আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি…না, আমরা ভুলতে পারি না। ফেব্রুয়ারি বাঙালির গর্বের মাস, ভাষার মাস। সেদিন রাজপথে রক্ত ঝরেছে আমার ভাইয়ের। মায়ের ভাষার জন্য লড়াই করেছেন তারা। প্রাণ দিয়েছেন অকাতরে। ভাষার দাবিতে প্রাণ দিতে হয়েছে সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, শফিউরসহ নাম না জানা অনেক তরুণ তাজা প্রাণকে। ভাষার জন্য প্রাণ উৎসর্গের এমন নজির বাঙালি ছাড়া অন্য কোনো জাতিতে নেই। বুকের রক্ত দিয়ে তারা লিখেছেন বাঙালির পালটে যাওয়ার নতুন ইতিহাস। সেদিনের বাংলাভাষার দাবি থেকেই আজকের বাংলাদেশ। অহংকার নিয়ে নিজের ভাষায় কথা বলা। স্বাধীন দেশে পথচলা। একুশ মানে এগিয়ে চলা। একুশ মানে মাথা নত না করা। একুশ আমাদের চেতনার শেকড়। একুশ আমাদের গর্ব। একুশ আমাদের অহংকার। তাই প্রতি বছর আমরা একুশ পালন করি শোকের শক্তিকে শাণিত করতে। আমাদের মনে রাখতে হবে–শুধু আবেগে দিনটি পালন নয়। দিনটিতে নয় কোনো আনন্দ উৎসব। এটি মহান শহীদ দিবস। এটা যেমন শোকের দিন, তেমনি শক্তি আর সাহসের অপরাজেয় বরাভয়। খালি পায়ে প্রভাতফেরির দিবস। শহীদ মিনারে ফুলের শ্রদ্ধা নিবেদনের দিন। বাঙালি চেতনায় অনড় শপথের দিন।এ দেশ ছিল আগে পাকিস্তানের শাসনে। পশ্চিমা শাসকরা তাদের উর্দু ভাষায় কথা বলাতে চেয়েছিল আমাদের। বাঙালির প্রাণের ভাষা বাংলার টুঁটি চেপে ধরতে চেয়েছিল তারা।
প্রতিবাদে বাঙালির ভাষা–বিক্ষোভ শুরু হয় ১৯৪৭ সালের নভেম্বর–ডিসেম্বরে। তারপর চরম প্রকাশ। বাঙালির মাতৃভাষাকে ভালোবাসার চেতনা আজ ছড়িয়ে পড়েছে সারা বিশ্বে। একুশ এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। এ অর্জন বাঙালির।