এক ঘরেই ছয় দৃষ্টি প্রতিবন্ধী

পায় না প্রতিবন্ধী ভাতা

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি | রবিবার , ২৯ নভেম্বর, ২০২০ at ১০:৩৭ পূর্বাহ্ণ

খাগড়াছড়ির দীঘিনালার মেরুং। এই অঞ্চলটি জেলার অন্যতম কৃষিনির্ভর অঞ্চল। মেরুং বাজার থেকে উঁচু-নিচু পাহাড়ি পথ পেরোলে ভুইয়াছড়া এলাকা। গ্রামটিতে তেমন উন্নয়ন হয়নি। বিদ্যুৎ বা সুপেয় পানির ব্যবস্থা নেই। নেই কোনো কাঁচা সড়ক। মেঠো পথে দীঘিনালা-লংগদু সড়ক থেকে ৫ মিনিট হাঁটলে ভূইয়াছড়া গ্রাম। এই গ্রামে আব্দুল কাদেরের পরিবারের ৬ সদস্য দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। জন্ম থেকে চোখের সমস্যা নিয়ে বড় হয়েছেন তারা। এদের মধ্যে সবাই হারিয়েছে দৃষ্টি শক্তি। দিনের বেলায় মাঝারি বা ঝাপসা দেখলেও রাতে একেবারেই দেখতে পান না। জন্মের পর থেকে বিভিন্ন বয়সে তারা তাদের দৃষ্টি শক্তি হারিয়েছেন।
দৃষ্টি প্রতিবন্ধী সাহারা খাতুন (৬০) জানান, আমিসহ ৬ জন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। আমার মেয়ে ও ছেলে মাঝারি দেখতে পায়। রাতের বেলা দেখতে পায় না। মেয়ের ঘরে দুই নাতিও দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। কোনো ভারী বা সূক্ষ্ম কাজ করতে পারি না। রাতের বেলায় কোনো কাজ করতে পারি না। দিনের বেলায় ঘরের কাজ টুকটাক করতে পারি। সাহারা খাতুনের মেয়ে খালেদার বয়স ২৭ বছর। এর মধ্যে চট্টগ্রামে অপারেশন করিয়ে চোখের দৃষ্টি কিছুটা ফিরে পেয়েছেন। খালেদার স্বামী গাড়ি চালক। হতদরিদ্র এই পরিবার ছোট্ট বেড়ার ঘরে থাকে। অভাব এবং দরিদ্রের সাথে সংগ্রাম করে দিন পার করা এই পরিবারের পক্ষে দুই সন্তানের চোখের অপারেশন করা সম্ভব হয়নি। তার দুই সন্তান শারমিন (৯) ও খোরশেদও (৭) দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। দৃষ্টি প্রতিবন্ধী খালেদা জানান, স্থানীয় ইউপি সদস্য (রতন মেম্বার) প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড করে দেওয়ার কথা বলেছেন। কিন্ত সেই কার্ড এখনো পাইনি। অথচ আমাদের পরিবারে ৬ জন প্রতিবন্ধী। কারো কার্ড নেই। ঘর করার অর্থও নেই। তাই ছোট্ট বেড়ার ঘরে থাকি। ঝড়-বৃষ্টির দিনে এই ঘরে থাকাও যায় না। গ্রামের লোকজনের কাছে শুনি, প্রতিবন্ধীদের জন্য কার্ডের ব্যবস্থা রয়েছে। অথচ আমরা কেউ পেলাম না। একটা প্রতিবন্ধী কার্ডের দাবি জানান তিনি।
সাহারা খাতুনের ছেলে মনির হোসেন বলেন, ঝাপসা দেখতে পাই। আমার দৃষ্টি প্রতিবন্ধী স্মার্টকার্ড আছে। অথচ কোনো ভাতা পাই না। চোখে না দেখলে কীভাবে কাজ করব? সরকারি কোনো সহায়তাও পাই না।
সাহারা খাতুনের ভাইয়ের মেয়ে ছাবিনা ইয়ামিন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। সাহারা জানান, মনির, খালেদা ও ছাবিনা ইয়াছমিনের চোখের অপারেশন করা হয়েছে। তারা দিনের বেলায় আংশিক দেখতে পায়। কিন্তু তাদের স্বাভাবিক দৃষ্টি ফিরেনি।
মেরুং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রহমান কবির রতন জানান, ইউনিয়ন পরিষদের কাছে প্রতিবন্ধী স্মার্টকার্ড, জাতীয় পরিচয়পত্র এবং জন্মনিবন্ধন জমা দিতে হবে। আমরা রেজুলেশন করে জমা দিয়ে পরবর্তী সমাজসেবা অফিসের মাধ্যমে ভাতার ব্যবস্থা করব।
জেলা প্রতিবন্ধী বিষয়ক কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, বিষয়টি আমার জানা ছিল না। চক্ষু বিষয়ক চিকিৎসক সরেজমিনে পরিদর্শন করে জেলা প্রতিবন্ধী অফিস থেকে তাদেরকে সাদাছড়ি বিতরণসহ সব ধরনের সহায়তা করব।
খাগড়াছড়ি জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. মনিরুল ইসলাম জানান, তাদের ভাতা না পাওয়ার বিষয়টি আমাদের জানা ছিল না। তাদেরকে আমরা প্রতিবন্ধী স্মার্টকার্ডের আওতায় নিয়ে আসব। তারা যাতে দ্রুত ভাতা পায় সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাদের ভাতা প্রদানের পাশাপাশি এককালীন সহায়তা করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএবার নরোভাইরাস
পরবর্তী নিবন্ধরাউজানে ইটভাটাকে ২ লাখ টাকা জরিমানা