কিন্তু ঈদের ছুটিতে গড়ে সাড়ে তিনশর মতো খালাস হয়েছে। গতকাল বন্দর থেকে কন্টেনার খালাস হয়েছে মাত্র ৫৮২ টিইইউএস। কন্টেনার খালাসের পরিমাণ স্বাভাবিকের এক দশমাংশে নেমে আসায় আটকা পড়া কন্টেনারের সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে।
বন্দর সূত্র জানায়, কন্টেনার খালাসে গতি রাখতে কর্তৃপক্ষ ঈদের ছুটিতেও রাতে-দিনে চব্বিশ ঘণ্টা কাজ করেছে। সপ্তাহের সাত দিন রাতে-দিনে কাজ করার পরও কন্টেনার পরিস্থিতি বন্দর কর্তৃপক্ষকে বেকায়দায় ফেলছে। বন্দরের ইয়ার্ডে কন্টেনারের সংখ্যাধিক্যের কারণে জাহাজ থেকে কন্টেনার খালাস ব্যাহত হচ্ছে। এতে জেটিতে জাহাজের অবস্থানকাল বেড়ে যাওয়াসহ নানা সংকট তৈরি হচ্ছে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের টার্মিনাল ম্যানেজার গতকাল চট্টগ্রাম চেম্বার প্রেসিডেন্ট, বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস এসোসিয়েশেনের প্রেসিডেন্ট, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট, ফ্রেইট ফরোওয়ার্ডাস এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্টসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং সংস্থাকে জরুরি ভিত্তিতে কন্টেনার খালাস করার তাগাদা দিয়ে চিঠি দিয়েছেন।
চিঠিতে বলা হয়, বন্দরের অভ্যন্তরে রক্ষিত বিভিন্ন আমদানিকারক কর্তৃক আমদানিকৃত এফসিএল ও এলসিএল কন্টেনার এবং কার্গো ও রপ্তানি পণ্যবাহী কন্টেনারের পরিমাণ পূর্বের তুলনায় বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ জরুরি উদ্যোগ নিয়ে ঈদুল আজহার ছুটিকালীন রাতে-দিনে চব্বিশ ঘণ্টা বন্দর চালু রেখেছে। বন্দর চালু থাকলেও কন্টেনার এবং পণ্য খালাসে আপনাদের কোনো উদ্যোগ পরিলক্ষিত হচ্ছে না। বিষয়টিকে ‘অত্যন্ত দুঃখজনক’ আখ্যায়িত করে এফসিএল এবং এলসিএল কন্টেনার ও কার্গো বন্দর থেকে ডেলিভারি না নেওয়ায় ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত কন্টেনার জট সৃষ্টি হয়েছে। বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রমে বিঘ্ন সৃষ্টির আশঙ্কা প্রকাশ করে চিঠিতে বলা হয়, দেশে পণ্য সরবরাহ নেটওয়ার্ক নিরবচ্ছিন্ন রাখা, বন্দরে আগত কন্টেনারবাহী জাহাজ হতে কন্টেনার হ্যান্ডলিং ও রপ্তানি কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখার স্বার্থে দ্রুত কন্টেনার ও পণ্য খালাসের ওপর গুরুত্বারোপ করতে অনুরোধ জানানো হয়েছে। ঈদের পরবর্তী দিনগুলোতে সপ্তাহের অন্যান্য দিনের ন্যায় শুক্র, শনি, রোববার এবং সরকারি বন্ধের দিনগুলোতেও নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্য, পোশাক শিল্পের কাঁচামালসহ অন্যান্য পণ্য দ্রুত ডেলিভারি নেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়।
চিঠিতে বলা হয়, সিএফএস এবং শেডসমূহ এলসিএল কার্গোয় পরিপূর্ণ। এতে আমদানিকৃত এলসিএল কার্গোর কন্টেনার থেকে পণ্য আনস্টাফিং করা কঠিন হয়ে উঠছে। এ অবস্থায় কোভিড সংক্রান্ত সরকারি নির্দেশনা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে কন্টেনার ও পণ্য খালাসের পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের আহ্বান জানানো হয়েছে।