এক পরিচালক দিয়েই চলছে বিডা!

বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয় জনবল সংকটে বিঘ্নিত ১১ জেলার তদারকি

জাহেদুল কবির | বৃহস্পতিবার , ২০ জুলাই, ২০২৩ at ৫:৫৮ পূর্বাহ্ণ

একজন পরিচালক দিয়েই চলছে বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) চট্টগ্রামের বিভাগীয় কার্যালয়। দীর্ঘ সময় ধরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনে পরিচালিত সেবা সংস্থাটির জনবল সংকট চললেও সংশ্লিষ্টদের তেমন কোনো মাথাব্যথাই নেই। অথচ চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়কে ১১ জেলার বিনিয়োগ নিবন্ধনসহ নানা ধরনের সেবার কার্যক্রম তদারকি করতে হয়। জনবল সংকটের কারণে নিয়মিত কোনো প্রতিষ্ঠান কিংবা প্রকল্প এলাকায় পরিদর্শনে যেতে পারছেন না বিডার কোনো প্রতিনিধি।

বিডা সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ে নয়টি পদে ২৮ জনের বিপরীতে আছে বর্তমানে কর্মরত আছে মাত্র তিনজন। তারমধ্যে একজন পরিচালক, একজন ইনভেস্টম্যান সহকারী ও একজন গাড়ি চালক। দীর্ঘদিন ধরে উপপরিচালকের পদ শুন্য রয়েছে। এছাড়া বর্তমানে দুইজন সহকারী পরিচালকের পদে একজনও নেই। ছয়জন ইনভেস্টম্যান অফিসার থাকার কথা থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে এই পদে কেউ নেই। সিনিয়র ইনভেস্টম্যান সহকারী পদও আছে খালি। ইনভেস্ট সহকারী পদে নয়জনের বিপরীতে আছে মাত্র একজন। এছাড়া অফিস সহায়ক ছয়জনের বিপরীতে একজনও নেই। এছাড়া একজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী থাকার কথা থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে এই পদটিও শূন্য রয়েছে।

সেবাগ্রহীতারা জানান, সংস্থাটির এই দূরাবস্থা কোনোভাবেই কাম্য নয়। অথচ সরকার ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চল নিয়ে কাজ করছে। জনগণের দোরগোড়ায় বিনিয়োগ সেবা পৌঁছে দেওয়ার কথা সরকারের পক্ষ থেকে বারবার বলা হলেও নানা সীমাবদ্ধতার জন্য সেগুলো সম্ভব হচ্ছে না। সুষ্ঠু বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করতে চাইলে বিডা’কে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে গড়ে তুলতে হবে।

জানা গেছে, দেশে বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে কাজ করে বিডা। বিনিয়োগ নিবন্ধন করার পাশাপাশি সংস্থাটি বিদেশি নাগরিকদের দেশে কাজ করার অনুমতিপত্র দিয়ে থাকে। এছাড়া বিনিয়োগকারীদের ভিসা পেতে সহায়তা করে থাকে। এর বাইরে যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল আমদানিতেও সংস্থাটি বিনিয়োগকারীদের সহায়তা দিয়ে থাকে। এছাড়া সেবাগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠান কিংবা প্রকল্পের কাজও পরিদর্শন করেন বিডার কর্মকর্তারা।

জনবল সংকটের বিষয়ে জানতে চাইলে বিডা চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক মোহাম্মদ মোয়াজ্জেম হোসাইন দৈনিক আজাদীকে বলেন, জনবল সংকটের বিষয়টি আমাদের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। এখন কোথাও পরিদর্শনে যেতে হলে আমাকে অফিস বন্ধ করে যেতে হচ্ছে। পর্যাপ্ত জনবল থাকলে আমাদের কাজের গতিও বৃদ্ধি পাবে। তবে আমি এখন মাঝে মাঝে চট্টগ্রামের উপজেলাগুলোর বিনিয়োগের বিভিন্ন বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) সাহায্য নিয়ে থাকি।

প্রসঙ্গত, দেশি বিদেশি বিনিয়োগকে উৎসাহিত করতে ১৯৮৯ সালে গঠন করা হয় বিনিয়োগ বোর্ড। এছাড়া ১৯৯৩ সালে সরকারি লোকসানি প্রতিষ্ঠানকে বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়ার উদ্দেশ্য নিয়ে প্রথমে বেসরকারীকরণ বোর্ড এবং পরে ২০০০ সালে ওই বোর্ডকেই বেসরকারীকরণ কমিশনে রূপান্তর করে সরকার। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীন সংস্থা দুটি পরিচালিত হয়ে আসছিল দুজন চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে, যাদের প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা দেওয়া হয়। কিন্তু উভয় সংস্থাই তাদের গঠনের উদ্দেশ্য পূরণে তেমন ভূমিকা রাখতে পারছিল না। এই নিয়ে সমালোচনার জেরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় গত ২০১৪ সালের এপ্রিলে বিনিয়োগ বোর্ড ও বেসরকারীকরণ কমিশনকে একীভূত করার নির্দেশ দেয়। পরবর্তীতে গত ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে বিনিয়োগ বোর্ড ও বেসরকারীকরণ কমিশনকে একীভূত করে সরকার বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) গঠন করে। মূলত বেসরকারি খাতকে বেগবান করতে এবং দেশিবিদেশি বিনিয়োগকে আকৃষ্ট করতেই সংস্থাটি গঠন করা হয়েছিল।

পূর্ববর্তী নিবন্ধভোট চুরি ভুলে যান, জনগণ আর ভোট চুরি করতে দেবে না
পরবর্তী নিবন্ধনগরীতে সমাবেশের অনুমতি পায়নি জামায়াত