এক টানেল দুই দেশ

রাজন বড়ুয়া | বুধবার , ২৪ নভেম্বর, ২০২১ at ১০:৩৭ পূর্বাহ্ণ

বিংশ শতাব্দীর আশ্চর্যজনক এবং আধুনিক বিশ্বের বিস্ময় চ্যানেল টানেল। যুক্তরাজ্য এবং ফ্রান্সকে সংযুক্ত করা এই টানেল ইংলিশ চ্যানেলের উপসাগরের তলদেশে নির্মিত হয়েছে। এই টানেলের দু-প্রান্তে দুটি দেশ। দুইপ্রান্তেই রয়েছে দুটি রেলস্টেশন। এই টানেলের নির্মাণকাজ শুরু হয় ১৯৮৭ সালের ১ ডিসেম্বর আর শেষ হয় ১৯৯৪ সালের ৬ মে। খুব সম্ভবত ১৮০২ সালে অ্যালবার্ট ম্যাথিউ এই চ্যানেল টানেল নির্মাণের প্রথম প্রস্তাব রেখেছিলেন। দীর্ঘ প্রায় ৭৩ বছর পর ১৮৭৫ সালে চ্যানেল টানেল সংস্থা প্রাথমিক পরীক্ষা শুরু করে। মজার ব্যাপার হচ্ছে যে, পরীক্ষা শুরুর শতবর্ষ পার হলেও এটির নির্মাণ কাজ শুরুই হয়নি। অতপর ১৯৮৭ সালে এই টানেলের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। নির্মাণ শুরুর আগে সম্পন্ন হওয়া এক পরীক্ষায় জানা যায়, মাটির চক মার্ল স্তর ভেদ করে সুড়ঙ্গ নির্মাণ সম্ভব। মাটির এ স্তর সুড়ঙ্গ নির্মাণের উপযোগী এবং এটা বেশ অভেদ্য। যাতে করে গর্ত করার জন্য এটি বেশ সহায়ক হয়েছে। চ্যানেল টানেল তিনটি প্যাসেজের সমন্বয়ে গঠিত, যার দুটো দিয়ে ট্রেন চলাচল করে। অন্যটি মেরামত ও অন্যান্য কার্যক্রমের জন্য ব্যবহৃত হয়। তিনটি টানেলের মধ্যে দুটোর ব্যাস ৭.৬ মিটার, যেগুলো ৩০ মিটার ব্যবধানে অবস্থিত। আরেকটি ৫০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এবং ব্যাস ৪.৮ মিটার। ভূ-গর্ভের অবস্থা পরীক্ষণের উদ্দেশ্যে সার্ভিস টানেলটি মূল টানেল নির্মাণের আগেই নির্মিত হয়েছিল। ইংল্যান্ডের ক্যাসেল হিলে এবং ফ্রান্সের বয়সিংগে এলাকায় টানেলটি সমুদ্র হতে প্রবেশ করেছে। এই দুই প্রবেশ অঞ্চলের মাঝে টানেলের দৈর্ঘ্য ৫০.৪৫ কিলোমিটার, যার মধ্যে ৩.৩ কিলোমিটার ফ্রান্সে ভূ-পৃষ্ঠের নিচে, ৯.৩ কিলোমিটার ইংল্যান্ডের ভূ-পৃষ্ঠের নিচে এবং ৩৭.৯ কিলোমিটার সমুদ্রের নিচে অবস্থিত। জাপানের সেইকান টানেলের পরে এটা বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম রেল টানেল। সমুদ্রতলে এ ধরণের রেলপথযুক্ত টানেল এটিই বিশ্বের সর্ববৃহৎ। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে টানেলটির গড় গভীরতা ৪৫ মিটার।চ্যানেল টানেল যুক্তরাজ্যের ফোকস্টোনকে ফ্রান্সের কোকুয়েলসের সাথে যুক্ত করেছে। চ্যানেল টানেল নির্মাণে প্রায় ১৩ হাজারের বেশি শ্রমিক কাজ করেছে। এই টানেল দিয়ে ইউরোস্টার নামীয় রেল পরিষেবা চালু রয়েছে। এছাড়া ইউরোটানেল শাটল দিয়ে মোটরগাড়ি ও অন্যান্য যানবাহন চলাচল করে। চ্যানেল টানেলের এক প্রান্তের রেল স্টেশন থেকে অন্য প্রান্তের রেলস্টেশনে যেতে রেলের পঁয়ত্রিশ মিনিটের মতো সময় লাগে। প্রাথমিকভাবে ৪.৬৫০ বিলিয়ন পাউন্ড ব্যয় ধরা হলেও এই অর্থে প্রকল্পের ৮০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়। পরবর্তীতে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিলে প্রকল্পব্যয় অনেক বৃদ্ধি পায়। এরপরও নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে নির্মিত এই টানেল যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে চ্যানেল টানেলের যুগান্তকারী ভূমিকা রাখছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপথশিশুদের শীত
পরবর্তী নিবন্ধপ্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি ও নেদারল্যান্ড দূতাবাসের কর্মকর্তাদের মতবিনিময়