১৮ বছর আগে ২০০২ সালে চট্টগ্রামে হারিয়ে যায় আসমা নামে একটি শিশু। সেই আসমা আজ তরুণী। অনেক চড়াই–উৎরাই পেরিয়ে সেদিনের ছোট্ট আসমা খুঁজে পেয়েছেন তার স্বজনদের। না, আসমা কোনো সিনেমার চরিত্র নন, সত্যি সত্যিই হারিয়ে যাওয়ার ১৮ বছর পর তিনি তার স্বজনদের খুঁজে পেয়েছেন। খবর বাংলানিউজের।
২০০২ সালে আসমা চট্টগ্রামে হারিয়ে যাওয়ার পর এক পরিবার বাসার কাজ করানোর জন্য পথ থেকে তাকে নিয়ে যায়। একদিন ওই বাড়ির লোকজন মারধর করলে শিশুটি আবার পথে বেরিয়ে পড়ে। রাস্তায় কান্নারত আসমাকে তুলে নিয়ে কয়েকদিন নিজের হেফাজতে রাখেন নোয়াখালীর ফেরদৌসী নামে এক নারী। কিন্তু কেউ খোঁজ খবর করছে না দেখে তিনি আসমাকে নিয়ে আসেন নিজের এলাকা নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার একলাসপুর গ্রামে।
তারপর নিয়তি তাকে বিভিন্ন যায়গায় টেনে নিয়েছে। পাঁচ বছর ছিলেন নোয়াখালীর টেলিফোন বিভাগের কর্মকর্তা ফরহাদ কিসলুর বাসায়। এরপর আরো দুই বাসায় আরো ছয় বছর থেকে পুনরায় ফরহাদ কিসলুর বাসায় ফিরে আসেন। এরপর আসমাকে নিজের বাবার বাড়ি একলাসপুরে পাঠিয়ে দেন ফরহাদ কিসলুর স্ত্রী ফাতেমা জোহরা সীমা।
তখন ফাতেমার বাবার বাড়িতে গৃহ নির্মাণের কাজ চলছিল। সেখানেই আসমার সঙ্গে এক নির্মাণ শ্রমিকের মন দেওয়া–নেওয়া হয়। একপর্যায়ে তারা পালিয়ে যান চট্টগ্রামে। সেখানে তিন বছরের দাম্পত্য জীবনে একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেন আসমা। সুখে দুঃখে ভালোই কাটছিল জীবন। এরপর স্বামী প্রবাসে চলে গেলে আবার নোয়াখালীতে ফিরে আসেন আসমা। আবার আশ্রয় নেন ফরহাদ কিসলুর বাসায়। এবার আসমার শিকড়ের সন্ধান শুরু করেন ফরহাদ কিসলুর স্ত্রী ফাতেমা। আসমা শুধু বলতে পারেন যে তার বাড়ি ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া জেলার নড়াই গ্রামে। এটুকু তথ্য নিয়েই স্থানীয় সাংবাদিক মেজবাহ উল হক মিঠুর সহযোগিতা চান ফাতেমা।
সাংবাদিক মিঠু ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়ার নবীনগরের এক সাংবাদিকের মাধ্যমে তৃতীয়বারের প্রচেষ্টায় খুঁজে পান আসমার পরিবারকে। গতকাল শুক্রবার ইমোতে ভিডিও কলে কথা হয় আসমার মা, ভাইয়ের সঙ্গে।
এ দৃশ্য কাছ থেকে দেখা মানবিক সংগঠক সুমন নুর জানান, সে এক আবেগঘন দৃশ্য! দীর্ঘ ১৮ বছর পর হারিয়ে যাওয়া আসমাকে দেখে আসমার মা ও ভাই আবেগ ধরে রাখতে পারেননি। এদিকে আসমারও যেন মুখে কথা ফুটছিল না। শিগগিরই আসমাকে নিতে আসবেন তার ভাই।