রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের ট্রাফিক বিভাগের অনভিজ্ঞ কর্মকর্তা এবং দায়িত্ব অবহেলার কারণে একের পর এক ট্রেন দুর্ঘটনার মুখে পতিত হতে যাচ্ছে। গতকাল বুধবার একদিনে স্টেশন মাস্টার ও পয়েন্টম্যানের ভুল লাইন ক্লিয়ারেন্সের কারণে কক্সবাজার ঈদ স্পেশাল ডুলহাজরা স্টেশনে লাইনচ্যুত হয়। একই দিন সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়গামী শাটল ট্রেনকে ষোলশহর স্টেশনে এবং দোহাজারী পিডিবির তেলবাহী ট্রেনটিকে ভুল লাইন ক্লিয়ার দেয়া হয়। কিন্তু ট্রেন চালকের (লোকোমাস্টার) সতর্কতায় তিনটি ট্রেন বড় ধরনের দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে। তিনটি ট্রেনের লোকোমাস্টার ইমারজেন্সি ব্রেক করে ট্রেন দাঁড় করানোর ফলে কক্সবাজার ঈদ স্পেশাল ট্রেনের যাত্রীরা যেমন রক্ষা পেয়েছে–তেমনি দোহাজারী বিদ্যুৎ কেন্দ্রের তেলবাহী ট্রেন এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়গামী শাটল ট্রেনটিও রক্ষা পেয়েছে বলে জানান বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও লোকোমাস্টার মো. মজিবুর রহমান।
তিনি বলেন, কন্ট্রোল অফিস এবং স্টেশন মাস্টারের ভুল ক্লিয়ারেন্সের কারণে গত ৬ এপ্রিলও একই ঘটনা ঘটেছিল। চট্টগ্রাম–কক্সবাজার রেলপথে লোহাগাড়া থেকে হারবাং অংশে এই লাইনে দুটি ট্রেন (কক্সবাজার থেকে ঢাকাগামী কক্সবাজার এক্সপ্রেস এবং ঢাকা থেকে কক্সবাজারগামী পর্যটক এক্সপ্রেস) মুখোমুখি হয়ে পড়েছিল। ট্রেন দুটির চালক পরস্পরের সাথে যোগাযোগের মাধ্যমে একই লাইনে চলে আসা ট্রেন দুটি ভয়াবহ দুর্ঘটনার হাত থাকে রক্ষা করেছিল।
রেলওয়ের লোকোমাস্টারদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে ছেড়ে যাওয়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়গামী ১৪৩ আপ শাটল ট্রেনকে ষোলশহর থেকে চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট যাওয়ার লাইন ক্লিয়ার দেয়া হয়। লোকোমাস্টার ট্রেন নিয়ে সামনের দিকে অগ্রসর হয়ে দেখেন যে, পয়েন্ট তার অনুকূলে সেট না করে জানআলীহাট স্টেশনের দিকে করা হয়েছে। তখন লোকোমাস্টার ইমারজেন্সি ব্রেক করে ট্রেন দাঁড় করান।
এদিকে চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে যাওয়া দোহাজারী বিদ্যুৎ কেন্দ্রের তেলবাহী ট্রেনটিকে পয়েন্টসম্যান ভুলে যে লাইন দিয়ে কক্সবাজার থেকে পর্যটক এক্সপ্রেস চট্টগ্রাম আসবে–সেই লাইনে ক্লিয়ারেন্স দিয়েছে পটিয়া থেকে দোহাজারী পর্যন্ত। বিষয়টি পিডিবির তেলবাহী ট্রেনের চালক বুঝতে পেরে ট্রেনটি দাঁড় করিয়ে আবার পেছনে ফিরে এসে পর্যটক এক্সপ্রেসকে লাইন ক্লিয়ার করে দেয়।
এদিকে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার ঈদ স্পেশাল ট্রেনটি গতকাল সকাল ৭টায় ছেড়ে ৯টা ৪৩ মিনিটে ডুলহাজরা স্টেশনে পৌঁছে। তখন স্টেশন মাস্টার ও পয়েন্টসম্যানের ভুলে কক্সবাজার ঈদ স্পেশাল ডুলহাজরা স্টেশনে পয়েন্ট সেট না করেই লাইন ক্লিয়ার দেয়ায় ট্রেনটির ইঞ্জিন এবং দুটি বগি লাইনচ্যুত হয়। লোকোমাস্টার বিষয়টি বুঝতে পেয়ে ট্রেনটি দাঁড় করানোর ফলে বড় ধরনের দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পেয়েেেছ।
এই ব্যাপারে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম আজাদীকে জানান, স্টেশন মাস্টার ও পয়েন্টসম্যানের ভুলের কারণে ডুলহাজরা স্টেশনে কক্সবাজার ঈদ স্পেশাল ট্রেনের ইঞ্জিন এবং দুটি বগি লাইনচ্যুত হয়। দুর্ঘটনার কারণে ট্রেন চলাচল বন্ধ নেই। লুপ লাইন দিয়ে ট্রেন পার করিয়ে আমরা ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রেখেছি। আমরা এই ঘটনায় বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তাকে প্রধান করে ৫ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। স্টেশন মাস্টার ও পয়েন্টসম্যানকে প্রত্যাহার করিনি। তদন্তে যারা দোষী হবেন তাদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নেবো।
এই ব্যাপারে বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও লোকোমাস্টার মো. মজিবুর রহমান আজাদীকে বলেন, ট্রাফিক বিভাগের অসচেতন এবং দায়িত্বহীনতার কারণে আজকে (গতকাল) তিনটি বড় দুর্ঘটনা ঘটতে যাচ্ছিল। আমাদের লোকোমাস্টারদের কারণে বড় দুটি দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে। স্টেশন মাস্টার এবং পয়েন্টসম্যানের ভুলের কারণে এই দুর্ঘটনাগুলো বারবার ঘটতে যাচ্ছে। তারা লাইন চেক না করে ট্রেন যাওয়ার জন্য ক্লিয়ারে দিয়ে দেয়।