এক মিল্টনের কত রূপ

এক চুরির খোঁজে গিয়ে দুর্ধর্ষ চক্র গ্রেপ্তার চার মাসে চট্টগ্রামে অন্তত ১০০ মোটরসাইকেল চুরি

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ২৩ মে, ২০২২ at ৫:২৬ পূর্বাহ্ণ

জেল থেকে ছাড়া পেয়ে মামলার খরচ জোগাতে ফের মোটরসাইকেল চুরিতে জড়িয়ে পড়েছিল ছয়জনের দলটি। মিল্টন তাদের নেতা। মোটরসাইকেল চুরির পরপরই তারা এক জেলার মোটরসাইকেল অন্য জেলায় পাঠিয়ে দেয়, যেন মোটরসাইকেল মালিকের পক্ষে মোটরসাইকেল শনাক্ত করা সম্ভব না হয়। কিন্তু বলা হয়ে থাকে ‘চোরের দশদিন, গেরস্থের একদিন’। তাই নগরীর আকবর শাহ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওয়ালী উদ্দিন আকবরের নেতৃত্বে একটি টিম গত ২৬ এপ্রিল চুরি যাওয়া একটি মোটরসাইকেলের খোঁজ করতে করতে পেয়ে যায় মোটরসাইকেল চুরির জগতের দুর্ধর্ষ এই চক্রটিকে। তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে একাধিক চুরির মামলা রয়েছে। মোটরসাইকেল চুরির টাকা দিয়ে তারা মামলার খরচ চালিয়ে আসছিল বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে। গ্রেপ্তার হওয়া আসামিরা হলো- মিল্টন সরকার ওরফে মিল্টন কুমার সাহা, মামুন আলম, মেহেদী হাসান, জালাল উদ্দিন, ইসমাইল হোসেন ও মহিন উদ্দিন। নগরীর আকবর শাহ থানার সিডিএ এলাকা, কুমিল্ল্লা জেলার নাঙ্গলকোট ও চৌদ্দগ্রাম থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ। আকবর শাহ থানা পুলিশ শনিবার রাতে তাদের গ্রেপ্তারের তথ্য জানায়। এই ছয় আসামির কাছে ছয়টি মোটরসাইকেল পাওয়া গেছে। চট্টগ্রামের বিভিন্ন থানা থেকে চুরি করা হয়েছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ।

ওসি মো. ওয়ালী উদ্দিন বলেন, মিল্টন, মেহেদী ও মামুনের জন্য আদালতে দুদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। শনিবার এই রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়। অন্য আসামিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

ওসি ওয়ালী উদ্দিন আকবর আজাদীকে বলেন, গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে মিল্টন সরকার মিনিট খানেকের মধ্যে মোটরসাইকেল চুরিতে পারদর্শী। তেমনি পারদর্শী পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে গ্রেপ্তার এড়াতেও। এ জন্য সে বার বার নিজের বেশভূষা পরিবর্তন করে। ৪৫ বছর বয়সী মিল্টন কখনও স্মার্ট তরুণের বেশ নেয়, কখনও ধর্মীয় পোশাকে নেয় নিজেকে রক্ষার কৌশল; যদিও সে ভিন্ন ধর্মাবলম্বী। গত চার মাসে তাদের নেতৃত্বে নগরীতে অন্তত ১০০ মোটরসাইকেল চুরির তথ্য পেয়েছে পুলিশ। মিল্টন ও তার প্রধান সহযোগী পাঁচ মাস আগে জেল থেকে জামিনে বের হয়ে আবার চুরির পেশায় জড়িয়ে পড়েছে।

ওসি ওয়ালী উদ্দিন বলেন, গত ২৬ এপ্রিল আকবর শাহ থানা এলাকা থেকে চুরি হওয়া একটি মোটরসাইকেলের খোঁজ করতে গিয়ে বিভিন্ন সূত্রে এই চোর চক্রের সন্ধান পাই। এরপর আকবর শাহ থানার সিডিএ এলাকা থেকে মিল্টনকে গ্রেপ্তার করি। তার দেওয়া তথ্যে কুমিল্লা থেকে বাকি পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ছয়জনের মধ্যে মিল্টন দল নেতা ও মেহেদী তার প্রধান সহযোগী। তাদের অধীনে বাকিরা কাজ করে। তিনি জানান, কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে মেহেদী হাসানের নিজস্ব গ্যারেজ আছে। মোটরসাইকেল চুরি করে সেই গ্যারেজে নেওয়া হয়। নিজ গ্যারেজে রেখে গাড়ি রঙ, তেলের ট্যাঙ্ক পরিবর্তন এবং ইঞ্জিন ও চেসিস নম্বর ঘষামাজা করে মামুনকে দেয় বিক্রির জন্য।

অভিযানে অংশ নেওয়া আকবর শাহ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) অর্ণব বড়ুয়া জানান, মিল্টনের বিরুদ্ধে নগরীর বিভিন্ন থানায় ২২টি মামলা আছে। মেহেদী হাসানের বিরুদ্ধে ১৩টি ও মামুনের বিরুদ্ধে ৬টি মামলা আছে। এর অধিকাংশই মোটরসাইকেল চুরির। এসআই অর্ণব বড়ুয়া বলেন, মিল্টন ও মেহেদী একাধিক মামলায় একই সঙ্গে আসামি। গত বছর মোটর সাইকেল চুরির এক মামলায় সিএমপির কোতোয়ালী থানা পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করেছিল। গত জানুয়ারিতে দু’জনই জামিনে ছাড়া পায়। এরপর আবার সক্রিয় হয়ে ওঠে। জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, গত চার মাসে তারা চট্টগ্রাম শহরে অন্তত ১০০ মোটরসাইকেল চুরি করেছে। চট্টগ্রাম শহর ছাড়া তারা অন্য কোথাও সেভাবে মোটরসাইকেল চুরি করে না। গ্রামগঞ্জে মোটরসাইকেল চুরিতে বেশি সময় লাগে বিধায় তাদের এই কৌশল।

মিল্টনের বিষয়ে এসআই অর্ণব বলেন, মিল্টন একজন দুর্ধর্ষ চোর। সে খুব কৌশলী। গ্রেপ্তার হলে সে নিজের আসল নাম আড়াল করে। মামলার বিভিন্ন নথিপত্রে আমরা তার মিল্টন কুমার সাহা, মো. সোহেল- এ ধরনের আরও কয়েকটি নাম পেয়েছি। মোটরসাইকেল চুরি সংক্রান্ত কয়েকটি ঘটনায় সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে দেখেছি, সে বারবার নিজের বেশভূষা পরিবর্তন করে। কখনও মাথায় টুপি দিয়ে পাঞ্জাবি পরে মুসল্লির বেশ নেয়। কখনও তরুণ বয়সী সাজে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকৌতুক কণিকা
পরবর্তী নিবন্ধবদির অবৈধ সম্পদের মামলা চলবে