একশ সিসিটিভির এক মাসের ফুটেজ দেখে শনাক্ত

দুর্ধর্ষ ছিনতাইকারী ডিপজল স্ত্রীসহ গ্রেপ্তার

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ৫ জানুয়ারি, ২০২২ at ৬:৪৭ পূর্বাহ্ণ

নগরীর দুর্ধর্ষ ছিনতাইকারী সাত্তার শাহ ওরফে ডিপজল। পতেঙ্গা-ইপিজেডসহ আশপাশের এলাকায় মোবাইলভিত্তিক অর্থ স্থানান্তরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিনিধিদের টার্গেট করে ছিনতাই করে সে ও তার গ্রুপের সদস্যরা। এক মাস আগে বিকাশের প্রতিনিধি আসলামের কাছ থেকে টাকা ভর্তি ব্যাগ কেড়ে নেওয়ার সময় এলোপাতাড়ি কুপিয়ে তার দুই হাতের কব্জি প্রায় বিচ্ছিন্ন করে দেয়।
পতেঙ্গা থানা পুলিশ গত সোমবার রাতে ছিনতাইকারী ডিপজল, তার স্ত্রী এবং দুই সহযোগীসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করে। ছিনতাইয়ের ঘটনায় রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠান পাঠাওয়ের দুই মোটরসাইকেল চালক জড়িত বলে জানিয়েছে পুলিশ। ডিপজলকে নগরীর ইপিজেড থানার খালপাড় এলাকার কাজির গলি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। বাসা থেকে পুলিশ ডিপজলের সঙ্গে তার স্ত্রী রোজিনা বেগমকে এবং সহযোগী রাজু দেবনাথকেও গ্রেপ্তার করে। ছিনতাইকাজে ব্যবহৃত মোটরসাইকেলসহ (চট্টমেট্রো-ল-৯১০৭) মারুফকে গ্রেপ্তার করা হয় শাহ আমানত এলাকা থেকে।
ডিপজলের কাছ থেকে একটি এলজি, এক রাউন্ড কার্তুজ এবং পাঁচটি এক হাজার টাকার জাল নোট উদ্ধার করা হয়। রোজিনার কাছ থেকে ৫০০ পিস ইয়াবা জব্দ করা হয়। ডিপজল রাউজান উপজেলার কদলপুরের ফরিদ শাহ’র ছেলে। রাজু দেবনাথ (৩৬) পটিয়া থানার জিরি ৭ নং ইউনিয়নের রতন দেবনাথের ছেলে। আব্দুল্লাহ্‌ আল মারুফ (২২) নগরীর কোতোয়ালী থানার এসি দত্ত লেনের আব্দুল হাইয়ের ছেলে। তাছাড়া ছিনতাই কাজে অংশ নেওয়া অপর সহযোগী রুবেলকে পটিয়া থেকে আটক করতে গেলে সে কৌশলে পালিয়ে যায়।
পতেঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ কবির হোসেন আজাদীকে জানান, ৫ ডিসেম্বর দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে পতেঙ্গার মাইজপাড়া এলাকায় টাকা নিয়ে যাওয়ার সময় আসলাম নামে এক বিকাশ প্রতিনিধির পথরোধ করে ডিপজল ও তার সহযোগীরা। দুই সহযোগী টাকা ভর্তি ব্যাগ টানাটানি করলে আসলাম তা দিতে অস্বীকৃতি জানায়। এ সময় ডিপজল একটি ধারালো ছোরা দিয়ে বিকাশ কর্মকর্তার দুই হাতের রগ কেটে টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় বিকাশের পক্ষ থেকে তিনজনকে অজ্ঞাত আসামি করে পতেঙ্গা থানায় একটি ছিনতাই মামলা দায়ের করা হয়। মামলা তদন্তে ছিনতাইয়ের ঘটনাস্থলের আশপাশে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার এলাকার ২০টি পয়েন্টে থাকা কমপক্ষে ১০০ সিসি ক্যামেরার এক মাসের ফুটেজ পর্যালোচনা করে ডিপজলকে শনাক্ত করা হয়। তাদের মাধ্যমে দুই পাঠাও চালক মারুফ ও রাজুর তথ্য পাওয়া যায়। পুলিশ জানতে পারে মারুফ ও রাজু পাঠাও চালানোর পাশাপাশি নগদ টাকা বহনের তথ্য দেয় ডিপজল গ্রুপকে। ওই গ্রুপ নগদ টাকা বহনকারী বিশেষত মোবাইল ব্যাংকিংয়ের এজেন্টদের টার্গেট করে ছিনতাই করে।
জিজ্ঞাসাবাদে ডিপজল পুলিশকে জানায়, ঘটনার শিকার আসলাম প্রতিদিন তিন লাখের বেশি নগদ টাকা উত্তোলন ও বহন করে বলে তথ্য পায় রুবেল। পরে সে বিষয়টি মারুফকে জানায়। মারুফ ডিপজলের সহযোগী রাজুকে এ তথ্য দেয়। ঘটনার দিন পরিকল্পনা অনুযায়ী মারুফের মোটরসাইকেলে করে ডিপজল ও রাজু পতেঙ্গা কন্ট্রোল মোড় এলাকায় অবস্থান নেয়। রুবেল আরেকটি মোটরসাইকেলে এসে আসলামকে দেখিয়ে দিয়ে দূরে অবস্থান নেয়। ছিনতাইয়ে অংশ নেয় ডিপজল, রাজু ও মারুফ।
ওসি পতেঙ্গা আরও জানান, ছিনতাইকারী ধরতে গিয়ে ডিপজলের বাসায় পাওয়া যায় ইয়াবা, অস্ত্র ও জাল টাকা। অস্ত্র, মাদক ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে করা তিন মামলার মধ্যে অস্ত্র ও বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলায় ডিপজলকে এবং মাদক মামলায় ডিপজল ও তার স্ত্রী রোজিনাকে আসামি করা হয়েছে। এছাড়া ডিপজলের বিরুদ্ধে আরও অন্তত ১৯টি মামলা রয়েছে। এই গ্রুপের অন্তত ১৫ ছিনতাইকারী সক্রিয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধইতিহাস গড়া জয়ের স্বপ্ন টাইগারদের
পরবর্তী নিবন্ধশ্বশুরবাড়ি বেড়াতে এসে দুর্বৃত্তের গুলিতে জামাই খুন